• সর্বশেষঃ

    পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ১

    ।। ও৩ম্।।
    পুরাণের কৃষ্ণ
    লেখক: আচার্য ডাঃ শ্রীরাম আর্য
    অনুবাদক: সতীশ চন্দ্র মণ্ডল।
    প্রকাশক : বঙ্গীয় আর্য প্রতিনিধি সভা।
    মহর্ষি দয়ানন্দ ভবন ৪২, শঙ্কর ঘোষ লেন, কোলকাতা-৬ 
    দূরভাষ: ০৩৩-২২৪১-৪৫৮৩




    প্রকাশনার্থঃ বঙ্গীয় আর্য প্রতিনিধি সভা মহর্ষি দয়ানন্দ ভবন ৪২, শঙ্কর ঘোষ লেন, কোলকাতা-৬

    প্রেরণায়: শ্রীআনন্দকুমার আর্য (প্রধান) 
    শ্রীদীনদয়াল গুপ্ত (মহামন্ত্রী)

    বাংলা সংস্করণ - ২০১৬ দ্বিতীয় সংস্করণ – ২০০০ কপি
    মূল্য: ছয় টাকা মাত্র
    অক্ষর বিন্যাসঃ বাবলু দুবে ৯১৬৩০৭০২০৯
    মূদ্রক: তারক পাল 
    সাহিত্য পরিষদ, কোলকাতা




    ভূমিকা ঃউঃ শ্রীরাম আর্যের পুস্তিকা “পুরাণের কৃষ্ণ” হিন্দী ভাষায় প্রকাশিত হয়। পৌরাণিক পণ্ডিত মাধব আচার্য মহাশয়ের “নিষ্কলঙ্ক কৃষ্ণ” পুস্তকের প্রত্যুত্তর। পৌরাণিক পণ্ডিতেরা অষ্টদশ পুরাণের নামে যে পুস্তক গুলি প্রচার করেন, তাহা পরস্পর বিরোধী, ভাগবতকার ব্যাসদেবের পুত্র শুকদেব মহাভারত যুদ্ধের বহু পূর্বেই দেহত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু মহাভাগবত যুদ্ধের অনেক পরে ব্রহ্ম শাপ গ্রস্ত পরীক্ষিৎ কে ভাগবত শুনানোর গল্প নিঃসন্দেহে মিথ্যাচার, আরও বহু মনগড়া কাহিনী পুরাণ গুলির মধ্যে লিখিত আছে। প্রাচীন বৈদিক সংস্কৃতি মহাভারত যুদ্ধের পরে অবলুপ্তির পথে অগ্রসর হয়, সেই সময় বেদ আদি সত্য গ্রন্থকে অবহেলা করিয়া, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই পথ অবলম্বন করেন। আজ বহু হিন্দুই জানেনা তাহাদের ধর্মগ্রন্থ কী ?নবযুগের স্রষ্টাও আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতামহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী, ঋষি পুত্রগণকে স্বীয় মহিমায় মহিমান্বিত করার জন্য, গুরুবর বিরজানন্দের আদেশে সনাতন বৈদিক সংস্কৃতি রক্ষার জন্য আর্য সমাজ স্থাপনা করেন ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে। আজ সারাবিশ্বে বেদবিদ্যালয়, গুরুকুল আশ্রম, বিধবা ও অনাথ আশ্রম স্থাপনার মাধ্যমে আর্য সমাজ বৈদিক প্রচার ও প্রসার করিয়া যাইতেছে। মহর্ষি দয়ানন্দ স্বীয় অমর গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশে একাদশ সমুল্লাসে (অধ্যায়) বিশদ আলোচনা করিয়াছেন, তাহার উত্তরসূরী অসংখ্য বেদ বিদ্যায় পারংগত হইয়া বেদোক্ত ধর্মের সারাবিশ্বে প্রচার করিতেছেন। মহাভারতে যোগীরাজ শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র চরিত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভীষ্ম পাঠের অন্তর্গত শ্রীমৎ ভগবৎ গীতায় চতুবর্ণ, চতুরাশ্রম, একেশ্বরবাদ, ওঁকার উপাসনা ও যজ্ঞাদির বৈজ্ঞানিকতার উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু পৌরাণিক পন্ডিতেরা তাহার পবিত্র চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করিয়া পুরাণাদি গ্রন্থে প্রচার করিতেছেন। শ্রীকৃষ্ণের ন্যায় একজন আত্মপুরুষের চরিত্রে কলঙ্ক লেপন নিঃসন্দেহে অপরাধ আশাকরি পৌরাণিক বন্ধুরা যুক্তি বিচারের মাধ্যমে এই গ্রন্থ পাঠে সত্য গ্রহণ ও অসত্য বর্জন করিলে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশেষ কল্যাণ হইবে বলিয়া আশা করি।

    নিবেদক – 
    “প্রেমভিক্ষু বানপ্রস্থী”


    মহামূর্খ পৌরাণিক পন্ডিতের গালাগাল-সভ্যতার কয়েকটা নমুনাঃ
    “নিষ্কলঙ্ক কৃষ্ণ” পুস্তকে পৃষ্ঠা ২ - কাসগঞ্জী দয়ানন্দী, পৃষ্ঠা ৪ - নির্লজ্জ দয়ানন্দী কে রাঁড় ‘নিপুতী’ না বল্লে শান্ত হওয়ার জন্তু নয়, পৃষ্ঠা ৪ - বেদ শাস্ত্রানভিজ্ঞ মূলচন্দের বোধহতে পারে, পৃষ্ঠা ৪ -অন্ধ চোখে দেখার সুযোগ যদি হতো...তাহলে জন্মজাত অন্ধতা কথমপি দূর হয়ে যেত। পৃষ্ঠা ৭- নিয়োগ দ্বারা উৎপন্ন দুষ্ট হৃদয় দয়ানন্দদের কুৎসিৎ মগজে এটা আসতেই পারে না। পৃষ্ঠা ৮- দয়ানন্দদের নিরাকার গুরুও কন্যা পাঠশালায় তাদের সঙ্গে নিত্য সম্ভোগ করবে। এ নিয়োগিরা ! যদি নিজেদের করা অনর্থ পরিণামের উপর কিঞ্চিৎ লজ্জা হয় তবে বৈতরণীতে ডুবে মর। পৃষ্ঠা ১২ - ওহে, সংস্কৃতানিভিজ্ঞমূঢ়গণ ! যদি কিছু লজ্জা থাকে তাহলে কর্মনাশায় ডুবে মর। পৃষ্ঠা ১৫ - কাসগঞ্জী অন্ধ মহাশয়কে। পৃষ্ঠা ২১ - দয়ানন্দ মনগড়া মিথ্যা কাহিনীসত্যার্থ প্রকাশের দ্বাদশ সমুল্লাসে লিখে সর্বদার জন্য নিজের মহামূখতার অমর রেকর্ড তৈরী করে নিলেন।
    নোট - এই রকম অসভ্যতাপূর্ণ ভাষায় পুস্তক লিখে মূর্খ শিরোমণি মাধবাচার্য আমাদের ও আর্য সমাজের প্রবর্তককে অপশব্দ সহ সম্বোধন করেছেন।
    অতএব, বাধ্য হয়ে আমাদেরকেও প্রত্যুত্তরে এই পুস্তকে কটুভাষার প্রয়োগ প্রতিপক্ষের জন্য করতে হয়েছে। পাঠকগণ ক্ষমা করবেন।

    -লেখক




    আদ্য নিবেদনঃ
    এই বইটি লেখার ইচ্ছা আমাদের ছিল না; কিন্তু যখন মাধবাচার্যের বইটি আমাদের সামনে এল এবং তিনি জনতার মধ্যে এটার প্রচার করলেন তখন আমরা চিন্তা করলাম যে, পৌরাণিক পন্ডিতরা কীভাবে আমাদের সহজ, সরল সত্য বিজ্ঞপ্তির উপর মিথ্যার পরদা ফেলে আমাদেরকে ও ঋষি দয়ানন্দকে গালাগাল করছেন, এবং জনতার মধ্যে ভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন, আমাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুরাণের ভিত্তিতে তাদের মিথ্যা আড়ম্বরের রহস্যোদঘাটন করতে হলো। মহানাত্মা শ্রীকৃষ্ণ সর্বথা নিষ্কলঙ্ক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর একটি স্ত্রী রুক্মিণী ও একটা পুত্র প্রদ্যুম্ন ছিল। আমরা আর্য সমাজীরা তাঁকে নিজের ও ভারতীয় রাষ্ট্রের মহান আদর্শ পূর্বপুরুষ গণ্য করি। তাঁর জন্ম যাদব বংশে হয়েছিল, বাল্যাবস্থায় গাভি চরাবার কাজ তিনি করেছিলেন। আজও গ্রামে ছেলে-মেয়েরা “গোয়ালা ও গোয়ালিনী” একসঙ্গে গরু চরাবার কাজ করে। পুরাণ রচয়িতা রসিক ধূর্তরা কৃষ্ণকে শৃঙ্গার রসের দেবতা ‘নায়ক’ এবং সেই সব গোয়ালিনী কিশোরীদেরকে শৃঙ্গার রসের নায়িকা “গোপী’ তৈরীকরে পুরাণে নোংরা মিথ্যা কাহিনী রচনা করেছেন। গোপীদের সঙ্গে কৃষ্ণের ব্যভিচার রাসলীলা, কুজ্বা সমাগম, রাধা নামক জনৈকা নকল প্রেমিকার সঙ্গে তার নোংরা প্রেম - এই সব মিথ্যা কাহিনীর প্রতি আমাদের বিশ্বাস যে, রাধা নামক কোন মহিলা কৃষ্ণের সময়ে ছিল না। কামুক হৃদয় লোকেরা অনেক কাল পরে একজন সুন্দরী নর্তকী রাধার কল্পনা করলেন এবং কৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর প্রেম কাহিনী রচিত হলো। এইজন্য পরবর্তীতে তৈরী পুরাণে রাধার বর্ণনা পাওয়া যায় অথচ ভাগবতে এ সবের উল্লেখ নেই। "নয় মন তেলও হবে না, রাধাও নাচবে না"- এই বিখ্যাত প্রবাদবাক্য দ্বারা এই কথা হয় যে, সম্ভবত রাধা নামক কোন বিখ্যাত নর্তকী “ড্যান্সার” ছিল, তার নাচে এত ভিড় জমা হতো যে, মশাল দ্বারা এক রাতের মজলিশ আলোকিত করতে নয় মন তেল পুড়ে যেত। যেমন আধুনিককালে কয়েকজন সিনেমা নর্তকী বিখ্যাত হয়েছেন। রাধার নাম কৃষ্ণের সঙ্গে যোগ করার অর্থ তাকে ব্যভিচারী প্রতিপন্ন করা। এটা পৌরাণিকদের ঘোর অজ্ঞানতা। এই পুস্তকখানি পাঠ করে পাঠকরা দেখবেন যে, পুরাণে নিষ্কলঙ্ক কৃষ্ণকে নিয়ে কতখানি লাঞ্ছনা-গঞ্জনা করা হয়েছে। পুরাণের বহিষ্কার না করা পর্যন্ত সেই সব কলঙ্ক কী করেদূরীভূত হতে পারে? সুতরাং আমাদের নিবেদন। এহযে, হিন্দুজাতি পুরাণ পড়া বা শোনা ত্যাগ করে বৈদিক সাহিত্য পাঠ করা শিখুক এবং নিজেদের পূর্বপুরুষদের নিষ্কলঙ্ক চরিত্র ও তার মান-মর্যাদা রক্ষা করতে নিজ গৌরব অনুভব করুক। পৌরাণিক পন্ডিতদের নিকট আমাদের বক্তব্য যে, তাঁরা সময়ের পরিবর্তন লক্ষ্য করুন এবং নিজস্ব চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনুন। এই সব পুরাণদের জন্য আর্য ধর্মের অত্যন্ত নাশ হয়েছে। কিন্তু তাঁদের এই জালিয়াতি বেশী দিন চলার নয়। এই পুস্তকখানি পাঠ করে দেখবেন যে, ভাগবতাদি পুরাণকত ভ্রষ্টগ্রন্থ। সুতরাং কোনভাবেই তার প্রচার যাতে না হয় সেই ব্রত গ্রহণ করুন।

    কাসগঞ্জ তাংঃ ১-১-৫৬
    নিবেদক ডাঃ শ্রীরাম আর্য





    কৃষ্ণের উজ্জ্বল চরিত্র নিয়ে পুরাণে নংরামি ?
    প্রায় কয়েক বৎসর আগের কথা। আমরা “বর্তমান কীর্তন প্রণালী দৃষিত” এবং “মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণের নামের সঙ্গে রাধার নাম যোগ করা অনুচিত” এই দুটি বিষয়ের উপর বিজ্ঞাপন প্রকাশিত করেছিলাম। এত দীর্ঘ সময় পর চিন্তা-ভাবনা করে এবং প্রস্তুত হয়ে দিল্লীর বিখ্যাত গালাগালশাস্ত্রী পৌরাণিক মাধবাচার্য “নিষ্কলঙ্ক কৃষ্ণ” নাম দিয়ে তার উত্তরাভাস প্রকাশিত করেছেন। জবাব দেওয়া তো তাঁর দ্বারা হয়ে ওঠেনি কিন্তু তাঁর লেখায় খিস্তি-খেউড়ির পুরো সদ ব্যবহার করেছেন। সেই সাথে জনতাকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা পান্ডিত্যের ভিত্তিতে বিষয়কে এড়িয়ে যাবার চেষ্টাও করেছেন। মাধবাচার্যের অসঙ্গত ভাষার উত্তর সেই ভাবে দেওয়া আমরা উচিৎ মনে করিনা। কিন্তু “শঠে শাঠ্যম....”-র ভিত্তিতে তাঁর গর্বর্মন অবশ্যই করব; পাঠককুল ক্ষমা করবেন।
    আমরা আর্যসমাজীরা শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ কে মহান বিদ্বান, সদাচারী, কুশল রাজনীতিজ্ঞ এবং সম্পূর্ণ নিষ্কলঙ্ক মানি। এমন মহাপুরুষকখনও ব্যভিচারী, পরস্ত্রীগামী অথবা কুকমী হতেই পারে না কিন্তু সনাতন ধর্মের পুরাণগুলিতে শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র জীবন সম্বন্ধে অনেক কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে। ভাগবত, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ইত্যাদি এইরকম কলঙ্কযুক্ত মিথ্যা কাহিনীতে পরিপূর্ণ যা দেখে প্রত্যেক ভারতবাসীর মধ্যে স্বাভিমান ও সভ্যতার সংস্কার আছে, লজ্জায় মাথা অবনত করে এবং বিধর্মীরা এর সুযোগ নিয়ে হিন্দুধর্মকে বদনাম করে। আমরা লিখেছিলাম যে, এমন অসত্য পুরাণাদিকে ধর্মগ্রন্থ মানা ঠিক নয় এবং এর প্রকাশন বন্ধ করে দেওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের বিচার আমাদের প্রতিপক্ষের মনঃপূত হলো  নাএবং তাঁরা গালাগালি দিয়ে এর উত্তর দিয়েছেন যাকে পৌরাণিক অসভ্যতার অভিন্ন অঙ্গ বলা যায়। যারা মাধবাচার্যের বইটি দেখেছেন, তাঁরা আমাদের বইটি পাঠকরে দেখবেন যে, এই পন্ডিত উত্তর দিতে ধরাশায়ী হয়ে গিয়েছেন।


    কৃষ্ণের উপর ব্যভিচারের দোষঃ
    আমরা লিখেছিলাম যে, গোপাল সহস্রনাম গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে চোর ও ব্যাভিচারের শিরোমণি আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যথা“গোপাল কামিণী জারশ্চোর জার শিখামণি” - শ্লোক ১৩৭। এর উপর প্রতিপক্ষী লিখলেন যে, জার শব্দের অর্থ আমরা ভুল করেছি। বাস্তবে এখানে ‘জার’ শব্দের অর্থ ব্যভিচারই, পাঠক। সনাতনী পন্ডিতের অর্থ যা বোম্বাই ভূষণ প্রেস মথুরা উক্ত গ্রন্থের টাকায় ছেপেছেন - দেখে নিতে পারেন (গোপাল কামিনী জার). গোপীদের সঙ্গে প্রেম করার কারণে (চোর-জার-শিখামণি) চোর। ও ব্যভিচারীদের মধ্যে শিরোমণি হওয়ার কারণে। অর্থাৎ কৃষ্ণ, চোরও ব্যভিচারীদের মধ্যে শিরোমণি ছিলেন। এই অর্থ আমাদের বা কোন আর্যসমাজী দ্বারা করা হয়নি, সনাতনী পন্ডিতদের করা। বাস্তবে এই অর্থই ঠিক। মাধবাচার্য তার সমস্ত মিথ্যা প্রভাব খাটিয়েও এই অর্থকে মিথ্যা করতে পারেন না। অবশ্য গলাবাজি প্রতিপন্ন করতে পারেন। গোপাল কেমন কামিনী জার ছিলেন পুরাণে এ সম্বন্ধে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে -


    পুরাণে গোপীদের সঙ্গে কৃষ্ণের রমণঃ 
    তা বীর্য় মানাঃ প্রতিভিঃ পিতৃভিভ্রাতৃমিয়া। 
    কৃষ্ণ গোপালঙ্গনা রাত্রো রময়ন্তি রতিপ্রিয়াঃ।।৫৯।। 
    সৌ অপিকৈশোর কবয়ো মানয়ন্মধুসূদন। 
    রেমেতামি য়মেয়াত্মা ক্ষপাসু ক্ষাপিতা হিতঃ।।৬০।।
                         (বিষ্ণু পুরাণ অংশ ৫ অধ্যায় ১৩) 
    অর্থাৎ - সেই সব গোপীরা নিজ পতি, পিতা ও ভাইদের নিষেধ সত্ত্বেও রোজ রাত্রিতে “বিষয় ভোগ’ কামনা যুক্ত কৃষ্ণের সঙ্গে রমণ “ভোগ" করত।৫৯।। 

    কৃষ্ণও তার কিশোরাবস্থার মর্যাদা রক্ষা করে রাত্রিবেলা তাদের সঙ্গে কীভাবে রমণ করতেন এর
    স্পষ্ট প্রমাণ দেখুন - পুরাণ রচয়িতা ধূৰ্ত্তরা কৃষ্ণকে কলঙ্কিত করার জন্য লিখেছেন –

    এবং পরিষ্বঙ্গ করামিমর্শ স্নিগ্ধে ক্ষণদ্দাম বিলাস হাসৈঃ। 
    রেমে রেমশো ব্রজ সুন্দরীভি যথার্ভকঃ প্রতিবিম্ব বিভ্রমঃ।।১৭।।

    অথাৎ - কৃষ্ণ কখনও তাদের শরীর নিজ হস্ত দিয়ে স্পর্শ। করতেন, কখনও প্রেমপূর্ণ তির্যক দৃষ্টি দিয়ে তাদের দিকে তাকাতেন, কখনও আনন্দবিহুল হয়ে তাদের সঙ্গে উন্মুক্ত হাস্য-পরিহাস করতেন। যেমন বালক তন্ময় হয়ে নিজের ছায়ার সঙ্গে খেলা করে সেই রূপ আনন্দবিহ্বল হয়ে কৃষ্ণ সেই সব ব্রজ সুন্দরীদের সঙ্গে রমণ, কামক্রীড়া বিষয় ভোগ করেছেন।