বেদ কি মৃতদেহ আগুনে পুড়ানোর উপদেশ দেয়? অশৌচ ও শ্রাদ্ধের বিধান কি বৈদিক সিদ্ধান্তে আছে?
প্রশ্ন ১ঃ বেদ কি মৃতদেহ আগুনে পুড়ানোর উপদেশ দেয়?
উত্তরঃ হ্যাঁ অবশ্যই। এবিষয়ে বেদ বলছেঃ
এদং বর্হিরসদো মেধ্যোভূঃ প্রতিত্বা জানন্ত্ত পিতরঃ পরেতম্।
য়থাপরূপ তন্বং সংভরস্ব গাত্রাণিতে ব্রহ্মণা কল্পয়ামি।।
অথর্ববেদ ১৮/৪/৫২
ভাষ্যঃ হে সন্তান এবং নিকটস্থ পুরুষ (আ অসদঃ) এখানে এসো (মেধ্যঃ অভূঃ) পবিত্র ভাবনায় যুক্ত হইয়া বলো যে (পিতরঃ) আমার মাতা-পিতা-গুরুজন দিগকে (পরা ইতম্) মৃত্যুর পরে (বর্হিঃ) কাশা-কুশার উপর সাজিয়ে (তন্বং) শরীরকে (য়থাপরূ) শরীরের প্রত্যেক জোড়া বা গীঠের প্রতি উপেক্ষা না করিয়া (তে গাত্রানি) ঐ মৃত শরীরের প্রত্যেক অংগ-অংগের প্রতি (সং ভরস্ব) ভালভাবে ধারণ করিয়া (ব্রহ্মণা) পবিত্র বেদবাণীর দ্বারা কর্মকান্ডীয় ব্রাহ্মণ গুরু আচার্য পুরোহিত নিয়ে (কল্পয়ামি) কায়াকল্পের মত নূতন পবিত্র দীব্য শরীরের শুভ কামনা করিতেছি বলে সংকল্প করো। যাহাতে শরীরকে শান্তিতে ভস্ম করা যায়।
ভাবার্থঃ হে সন্তান এবং নিকটস্থ পুরুষ এখানে এসো। পবিত্র ভাবনায় যুক্ত হইয়া বলো যে আমার মাতা-পিতা-গুরুজন দিগকে মৃত্যুর পরে কাশা-কুশার উপর সাজিয়ে শরীরকে শরীরের প্রত্যেক জোড়া বা গীঠের প্রতি উপেক্ষা না করিয়া ঐ মৃত শরীরের প্রত্যেক অংগ-অংগের প্রতি ভালভাবে ধারণ করিয়া পবিত্র বেদবাণীর দ্বারা কর্মকান্ডীয় ব্রাহ্মণ গুরু আচার্য পুরোহিত নিয়ে কায়াকল্পের মত নূতন পবিত্র দীব্য শরীরের শুভ কামনা করিতেছি বলে সংকল্প করো। যাহাতে শরীরকে শান্তিতে ভস্ম করা যায়।
প্রশ্ন ২ঃ শ্মশানে মৃতদেহ আগুনে পুড়ানোর আর কি কি করা কর্তব্য? শ্রাদ্ধ শান্তি করার কি কোনো নিয়ম আছে?
উত্তরঃ শ্মশানে মৃতদেহ আগুনে দাহা নামই "অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া"। "আন্ত্য" আর্থ অন্তিম এবং ইষ্টি অর্থ যজ্ঞ বা সংস্কার। মৃতদেহ আগুনে দাহা করাই শেষ সংস্কার । এর পর শ্রাদ্ধ বা পিণ্ড দান জাতীয় কোনো নিয়ম শাস্ত্র সম্মত নয়। এ বিষয়ে বেদ বলছেঃ
বায়ুরনিলমমৃতমথেদং ভস্মান্তং শরীরম্।
ওম্ ক্রতো স্মর ক্লিবে স্মর কৃতং স্বর।।
যজুর্বেদ৪০/১৫
ভাষ্যঃ (ক্রতো) হে কর্মশীল জীব (ওম্) পরমাত্মার নাম (ক্লিবে) সামার্থের জন্য (স্মর) স্মরণ কর (কৃতম্) কৃত কর্মকে (স্মর) স্মরণ কর (বায়ুঃ) আধ্যাতিক প্রাণ (অনিলম্) আধি দৈবিক প্রাণ (অমৃতম্) পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হও (অথ) তৎপর (ইদং শরীরম্) এই ভৌতিক শরীর (ভস্মাত্মাকে) ভস্মে শেষ হউক।
ভাবার্থঃ অন্ত্যেষ্টি সংস্কারই শেষ সংস্কার। ইহার পর শরীরের জন্য অন্য কোন সংস্কারই অবশিষ্ট থাকে না। ইহার নাম নরমেধ, পুরুষমেধ, নর যাগ ও পুরুষ যাগ। শ্মশান ভূমিতে জ্বলন্ত চিতায় সমিধা, সুগন্ধি, রোগনাশক ও বুদ্ধিবদ্ধক ওষধি এবং ঘৃত আহুতি দ্বারা মৃত শরীরকে ভস্মীভূত করাই অন্ত্যেষ্টি সংস্কার। জীব তাহার কৃত কর্মে ফল নিজেই ভোগ করে। বংসধরদের কোন কার্যই তাহাকে সাহায্য করিতে পারে না।
প্রশ্ন ৩ঃ মৃতদেহ দাহ করলে শরীরে কোন পাপ বা অশৌচ দোষ লাগে ?
উত্তরঃ না। বরং মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া এবং দাহ করাকে পরম তপস্যা বলা হয়েছে।
এতদ বৈ পরমং তপো যত্ প্রেতমরন্যং হরন্তি।
এতদ্ বৈ পরমং তপো যং প্রেতমপ্নাবভ্যাদধতি।।
বৃহদারন্যক উপনিষদ ৫.১১.১
অর্থাৎ, মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া এবং দাহ করা পরম তপস্যা।
শরীরদাহে পাতকাভাবাত্
(ন্যয়সুত্র ৩.১.৪)
অর্থাৎ, মৃতদেহ দাহ করলে শরীরে কোন পাপ বা অশৌচ দোষ লাগে না।
প্রশ্ন ৪ঃ কিন্তু পুরাণাদি গ্রন্থে তো শ্রাদ্ধ, পিণ্ডদান এসব সংস্কারের উল্লেখ রয়েছে?
উত্তরঃ হ্যাঁ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে প্রচলিত যে সব পুরাণ রয়েছে সেগুলো মাত্র ৫০০-১৫০০ বছর আগের রচনা। এগুলো সেই প্রকৃত পুরাণ নয়। বেদে প্রকৃত পুরাণের বর্ণনা আছে। সেখানে এসব কোনো সংস্কারের উল্লেখ নেই। বর্তমানে প্রচলিত পুরাণগুলো আর্থ লোভী পুরোহিতদের রচনা, যেখানে প্রাচীন ইতিহাস বর্ণনার সাথে সাথে তাদের পেট পুজোর সিস্টেমটাও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত উদ্বোধন কার্যালয় কলিকাতা এর "উপনিষদ গ্রন্থাবলী" গ্রন্থের ৩৪৭-৩৪৮ পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়া দয়ানন্দ সরস্বতী রচিত "সত্যার্থ প্রকাশ" গ্রন্থে বিষয়টির উল্লেখ পাবেন। প্রকৃতপক্ষে "ব্রাহ্মণ" গ্রন্থেরই এক নাম পুরাণ।
[বিদ্রঃ অন্তষ্টিক্রিয়া করার সম্পূর্ণ বৈদিক বিধি আর্য সমাজের "সংস্কারবিধিঃ" নামক পুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া "মৃতক শ্রাদ্ধ খণ্ডন" নামক গ্রন্থে শ্রাদ্ধের পক্ষে থাকা সকল অপযুক্তি খণ্ডন করা হয়েছে। ]
প্রচারেঃ ।।বৈদিক আর্য সমাজ।।