• সর্বশেষঃ

    অল্লোপনিষদের মুখোশ উন্মোচন- পর্ব ১ - সাধারণ আলোচনা


    সংস্কৃতে অল্লোপনিষদ বাংলা উচ্চারণে আল্লোপনিষদ। 

    একটু লক্ষ করে দেখুন [আল্লা+উপনিষদ =আল্লোপনিষদ ] এখানে আল্লা হলো আরবি শব্দ আর উপনিষদ হল সংস্কৃত শব্দ ৷ এ থেকে খুব স্পষ্ট যে আল্লোপনিষদ শব্দটির উৎপত্তি মুসলিমরা ভারত দখল করার পর। খুব সুকৌশলে তাকিয়াবাজির মাধ্যমে সনাতনীদের মুসলিম করার ফাঁদ তৈরী করা হয়েছে এই জাল উপনিষদ রচনার মাধ্যমে। তারা এটিকে অথর্বেদের অংশ হিসেবে প্রচার করে।

    মুক্তিকোপনিষদ নামে একটি উপনিষদ আছে। যেটি প্রাচীন বৈদিক উপনিষদ(মোট ১২টি) হিসেবে স্বীকৃত নয়। বরং পরবর্তী কালে রচিত। এই উপনিষদে তৎকালে প্রচলিত সকল(১০৮ টি) উপনিষদের তালিকা দেওয়া আছে। যেখানে আল্লোপনিষদ নামে কোনো উপনিষদের উল্লেখ পাওয়া যায় না। এ থেকেও স্পষ্ট যে আল্লোপনিষদ মুক্তিকোপনিষদেরও পরে রচনা করা হয়েছে। সে হিসেবে মাত্র কয়েকশ বছর আগে আল্লোপনিষদ নামক জাল গ্রন্থটি রচনা করা হয়েছে বলে প্রমানিত হয়।

    বিদেশি মুসলিম হওয়ায় মোঘল সম্রাট আকবর তার শাসন আমলে বিভিন্ন দেশীয় রাজার আক্রমণের স্বীকার হতে থাকেন। তার সম্রাজ্য হুমকির মুখে পড়ে যায়। তখন তিনি এক নতুন ফন্দি আঁটলেন। “দীন-ই-ইলাহি” নামক একটি ধর্মীয় মতবাদ তৈরী করলেন। যেখানে নাকি সকল ধর্মের সকল সুসংস্কার একত্রিত করা হয়েছে? আসলে সেখানে আল্লাকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছিলো এবং পরম ব্রহ্মকে আল্লার অধীন বলা হয়েছিলো! এ বিষয়ে ২য় পর্বে আলোচনা করা হবে। তিনি তখন বিকৃত সনাতন গ্রন্থ রচনায় পণ্ডিত নিয়োগ করেন। যাদের একটি এই আল্লোপনিষদ। এসব জালিয়াতি করে তিনি ভারতীয়দের বোকা বানিয়েছিলেন এবং যৌন জিহাদের অংশ হিসেবে জোধাবাই নামে এক সনাতন নারীকে বিয়ে করেন।


    এখন দেখা যাক আল্লোপনিষদ সম্পর্কে পণ্ডিতরা কি বলেন।


    জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্সমুলার বলেছেন, 
    কোনো সন্দেহ নেই কিছু উপনিষদ একেবারেই আধুনিক, উল্লেখ্য যে, এমনকি আল্লোপনিষদ নামেও একটি উপনিষদ তৈরী করা হয়েছে।
    সূত্রঃ in ‘Upanishads’ Page lxvii


    বিখ্যাত জার্মান ইতিহাসবিদ Albrecht Weber বলেছেন, 
    আল্লোপনিষদ আল্লাসুক্ত সম্ভবত হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়া কোনো ব্যক্তির রচনা।
    সূত্রঃ in  ‘Indische Streifen, eine Sammlung von bisher in Zeitschriften ( Indian Strip, a collection of far smaller papers in journals)’



    দয়ানন্দ সরস্বতী তার “সত্যার্থ প্রকাশ” গ্রন্থে বলেছেন , 
     যদি তুমি অথর্ববেদ পাঠ না করিয়া থাক, তবে আমার নিকট এসো এবং আদ্যোপান্ত পাঠ কর; অথবা যে কোন অথর্ববেদীর নিকট বিংশতি কাণ্ড যুক্ত অথর্ববেদ মন্ত্রসংহিতা পাঠ কর; কোথায়ও তোমাদের পয়গম্বর সাহেবের নাম বা তাহার মতের চিহ্ন দেখিতে পাইবে না। অথর্ববেদ, ইহার গোপথ ব্রাহ্মণে, অথবা ইহার কোন ব্যাখায় অল্লোপনিষদ্ নাই। অনুমান হইতেছে যে ইহা আকবর বাদশাহের সময়ে কাহারও দ্বারা রচিত হইয়াছিল। দেখা যাইতেছে যে, ইহার রচয়িতা কিঞ্চিৎ আরবী এবং সংস্কৃত অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। কারণ, ইহাতে আরবী এবং সংস্কৃত ভাষার পদ দৃষ্ট হয়।



    স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছেন যে, 
     আল্লোপনিষদ্‌ যে অনেক পরবর্তীকালের রচনা তার প্রমাণ রয়েছে।
    সূত্রঃ Vivekananda, Swami (১৯০৮)। Lectures from Columbo to Almora: Issue 16 of Himalayan series। Madras, India: Prabuddha Bharata Press। পৃষ্ঠা 123।



    দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, 
    আকবরের রাজত্বকালে হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থটি রচিত হয়।
    সূত্রঃ Tagore, Satyendranath; Devi, Indira (২০০৬)। The Autobiography Of Devendranath Tagore (Reprint সংস্করণ)। Whitefish, Montana, USA: Kessinger Publishing। পৃষ্ঠা 74



    বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন যে, 
    আল্লোপনিষদ্‌ ছিল ভারতের মুসলমান শাসকদের কিছু তোষামোদকারীর নির্লজ্জ রচনা।
    সূত্রঃ Bijlert, Viktor A. van (১৯৯৬)। "Sanskrit and Hindu National Identity in Nineteenth Century Bengal"। Houben, Jan E. M.। Ideology and Status of Sanskrit: Contributions to the History of the Sanskrit Language: Volume 13 of Brill's Indological Library (Illustrated সংস্করণ)। Leiden, The Netherlands: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 358।



    ধর্মতত্ত্ববিদ আর. অনন্তকৃষ্ণ শাস্ত্রী লিখেছেন
    ভারতে মুসলমান শাসনকালে আর্য পণ্ডিতরা শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। 
     তিনি আরও বলেছেন যে,
    এই গ্রন্থটি সাধারণ উপনিষদ্‌গুলির রচনাভঙ্গি অনুসরণ করে লেখা হয়নি" এবং এই গ্রন্থে ব্যবহৃত শব্দগুলি শুনতে অনেকটি আরবির মতো।


    সূত্রঃ Sastri, R Ananthakrishna (১৮৯৮)। "Allopanishad or Mahomed Upanishad"। The Theosophist। Madras, India: Theosophical Publishing House। XIX: 177।


    On the occasion of Akbar Badshah’s coronation, these Yogis recited Allopanishad in vedic metres and blessed him. His favourite Queen Devi Choudharani recited these mantras while doing Tulsi Puja, praying for his long life.

    সূত্রঃ Indian literature: Volume 41 , page 175, Sahitya Academy


    Some upanishads are written by self-seeking Brahminism as demanded by expediency and when emperor Akbar was toying with the idea of a new religion Dil-Il- Adi, the Brahmins had written for him, a new upanishad called Allopanishad.
    সূত্রঃ S. N. Sadasivan in ‘A social history of India’  -Page 178


    Even the contention that a certain Allopanishad, pointing to a Vedic reference of Allah and the prophet Mohammed, is authoritative is shown to be a falsification.
    সূত্রঃ The Quarterly review of historical studies:
    Page no 27, Volume 28 , 1988, Calcutta, India.

    On the occasion of Akbar Badshah’s coronation, these Yogis recited Allopanishad in vedic metres and blessed him. His favourite Queen Devi Choudharani recited these mantras while doing Tulsi Puja, praying for his long life.

    সূত্রঃ Indian literature: Volume 41 , page 175, Sahitya Academy


    Allopanishad Islamic Works Allopanishad, also known as Alia Upanisad, is a celebrated work of Sanskrit literature. It was written by a Hindu courtier (16th Century) of Emperor Akbar, which was an apocryphal chapter of the Atharvaveda.
    সূত্রঃ N.Singh in ‘Encyclopaedic Dictionary of Pali Literature’
    Volume 1 Page 40


    Texts called “Upanishads” continued to appear up to the end of the British rule in 1947. The Akbar Upanishad and Allah Upanishad are examples having been written in the 17th century, at the instance of Darah Shikoh, in praise of Islam.
    সূত্রঃ Harry Oldmeadow   in  ‘Light from the East: Eastern Wisdom  for  the Modern West’ – Page 37


    Some count up to 200 Upanishads, others up to 100. Barth says that the number of the Upanishads may go up to 250, including the Allah Upanishad that was composed at the time of Akbar
    সূত্রঃ Anthony Elenjimittam in ‘The Upanishads: Isa, Katha,
    Mundaka, Mandukya’  Page 10


    Over the centuries, new upanishads have been composed.Thus, for example, in the 17th century the Mogul emperor Shah Jahan’s Son wanted an Upanishad to be written dedicated to Allah, the Islamic nomenclature for God. This gave rise to the Allopanishad.
    সূত্রঃ Raman Varadara in
    Glimpses of Indian Heritage – Page 70


    'বেদাচার্য' 'বেদবিশারদ' পণ্ডিত দূর্গাদাস লাহিড়ী তার "পৃথিবীর ইতিহাস" গ্রন্থে বলেছেন –

    একসময় কোনও ব্যক্তি আপন মত প্রতিষ্ঠার জন্য উপনিষদ নামে গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন।অল্লোপনিষৎ প্রভৃতিই ইহার প্রমাণ।অল্লোপনিষৎ-বাদসাহ আকবরের সময়,মুসলমান ধর্ম্মের প্রাধান্য প্রতিপাদনের জন্য বিরচিত হয়। 'মস্তেখুবৎ তবারিক' গ্রন্থে অল্লোপনিষৎ-রচনার কারণ-সমন্ধে কিঞ্চিৎ আভাস পাওয়া যায়।কথিত হয়--হিজরি ৯৮৩ সালে(১৫৭৫ খ্রিঃ) সম্রাট আকবর বদাউনি নামক জনৈক মুসলমানকে অর্থব্ববেদের অনুবাদ করিতে বলেন।ইসলাম ধর্ম্মের সহিত অথর্ব্ববেদের কতকগুলি ধর্ম্মোপদেশের ঐক্য আছে-শুনিতে পাইয়া,বাদসাহ সেই আদেশ প্রদান করিয়াছিলেন।অনুবাদ কালে বদাউনি অথর্ব্ববেদের অর্থ উপলব্ধি করিতে পারেন না।তখন,ফৈজি ও ইব্রাহিমের উপর সেই অনুবাদের ভার ন্যস্ত হয়।কিন্তু তাঁহারাই বা কি করিবেন?ইতিমধ্যে ভাবন নামক জনৈক দক্ষিণ দেশীয় ব্রাহ্মণ মুসল্মান ধর্ম অবলম্বন করেন।তখন তাঁহারই সাহায্যে পারস্য ভাষায় অথর্ব্ববেদের অনুবাদ আরম্ভ হয়।বদাউনি এবং ইব্রাহিমকে শেখ ভাবন যেরুপভাবে বুঝাইয়া দিতেন,তাঁহারা সেই ভাবেই অনুবাদ কার্য্য সম্পন্ন করিয়া যাইতেন।সেই অনুবাদের সময় বেদের এক স্থানে কোরাণের 'লা ইল্লাহ্' বচনের মত কোনও অংশ দেখিতে পাইয়া,সেথ ভাবন তাহার রুপান্তর সংঘটিত করেন।অনেকে,ভাবনের কৌশল বুঝিতে না পারিয়া,সত্য সত্যই বেদে 'আল্লার' কথা আছে মনে করিয়া,ভ্রমে পতিত হয়;এবং তদনুসারে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে।অথর্ব্ববেদের যে দুইটি মন্ত্রের উপর নির্ভর করিয়া সেথ ভাবন আপনার উদ্দেশ্য-সিদ্ধি করিয়াছিলেন, সে দুইটি মন্ত্র এই:- "আদলাবুক-মেককং।অলাবুক নিখাতং।" এই হইতে প্রথমে আদল্লাবুকমেককং।অল্লাং বুকং।"ইত্যাদি বাক্যের সৃষ্টি হয়;এবং পরিশেষে "অল্লোপনিষৎ' রচিত হইয়া যায়।অল্লোপনিষদের উপসংহারে পরিবর্ত্তনের মাত্রা চরম পন্থা পরিগ্রহ করে।তাহাতে লিখিত হয়,--"ইল্লাকবর ইল্লাকবর ইল্লল্লেতি ইল্লাল্লাঃইল্লা ইল্লাল্লা অনাদিস্বরুপা অথর্ব্বনী শাখাং হং হ্রীং জনান পশূন সিদ্ধান্ জলচরান অদৃষ্টং কুরু কুরু ফট্।"অর্থাৎ, আকবর বাদসাহ পর্যন্ত উপনিষদে স্থান লাভ করেন।ইহার অধিক শাস্ত্রের দুর্দ্দশা আর কি হইতে পারে?

    সুতরাং, অল্লোপনিষদ কোনোদিন আমাদের শাস্ত্র ছিল না।

    পাঠকগণ, আল্লোপনিষদ সম্পর্কে পণ্ডিতদের মতামত তো আপনারা এই পর্বে জানলেন।  আল্লোপনিষদ যে পুরোপুরি ভূয়া  তার শাস্ত্র প্রমাণ থাকছে দ্বিতীয় পর্বে।