• সর্বশেষঃ

    আমরা কি হিন্দু না আর্য ? - আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী

    আমাদের জাতিগত বা সমাজগত পরিচয় আমরা কোন ক্রমেই হিন্দু নহি। , অতীতকালে এই ভূ-ভাগের নাম ছিল ভারতবর্ষ অথবা আর্যাবর্ত। এই এলাকায় যারা বসবাস করতেন তাদের বলা হত আর্য ,হিন্দু নামটি বিদেশীদের দেওয়া নাম। ফার্সী অভিধান লুগাতে এ হিন্দু নাম গালি এবং কদ অর্থে ব্যবহার হয়েছে। আরবী ভাষাতেও হিন্দু শব্দের অর্থ ঘৃণাযুক্ত। ইংরেজ শাসনামলে ভারতবাসীকে তারা ঘৃণাভরে বলত নেটিভ ব্লাক । বিদেশী ভাষাসমূহের অভিধানে হিন্দু (গালি) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেহ কেহ। বলেন সিন্ধু নদের নাম পরিবর্তন হয়ে হিন্দু শব্দ হয়েছে এটাও ঠিক নয়। ঐতিহাসিকেরা এবং ভাষাতাত্ত্বিকেরা গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন হিন্দু নামটি বিদেশী শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া নাম। কালে কালে এই ভূ-ভাগে আর্য জনসাধারণেরা বিদেশী শাসকদের পদাণত হওয়ার জন্য হিন্দু নাম স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল। সনাতন ধর্মের প্রামাণ্য ধর্ম পুস্তক সমূহ প্রমাণ দেয় আমাদের ধর্ম সনাতন ধর্ম। বা বৈদিক ধর্ম এবং আমাদের পরিচয় আমরা আর্যজাতি। ১৮৩০ সালে ভারতীয় সংবিধানে ইংরেজ সরকার হিন্দু নামটি পাকাপাকিভাবে সংবিধানে জুড়ে দেন। আমরা কোন ক্রমেই হিন্দু নহি যা বর্তমান আমাদের বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণীর সমাজ বিজ্ঞান বইয়েও প্রমান পাওয়া যায়। এছাড়া আমরা যে আর্য জাতির বংশধর এবং আর্য সেই বিষয়ে বিভিন্ন প্রামাণ্য শাস্ত্রের ব্যাখার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। যাস্কাচার্য ‘আর্য’ শব্দের নিরুক্তিগত অর্থ করেছেন, আর্য-অর্থাৎ ঈশ্বর পুত্র'। এর অভিপ্রায় এই যে, ঈশ্বরের যথার্থ পুত্রকে আর্য’ নামে সম্বােধন করা হয়। পিতার অনেক পুত্র থাকা সত্বেও পিতার অনুবর্তী, আজ্ঞা পালনকারী, সদাচারী, আদর্শ পুত্রকেই বাস্তবিক পক্ষে পুত্র বলা হয়ে থাকে। সেইরূপ যদ্যপি মানব মাত্রেই ঈশ্বরের পুত্র তথাপি আর্য অর্থাৎ সদাচার পরায়ণ পুরুষকেই ঈশ্বর পুত্র নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

    প্রাচীন গ্রন্থে ‘আর্য' শব্দ-
    বেদে -
    (১) আৰ্য ব্ৰতা বিসৃজন্তো আধি ক্ষমি।” (ঋগ্বেদ ১০, ৬৫, ১১) 
    (২)কৃন্বস্তে বিশ্বমাৰ্যম্‌ ঋ (৯। ৬৩। ৫) 
    (৩) “বিজানহ্যির্যান্‌ বিশ্বমাৰ্যম্।” (ঋগ্বেদ ৯, ৬৩, ৫) 
    (৪) “বিজাহীহ্যর্যান্ যে চ দস্যবাে বহিষ্মতে রন্ধযা শাসদ ব্ৰতান্।” (ঋগ্বেদ ১, ৫১, ৮) 
    উক্ত মন্ত্র সমূহে সত্য, অহিংস, পবিত্রতাদি উত্তম ব্রতধারী ব্যক্তিদের 'আর্য’ বলা হয়েছে এবং বিশ্বের নর-নারী সকলকে এইরূপ ‘আর্য’ করার উপদেশ দেয়া হয়েছে। 
    (৫) “আর্যবৃত্ত।” (গৌতম ধর্ম সূত্র ১৯, ৯৬) সদাচার পরায়ণ অর্থে আর্য’ শব্দ প্রযুক্ত হয়।

    বাল্মীকি রামায়ণ- 
    (৬) “সর্বদাভিগতঃ সদ্ভিঃ সমুদ্র ইব সিন্ধুভিঃ। আর্যসর্বসমশ্চৈব সদৈব প্রিয়দর্শন।” (বাঃ রাঃ ১, ১, ১৬) রামচন্দ্র সদাসর্বদা সৎপুরুষদের সাহচর্যে এইভাবে থাকতেন যেরূপ সমুদ্র সদা নদী সমূহের সাথে মিলে থাকে তথা তিনি আর্য, সমদর্শী এবং সকলের প্রিয় ছিলেন।

    বিদুরনীতি- (৭) “আর্য কর্মাণি রজ্যন্ত ভূতি কর্মাণি কুৰ্বতে হিতং চ ট নাভ্যসূযন্তি পন্ডিতা ভরতৰ্ষভ৷ ন স্বে সুখে বৈ কুরুতে প্রহর্ষ। নান্যস্য দুঃখে ভবতি প্রহৃষ্টঃ ॥ দত্ত্বা ন পশ্চাৎ কুরুতেহনুতাপং স কথ্যতে সৎপুরুষার্য শীলঃ॥” (বি, নী, ১, ৩০, ১, ১১৮) এই বচনসমূহে অত্যন্ত ধার্মিককে 'আর্য' বলা হয়েছে।

    চাণক্য নীতি- (৮) “অভ্যাসাদ্‌ ধার্যতে বিদ্যা কুলং শীলেন ধার্যতে। গুণেন জ্ঞাষতে আর্যঃ কোপা নেত্রেণ গম্যাতে৷” (চা, নী, ৫, ৮) এখানে গুণী জনকে আর্য বলা হয়েছে।

    মহাভারত- (৯) ‘স বাল এবার্যমতির্নৃ পােত্তমঃ।” (ম, ভা, আদিপর্ব ৪০, ৭) এই বচনে উত্তম রাজকুমারের সাথে 'আর্যমতি’ বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে, এর অর্থ শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান। 

    কৌটিল্য-অর্থশাস্ত্র- (১০) “বাবস্থিতাৰ্যমর্যাদঃ, কৃতবর্ণাশ্রমস্থিতঃ।” যে আর্যগণের মর্যাদাকে ব্যবস্থিত করতে সমর্থ সেই রাজ্যাধিকারী, এরূপ বর্ণিত হয়েছে। 

    গীতা- কুতস্তা কশ্মলমিদং বিষমে সমুস্থিতম্‌। অনার্য জুষ্টমস্বররগ্যমকীর্তিকরমর্জুন। (ভা, গী, দ্বিতীয় অধ্যায় ২/২) এখানে যুদ্ধে সজ্জিত ভীরুতা প্রাপ্ত অর্জুনের বৃত্তিকে ‘অনার্য' বৃত্তি বলা হয়েছে। এস্থলে আর্যকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। 

    ধৰ্ম্মপদ- আর্য কে ? “অরিযপবেদিতে ধৰ্ম্মে সদা রমতি পন্ডিতাে।" পন্ডিতগণ আর্য প্রদর্শিত ধর্মে বিচরণ করেন। "ন তেন অরিযযা হােতি যেন পাণতি হিংসতি। অহিংসা সব পাণানং অরিযােতি পবচ্চতি ॥” (২৭০, ১৫) প্রাণী হিংসা করে কোনও ব্যক্তি আর্য হয় না। যে ব্যক্তি হিংসা করে না সেই আর্য। 

    শব্দকল্পদ্রুম- মান্যঃ উদারচরিতঃ শান্তচিত্তঃ, ন্যাপথাবলম্বী, প্রকৃতাচারশীলঃ, সততকৰ্তব্য কর্মানুষ্ঠাতা, যদুক্তং কর্তব্যমাচরন কার্য অকর্তবমনাচরন্। “তিষ্ঠতি প্ৰকতাচারে সতু আর্য ইতি স্মৃতঃ।” "ধার্মিকঃ ধর্মশীলঃ যদাহু মনুঃ আর্যরূপমিবাপানাং কৰ্ম্মভিঃ স্বৈর্বিভাষযেৎ।" (১০, ৫৭) মান্য- যে স্বীয় উত্তম গুণের জন্য সম্মানযােগ্য। উদার চরিত্রঃ- যার চরিত্র উদার, যার ব্যবহারে উদারতা পাওয়া যায়। যার মধ্যে সঙ্কীর্ণতা নেই; কিন্তু যার হৃদয় বিশাল। শান্তচিত্ত- যার চিত্ত শান্ত সেই ব্যক্তি আর্য। ন্যায়পথাবলম্বী- যে সদা সর্বদা ন্যায় পথে চলে এবং যে কখনও ভুলেও অন্যায়কে অনুসরণ করে না। প্রকৃতাচারণশীল- যার আচার বিচার এবং স্বভাব শাস্ত্রীয় আজ্ঞানুকুল। সতত কর্তব্য কর্মানুষ্ঠাতা-যে নিরন্তর কর্তব্য-কর্মের অনুষ্ঠানকারী এই কারনে প্রাচীন ঋষিগণ বলেছেন যে পুরুষ কর্মশীল এবং যে অসৎকর্ম কখনও করেন না। | সেই “আর্য” অর্থাৎ ধৰ্ম্মাত্মা। অমরকোষ- ‘মাহাকুল কুলীনার্য সভ্য সজ্জন সাধবঃ"।যে আকৃতি-বিকৃতি, সভ্য, শিষ্টতা ধর্ম কর্ম জ্ঞান-বিজ্ঞান আচার তথা শীল স্বভাবের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তাকে 'আর্য' বলে। 

    আর্য- “অতুং প্রকৃতমাচরিতুংযােগ্যঃ যােগ্যঃ"। অর্থাৎ শাস্ত্রোক্ত উত্তম মার্গে বিচরণকারী পূজ্যঃ শ্রেষ্ঠ ইতি। শব্দ রত্নাবলী নামক সংস্কৃত কোষে আর্য শব্দের অর্থ পূজ্য। এবং শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। “সঙ্গতে ইত্যজয়ঃ" অজয় নামক অভিধান কর্তা আর্য শব্দের অর্থ সঙ্গত বলেছেন। অর্থাৎ যার সিদ্ধান্ত এবং ব্যবহার বুদ্ধি সঙ্গত, যার বিশ্বাস এবং আচরণে পরস্পর বিরােধ দৃষ্ট হয় না। পাশ্চাত্য বিদ্বানগণের আর্য শব্দের ব্যাখ্যা A tall skined, long headed race, whose origin is still doubtful though it was probebly in Central Asia and who spread in pre historic times over the whole of Europe and the parts of Asia and Africa. Almost all modern Europeans are of Aryan descent the family
    also Called Indo European or Indo Germanic but these names are open objections from which of the world "Aryan" is free. (Harms worth) History of the world) (p 328) PEAR,S CYCLOPEDIA-
    ইংরাজী Pear's Cyclopedia General mation প্রকরণে 'আর্য' শব্দের অর্থ এই ভাবে লেখা আছে- Arya the word 'Arya' derived from the sanskrit, means an honourable lord of the soil, অর্থাৎ সংস্কৃতে আয। শব্দের অর্থ ভূমির মাননীয় (স্বামী) বা মাননীয় ভূস্বামী। Gentelman ইংরাজীতে আর্য শব্দের পর্যায়বাচী শব্দ। ইংরেজীর প্রসিদ্ধ লেখক Emerson আর্য শব্দের ব্যাখ্যা এইভাবে করেছেন- Whenever is open loyal true, of himane, and affable demeanour, honourable himself, and in his judgement of other, faithful to his work as to law and faithful alike to God and man such a man. The flowering of civilization is the finished man the of sense, of grace, of accomplishment of social powerthe gentleman (Emerson). 
    অর্থাৎ, সেই ব্যক্তিই সভ্য ও আর্য যে উদার, নিষ্ঠাবান, সত্যপ্রেমী, দয়ালু এবং সরল। যে স্বীয় দৃষ্টিতে স্বয়ং মহান এবং অন্যের যে সম্মান করে, যে প্রতিজ্ঞা পালনকারী, যে পরমেশ্বর এবং মানবের প্রতি সত্যনিষ্ঠ সেই ব্যক্তিই সংস্কৃত। যে বুদ্ধিমান, সুন্দর-গুণ ভূষিত এবং সামাজিক শক্তি সম্পন্ন তথা ভদ্র।(এমার্সন)। 

    অর্থাৎ, যিনি শ্রেষ্ঠগুণ স্বভাবযুক্ত ব্যক্তি তিনিই ‘আর্য' সংজ্ঞা সংজ্ঞী। গুণ-বিদ্যা, বিনয়, প্রেমপূর্ণ ব্যবহার, চাতুর্য, যােগক্ষেম, প্রকৃতি-পরিজ্ঞান ও উহার গুণের জ্ঞাতা এবং উহা হতে সদৈব লাভ গ্রহণে যত্নশীল থাকা সময়ানুকূল কর্ম। করা, জীবন এবং মৃত্যুর ব্যবস্থাকে জেনে অধিক শােক বা হর্ষে জড়িয়ে না পড়া, এবং ঈশ্বর আজ্ঞা ভঙ্গের ভয়ে ভীত ইত্যাদি গুণ। কর্ম এই সমস্ত গুণের প্রসারার্থে সদা উদ্যমশীলতা, জ্ঞানের বৃদ্ধির জন্য কায়মনােবাক্যের উপযােগ, এই সমস্ত লাভার্থে সজ্জন, গম্ভীর এবং উদার পুরুষদের সহযােগ ইত্যাদি আর্যের কর্ম। স্বভাব-প্রকৃতি, সৌন্দর্য, তেজস্বীতা, পরহিত বিচার, স্বার্থবশীভূত হয়ে অপরের অপকার করার ভাবনা মনে আনা ইত্যাদি “স্বভাব”। ইহা যথার্থ যে, উক্তগুণ, কর্ম এবং স্বভাবের সাথে সম্বন্ধ যুক্ত নিয়ম সমূহের সর্বতােভাবে বিকাশ সম্ভব নহে, তথাপি যতটুকু যে সমাজে এই গুণ সমূহের বিকাশ হবে সেই সমাজ সেই পরিমাণ সমৃদ্ধিশালীর অনবদ্য প্রতিভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। ঋগতৌ” এই ধাতু হইতে আর্য শব্দ সিদ্ধ হয় যাহার অর্থ জ্ঞান এবং গমন প্রাপ্তি। যে মানুষের জ্ঞান নির্দোষ এবং তদনুকুলে তার আচরণ হবে, সেই মানুষ আর্য পদের অধিকারী হবে। 

    শ্রীঅরবিন্দ ঘােষ স্বীয় সুপ্রসিদ্ধ What is significane of the name of Arya নামক প্রবন্ধে আর্য, শব্দের বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যাখ্যার মুখ্য অংশ এই রূপ- The word Arya expressed a particular ethical and social ideal of well governed life, Candour, Courtesy nobilit, straight dealing, courage, gentleness, purity, humanity, Compassion, protection of the weak, liberality, observance of social of duty, eagerness for knowledge, social accomplishment; there is no word in human speech that has a nobler history. The
    Arya is he who strives and overcomes all out side him or within him that stand opposed to the human advance. In every thing he seek truth, in everything right and freedom.(Arya Vol 1, P 61) 

    অর্থাৎ, 'আর্য' শব্দ দ্বারা এক সামাজিক তথা নৈতিক আদর্শের,এক মর্যাদাপূর্ণ জীবনী উদারতা, নম্রতা, সজ্জনতা, সরলতা, সাহস, সৌজন্য, পবিত্রতা, মানবতা, বলহীনে সহায়তা, সামাজিক কর্তব্যের অনুষ্ঠান, জ্ঞানপ্রাপ্তির উৎকণ্ঠা ইত্যাদি গুণের বোর্থ হয়ে থাকে। বাস্তবিকপক্ষে, মানবীয় ভাষায় অন্য কোনও এরূপ শব্দ নেই, যার ইতিহাস এই শব্দ হতে মহান হতে পারে। 

    মনুষ্য কাকে বলে-মনশীল ব্যক্তিকে মনুষ্য বলে। মননশীল ব্যক্তির স্বভাব, সে হিতাহিত, সত্যাসত্য, ন্যায় অন্যায়, লাভ ক্ষতির বিচার করে আচরণ করে। যে ব্যক্তি বিনয়, বিবেক এবং বিচার যুক্ত এবং বৈরী বিরােধ বিকার হতে মুক্ত, বাস্তবিক পক্ষে সেই মনুষ্য আর্য নামের যােগ্য। যে কেহ আর্য হতে পারে-আর্য' সংজ্ঞক পুরুষ কোনও স্থান বিশেষ, কোনও সমাজ বিশেষ অথবা কোনও এক জাতি বিশেষ হয় না। কিন্তু সর্বত্র উপলব্ধ হয়। এদের পুণ্য প্রভাবে সত্য ভাষণ প্রভৃতি গুণ দ্বারা মানব সমাজের উত্থান হয়। এইরূপ ব্যক্তি প্রশংসার বন্ধন হতে দূরে থাকাকে আপন হিতজ্ঞান মনে করেন এবং প্রশংসার সম্মুখে আসলেই নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে নেন। এরূপ মানুষ চুপচাপ আপন কর্তব্য করে এই জগৎ হতে চুপচাপই বিদায় নেন, কিন্তু তারা সংসারের উন্নতি এবং গৌরব বৃদ্ধির জন্য সুমহান সামগ্রী রেখে যান। এরূপ মানুষ প্রত্যেক উত্তম কর্মকে যজ্ঞরূপে করে থাকেন। উত্তমগুণের অধিকারী এবং উহা স্বীয় জীবনে আচরণ করেও মহাত্মা ব্যক্তিগণ অভিমান বা অহংকার হতে দূরে সরে থাকেন।

    আর্য ও দস্যু-বেদ উপদেশ দান করে-মানব, তুমি আর্য এবং দস্যুর পরিজ্ঞান লাভ কর। যে সমাজ এই পরিজ্ঞানে যত পারদর্শী হবে, সে ততই সুখী এবং যে যতই অপারদর্শী সে ততই দুঃখী হবে। বেদ বর্ণিত সার্বভৌম নিয়ম সর্বত্র সমান রূপে থাকে। এই নিয়মের সহায়তা লাভ করে মনুষ্য সমাজ, জাতি অথবা দেশকে উন্নত করে এবং এ হতে বিমুখ হয়ে অবনত হতে দেখা গিয়েছে। আর্যদের বীজ প্রত্যেক মানব অন্তরে সমান রূপে থাকে। এই বীজ অনুকুল অবস্থা লাভ করে মনুষ্যকে আর্যত্বের প্রতি এবং প্রতিকুল অবস্থায় অনার্যত্বের প্রতি লয়ে যায়। ব্ৰতানুকুল আচরণকারীকে ‘আর্য' এবং ব্রতানুকুল আচরণ পরিত্যাগকারীকে দস্যু' বলা হয়। সত্য ভাষণ প্রভৃতি আত্মার উত্তম গুণ। এই গুণসমূহ পালন করাকে ‘ব্রত এবং পালন না করাকে অব্ৰত' বলা হয়। অতএব মানব মাত্রের উচিত শুভ ব্রত পালন করা এবং প্রত্যেক প্রকার কষ্ট এবং ত্যাগের মুখােমুখি হয়ে। ব্রত পালনে অটল থাকা। তা হলে “আর্য” সংজ্ঞা লাভ করা যায়।