• সর্বশেষঃ

    কোনটি বিজ্ঞান সম্মত, শবদাহ করা নাকি সমাধি/কবর দেওয়া?


    কোনো ব্যক্তি দেহত্যাগ করলেন। আত্মা দেহত্যাগ করার পর ঐ ব্যক্তির দেহটি কেবলই একটা জড় বস্তু। শব দাহ করা হোক বা সমাধি/কবর দেওয়া হোক, তাতে ঐ ব্যক্তির আর কোনো উপকার বা অপকার হবেনা। তাই আমাদের ভাবতে হবে কোন পদ্ধতিটি আমাদের পরিবেশের জন্য উত্তম, যারা জীবিত আছে তাদের জন্য উত্তম। 

    সনাতন শাস্ত্রে শব দাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো নামধারী সনাতনী বা কোনো নামধারী গোষ্ঠী যদি দাহ করার পরিবর্তে সমাধি/কবর দেওয়ার প্রথা চলু করেন তবে সেটা সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কোনোভাবেই তা সনাতন ধর্মের প্রথা হবেনা। 

    এখন আমরা বিবেচনা করবো বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কোন প্রথাটি উত্তম। শব দাহ নাকি সমাধি/কবর দেওয়া? 

    কিছুদিন পর পর হাসপাতালে দূরারোগ্য রোগীর জীবানুযুক্ত কাপড়চোপড়, বিছানা, বালিশ সহ অনেক সামগ্রী পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় Incineration. এর কারণ রোগীর দেহের নানাবিধ জীবাণু এসব সামগ্রীর মাধ্যমে অন্য মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু পুড়িয়ে ফেললে সমস্ত জীবাণু ধ্বংশ হয়ে যায়। 

    মৃত মানুষের দেহ যেন রোগজীবাণুর একটি স্তুপ। এই দেহ যদি মাটিতে পুতে ফেলাহয় তাহলে নানা রকম পোকামাকড়, প্রাণী দ্বারা সেগুলো পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষের রোগ সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। কিছু কিছু রোগ আক্রান্ত মানুষের মৃতদেহ ভয়াবহ রকম বিপদজনক।  যেমন বিভিন্ন ফ্লু আক্রান্ত হয়ে যেসব মানুষ মারা যায় তাদের দেহ কবর দিলে খুব সহজেই বিভিন্ন উপায়ে তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আরোকিছু রোগ আছে অকল্পনীয় উপায়ে ছড়ায় - যেমনঃ এনথ্রাক্স। এনথ্রাক্স আক্রান্ত দেহ কবর দিলে ঐ জমিতে যদি কোনো ঘাস জন্মে এবং ঐ ঘাস যদি কোনো গবাদিপশু খায় তাহলে ঐ গবাদিপশু এনথ্রাক্স আক্রান্ত হতে পারে। আর ঐ গবাদিপশুকে যদি কোনো মানুষ খায় তাহলে তার দেহেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়বে। এসব বিপদ এড়াতে শব দাহ করাই মৃতদেহ সৎকারের শ্রেষ্ঠ পন্থা। 

    এতো গেলো রোগের কথা। এবার আসি বায়ু দূষণ। মৃতদেহ পোড়াতে কয়েক মন কাঠ লাগে। যার ফলে কিছু কার্বনডাই-অক্সাইড নির্গত হয় এবং খুব অল্প পরিমাণ অন্য কিছু ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয়। এতে সামন্য পরিবেশ দূষণ হয় এটা খুবই সত্য কথা। তবে তার চেয়ে বড় সত্য কথা এই ব্যক্তির রান্নার জন্য জীবনে আর কখনো কাঠ পোড়াতে হবেনা। ভেবে দেখুন শ্মশানে যে পরিমাণ কাঠ পুড়ানো হয় তা ঐ ব্যক্তির ১/২ মাসের রান্নার জন্য খরচ হতো! 

    অপর দিকে যদি সমাধি/কবর দেওয়া হয় তাহলে ঐ মৃতদেহে পঁচা-গলা শুরু হয়। বহুদিন যাবত দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হতে থাকে। মাঠির নিচে থাকায় এ দুর্গন্ধ টের পাওয়া কঠিন, তবে আস্তে আসতে এসব গ্যাস মাটি থেকে উপরে উঠে আসে এবং বায়ুকে দূষিত করে। আর এই দূষিত বায়ুতে জীবানুও থাকতে পারে যা শবদাহের ফলে উৎপন্ন গ্যাসে থাকেনা। 

    উপরোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনা করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে,  আমাদের ঋষিরাই শবদাহের বিধান করে সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন।

    (International cremation statistic 2015) এর রিপোর্ট অনুসারে যেসকল দেশে শবদাহের মাধ্যমে মৃতদেহের সৎকার করা হয় সে তালিকায় সবথেকে এগিয়ে আছে জাপান -৯৯.৯৭ শতাংশ শব দেহের দাহ ক্রিয়া হয় এই দেশে যা নেপাল এবং ভারত এর থেকেও অনেক বেশি । উল্লেখ যোগ্য (TAIWAN -93.74%), (SWITZERLAND -85.44%), THAILAND-80%, SWEDEN -81%,SOUTH KOREA 80.79%, SLOVENIA -83.65%, SINGAPORE -79.37%, NEW ZELAND -72.00%, HONG KONG -91.40%, CHECZ REPUBLIC -80.45%, INDIA -85%,NEPAL -95%, WASHINGTON -85%, এরকম অসংখ্য এলাকা আছে যেখানে দাহ ক্রিয়া অনুসরন করা হয় । এবং ব্যাপক ভাবে মানুষ দাহ ক্রিয়া কে এডপ্ট করে নিচ্ছেন ।

    এখন দেখা যাক "JOAN CARROL CRUZ" লেখা বই "THE INCORRUPTIBLES"  এর একটি উদ্ধৃতি — The sheer stench from decomposing corpses even when baried deeply was over overpowering in areas adjacent to the urban cemetry .
    এর অর্থ এমন — যদি আমরা কোন শব দেহ কে গভীর থেকে গভীরেও পুতে দেই তাহলেও আশে পাশের পরিবেশ এর জন্য তা ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে । মানুষ এর মৃত দেহ মাটিতে দাফন করলে তার থেকে ভয়ানক (Pathogenic Bacteria ) উৎপন্ন হয়  যা বহু রোগ এর সংক্রমন এর কারন ।

    Decomposition of the human body releases significant pathogeic bacteria , fungi , protozoa and viruses which can cause dieses and illnessand many urban cemetries were locataded without condsideration for local ground water .

    এর বাইরে উল্লেখযোগ্য হল সোডিয়াম এর মাত্রা ব্যাপাক ভাবে বেড়ে যায় যা পরিবেশ এর জন্য ভয়ানক ।কিছু রিসার্স এ এমন বলা হয়েছে যে এই মাত্রা ২০০ থেকে ১০০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় । এর থেকে মারাত্মক হল (Botulinum Toxin) .

    By blocking this singaling molecule, tiny amounts of BOTULINUM TOXIN can causes paralysis and even death through respetory failure .

    এই ঘাতক বটুলিনাম টক্সিন এর সামান্য মাত্রাই হতে পারে মারাত্মক রোগ এর কারন ।শুধুমাত্র প্রানী কূল এর জন্য নয় গাছপালা এর এর জন্যেও ভয়ানক হয়ে থাকে এই টক্সিন ।

    এখন আসা যাক দাহ ক্রিয়াতে । মৃত শরীর কে দাহ করলে বা অগ্নিতে আহুতি দিলে আগুনের  তাপে এ সমস্ত ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাস ছড়াতে পারে না আগুনে পুড়ে ধংশ হয়ে যায় । শরীর আগ্নিতে দাহ করার ফলে কিছু বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয় ,এই জন্য বৈদিক শাস্ত্রে শব দাহ করার জন্য বিশেষ পদ্ধতি বলা হয়েছে ।  মৃত শরীরের ওজন অনুপাতে ঘৃত ,মধু , কেশর ,অগরু , তগর ,চন্দন এবং যজ্ঞ সমিধার অন্যান্য ওষধি দ্রব্য দ্বারা শব দাহ করার বিধান দেয়া হয়েছে । যাতে শরীর দাহ করার ফলে প্রকৃতির উপর যে খারাপ প্রভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে , সেটাও এই ঘৃত, ওষধি এবং সুগন্ধি দ্রব্য এর গুন দ্বারা ব্যালান্স হয়ে যায় এবং প্রকৃতি সুরক্ষিত থাকে । আমাদের বৈদিক সংস্কৃতি তে প্রকৃতি কে মাতা বলা হয়ে থাকে । এই জন্য বৈদিক সিদ্ধান্ত কখনই প্রকৃতি বিরদ্ধ কার্য করার জ্ঞান দিবে না।

    এই যে দাহ করা এটাই  — অন্ত + ইষ্টি+ ক্রিয়া = অন্তেষ্টীক্রিয়া বা সর্বশেষ যজ্ঞ ক্রিয়া। এর দ্বারা প্রকৃতির উপর কি প্রভাব পড়ে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন , DR . IK NARANG এর বই SCIENCE OF YAJNA .

    সবশেষে রবীন্দ্রনাথের দুটি লাইন দিয়ে শেষ করিঃ
     মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা। অগ্নি স্নানে সূচি হোক ধরা!


    ।। নমস্তে।। 
    @ বৈদক আর্য সমাজ