• সর্বশেষঃ

    বাংলাদেশ বৈদিক আর্য সমাজ-এর উৎপত্তি, লক্ষ্য ও মূলনীতি

    উৎপত্তিঃ সেই ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু।তিলে তিলে পার হয়ে গেল অনেক বছর।মানুষে মানুষে ভেদাভেদ  দূর করা আর  ধর্ম  জ্ঞানহীন হিন্দুদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য  বীর  মুক্তিযোদ্ধা , একাধারে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বক্তা, সমাজ সংস্কারক, পবিত্র বেদোপদেশক, প্রধান পরীক্ষক বাংলা  ১ম পত্র  যশোর বোর্ড, কবি, লেখক, এয়ার স্কাউট লিডার উডব্যাজ পার্টমেন্ট প্রাপ্ত , প্রশিক্ষক বাংলা মাধ্যমিক ( TOT), (CPD-1), (CPD-2), (TQI) "আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী" "বাংলাদেশ বৈদিক  আর্য সমাজ" প্রতিষ্ঠা করেন। এর পূর্বে ১৯৬৬ সাল হতে ( মাত্র ১০ বছর বয়স হতে) তিনি জাগরণী সঙ্ঘের ব্যানারে আর্য সমাজের হয়ে প্রচারে নিয়জিত ছিলেন। 


    লক্ষ্যঃ পবিত্র বেদ উপনিষদ ও গীতার ধর্ম প্রচার করা, জাত-পাত দূর করা, ব্যপক অসম বর্ণের বিবাহ  ও বিধবা বিবাহ প্রচলন, বিজ্ঞান ভিত্তিক সার্বজনীন শিক্ষার বিকাশ , ব্রাহ্মণ্যবাদ ও মূর্খ গুরু প্রথার বিলোপ, হিন্দুদের অর্থনৈতিক মুক্তির বিকাশ আমাদের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ।


    বাংলাদেশ বৈদিক  আর্য সমাজ-এর প্রতিষ্ঠাতা আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী  সম্পর্কে:

    আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী ১৯৫৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী মাগুরা জেলার মােহাম্মদপুর উপজেলার অন্তর্গত চররামপুর নামক একটি ছােট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম যুগল চন্দ্র দেব এবং মাতা প্রভাবতী দেবী। বাবা-মায়ের ছয় জন সন্তানের মধ্যে তিনি সকলের বড়। ছয় বছর বয়সে স্থানীয় পলাশবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং একই স্থানের উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে এস, এস, সি পাশ করেন। পলাশ বাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সুযােগ্য প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল কাইয়ুম মিয়া তার এই ছাত্রকে মনের মত করে গড়ে তুলেছিলেন। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি প্রত্যেক শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করতেন। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন খুব মেধাবী এবং মনােযােগী ছাত্র। খেলা-ধূলা, ক্রীড়া প্রতিযােগিতা, নাটক, আবৃত্তি এবং কবিতা লেখায় তার সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি ভারত থেকে উচ্চ সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র পনের বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন উপজেলার মধ্যে কনিষ্ঠ মুক্তিযােদ্ধা। বীর যােদ্ধা হিসাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও দেশদ্রোহীদের সাথে প্রকাশ্য যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং বেশীর ভাগ যুদ্ধে জয় লাভ করেন। আগষ্ট মাসে স্বয়ংক্রিয় একটি আগ্নেয় অস্ত্রসহ এক রাজাকারকে ধরে ফেলেন কিন্তু তার কাছে তখন কোন অস্ত্র ছিল না। পিতার ঘরবাড়ী সব ১৯৭১ সালে ধ্বংস হয়। বর্তমান পিতার ভিটায় একটি ঘরও নেই। পিতার রেখে যাওয়া সামান্য ভূমিতে তিনি বর্তমানে বৈদিক মঠ ও মিশন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হলে পরিবারে খুব অভাব অনটন নেমে আসে। পরিবারকে বাচাতে তিনি শারীরিক শ্রম শুরু করেন।

    ১৯৭২ সালের ৫ মে সৈনিক জীবন গ্রহণ করেন এবং পাঁচ ব্যাটেলিয়ান সৈনিক গড়তে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চাকুরীতে ইস্তফা দেন এবং ছাত্র জীবনে ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে এইচ,এস, সি, ১৯৭৭ সালে। বি, এ (সম্মান) এবং ১৯৭৮ সালে এম, এ পাশ করেন। সকল পরীক্ষাতেই তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৮০ সালে বি, এ, এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রামে মহান। শিক্ষকতা পেশায় যােগদান করেন। ১৯৮২ সালে এয়ার স্কাউট লিডার কোর্স এবং ১৯৯৯ সালে স্কাউট এ্যাডভান্স কোর্স কৃতিত্বের সাথে শেষ করেন এবং উডব্যাজ। পার্চমেন্ট প্রাপ্ত হন। ১৯৯৭ সালে যশাের টি, টি কলেজ থেকে উচ্চতর দ্বিতীয় শ্রেণীতে বি, এড এবং ২০০৩ সালে এম, এড (প্রশাসন) শ্রেণী সমাপ্ত করেন। তার অনেক লেখা স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৪ সালে তাঁর পিতা লােকান্তরিত হলে তিনি চট্টগ্রাম থেকে যশাের শাহীন কলেজে বদলী হন। তিনি এ পর্যন্ত বহু বই লিখেছেন এবং বর্তমানেও লিখছেন। ১৯৬৬ সালে কালীপূজাকে কেন্দ্র করে পূজার রাতের কিছু ঘটনা এবং পূজার তিন দিন পরের ঘটনায় মূর্তি পূজার অসারতা সম্পর্কে মনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যায়। যার কারণে তিনি সাকার উপাসনা সম্পূর্ণ ত্যাগ করেন এবং একমেবাদ্বিতীয়াম ব্রহ্ম এই চেতনায় পরিচালিত হন। কালীপূজার ঐ রাতকেই তার জীবনে বেদজ্ঞানের বোধনের রাত বলা যেতে পারে। বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং বহু প্রকার ধর্মগ্রন্থ পড়ে তিনি বুঝতে পারেন পবিত্র বেদ, উপনিষদ এবং গীতার আলোক ছাড়া হিন্দু সমাজের মধ্যকার বিভেদ, বৈষম্য, জড়পূজা, বর্নপ্রথা, ছুৎমর্গ, ব্রাহ্মণ্যবাদ, জাতভাগের বিষবাষ্প দূর করা যাবে না। কিশোর বয়স হতেই তিনি বিভিন্ন ধর্ম সভায় ঘন্টার পর ঘন্টার বক্তব্য রাখতেন। ১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাসে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার আন্তর্গত পাটকেলঘাটার কাছে মশাডাঙ্গা গ্রামের বেদজ্ঞ পন্ডিত বেদোপদেশক বিধুভূষন দেববর্মন মহাশয়ের নিকট চৌদ্দ দিন থেকে বিক্ষিপ্ত প্রশ্ন করে পবিত্র এক ঈশ্বরবাদের জ্ঞান এবং ধর্মের নামে সকল প্রকার ভণ্ডামি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা লাভ করেন। সত্য কথা বলতে কি সুভাষ শাস্ত্রীর কিশোর মনে বিধুভূষণ মহাশয় বেদের হোমানল প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন। এর পর ১৯৮৩ সালের ৬ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সকাল ৯ ঘটিকায় কলিকাতার বেদজ্ঞ পণ্ডিত ও দার্শনিক আচার্য প্রিয়দর্শন সিদ্ধান্ত ভূষণের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন।




    দীক্ষা সামাপনান্তে গুরুর নিকট "প্রতিজ্ঞা করেছিলেন" ধর্মের নামে সকল ভণ্ডামীর  মূলোৎপাটন করবেন , বেদ বানী প্রচারে জীবন উৎসর্গ করবেন এবং বৃহত শূদ্র সমাজের অধিকার আদায় করে ছাড়বেন। ১৯৮৫ সালে সানাতন ধর্মের পবিত্র বেদের বানী প্রচার করার জন্য তিনি "বাংলাদেশ বৈদিক সমাজ়" যশোরে গঠন করেন যা আজ সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিন বার বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আংশ নেন। ছাত্র জীবন থেকেই শোষিত, বঞ্চিত, ধর্মহারা এবং সাধারণ মানুষের মনের কথা বলার জন্য বর্নবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দ্বারা তিনি বহুবার ঘেরাও এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। বর্ণবাদী ও সম্প্রদায়বাদীরা তাকে বহু স্থানে বেদ প্রচারে বাধা দিয়েছেন। কিন্তু তারা সুভাষ শাস্ত্রীর সাথে যুক্তিতর্কে বেশিক্ষন টিকতে পারেন নাই। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক।


    আচার্য সুভাষ শাস্ত্রীর বিনম্র নিবেদনঃআমি দীর্ঘ ৪৮ বছর ব্যাপী পবিত্র বেদ,উপবেদ, উপনিষদ এবং গীতার অমৃত বাণী প্রচার করতে গিয়ে গবেষণা করে দেখেছি যে, হিন্দু জনসমাজে শতকরা ৯৮ভাগ মানুষ পবিত্র বেদ কখনো চোখেই দেখেন নি, শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ একটি বেদমন্ত্র বলতে পারেন না বা বেদমন্ত্রের অর্থ জানেন না, শতকরা ৯০ভাগ মানুষ পবিত্র গীতার শ্লোক জানেননা বা একটি শ্লোক পাঠ করতে বললে উচ্চারণ কিম্বা অর্থ কোনটিই সঠিক ভাবে পারেন না। কিছু লোক আছেন যাঁরা গীতাপড়েন ও মানেন বলেন এবং মাঝে মাঝে‘হরে কৃষ্ণ’ বা ‘রাধাকৃষ্ণ’ বুলি আওড়ান,কিন্তু তাঁরা কেউ গীতার একটি শ্লোকও হৃদয়ে ধারণ বা পালন করেন না। অথচ খুব জোরেসোরে ‘গীতা গীতা’ এবং ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ’করেন। মহাত্মা, ধর্মপ্রাণ, নীতিবাদী,শাস্ত্রজ্ঞানী, পণ্ডিত, পবিত্র সাধুব্যক্তি বর্তমানে নেই বললেই চলে।অনেক মূর্খ হিন্দুকে দেখেছি, গীতায় মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মূর্তির আসনে গীতা রেখে তৃপ্তি পান এবংমৃতব্যক্তির বুকের উপরও গীতা রাখেন।বেশিরভাগ তথাকথিত ধর্মপ্রচারক ধর্মের নামাবলী গায়ে জড়িয়ে ধর্মব্যবসায়ী হনএবং ঈশ্বরকে বেচাকেনা করেন। মালা,তিলক, গলায় পৈতা এবং ধর্মীয় লেবাস এমনভাবে শরীরে ধারণ করেন যে, দেখলে মনে হয় বড় সাধু। কিন্তু আসলে এরা প্রতারক ও দানব। মিথ্যাচার, পাপাচার এবং ধর্মের নামে ভণ্ডামি করা এদেরজাত স্বভাব। নিরাকার ব্রহ্মের স্বরূপকে বহু দূরে রেখে হরেক রকমের মূর্তির প্রচার এবং জন্ম নেওয়া মানব ভগবানের প্রচার করেন, ধর্মকে বিক্রয় করেন। শতকরা ৯৮ ভাগ হিন্দু উপাসনা, ধ্যান, প্রার্থনা,হোমযজ্ঞ, অষ্টাঙ্গ যোগসাধনা মোটেই করেন না। পবিত্র বেদে এবং গীতায় ধর্মের যে বিধান রয়েছে তা তাঁরা মানেন না। বর্তমানে ধর্মের নামে চলছে রাতের অন্ধকারে নাচানাচি, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কোলাহল, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা যেগুলো বহিরাচার ওতামসিক আচার। পবিত্র বেদ, উপনিষদ ও গীতার মর্মবাণী প্রচারের বিরুদ্ধে চলছে পৌরাণিক বহিরাচার ও কদর্য তামসিক ভণ্ডামি। হিন্দু সমাজ একেশ্বরের উপাসনা না করে শত শত মূর্তি ভগবানে, ৩৩ কোটিদেব-দেবী এবং নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া মানব ভগবানের পূজা করছে। এসব হিন্দুদের দেখলে খুব কষ্ট হয়। তাই আমার বিনম্র নিবেদন, আসুন, আমরা সকলে পবিত্র বেদ, উপনিষদ ও গীতার মর্মবাণী হৃদয়ে ধারণ করি এবং আলোকিত শুদ্ধাচারী মানুষ হই। যারা ধর্মের নামে ভণ্ডামি করেন, ঈশ্বরকে যারা বিক্রয় করেন,সেসকল পাষণ্ড ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের সমূলে বিনাশ করি। পবিত্র, শাস্ত্রজ্ঞানী ওপণ্ডিত ব্যক্তিকে গুরু করি, কিন্তু কখনোই ভেড়ার পালের মত মূর্খ গুরুর পিছনে দৌড়াদৌড়ি করা নয়। ধর্ম মাথা উঁচু করে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে শেখায়, কখনোই দাস হতে শেখায় না।

    বিনম্র নিবেদনে-

    আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী,
    প্রধান ধর্মযাজক ও সভাপতি,
    বাংলাদেশ বৈদিক  আর্য সমাজ।




    বাংলাদেশ বৈদিক  আর্য সমাজ-এর নিবেদন:




    আচার্য সুভাষ শাস্ত্রীর হিতকথাঃ

    আলোকিত ও শুদ্ধাচারী জীবনের জন্য-

    • মিথ্যা কথা বলা মনেপ্রাণে ত্যাগ করুন। সত্য কথা বলতে সচেষ্ট হউন।
    অসৎ আয় দ্বারা খাদ্য গ্রহণ এবং ভোগ-বিলাসিতা হতে দূরে থাকুন।
    • জীবনে কারো উপকার করতে না পারলেও অপকার করবেন না।
    • জ্ঞান সাধনায় মৃত্যু পর্যন্ত রত থাকুন। জ্ঞান সাধনা মানব জীবনের আলোক।
    • সংযম সাধনা হোক আপনার জীবনের অলংকার। সংযমী মানুষ সুমহান।
    • ষড়রিপুর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকুন। ছয়টি রিপু মানুষকে ধ্বংস করে।
    • ধর্মের দশ লক্ষণ পালনে আত্মনিবেশ করুন।
    • মাতা-পিতাকে পার্থিব জগতের প্রধান এবং প্রথম গুরু ভাবতে শিখুন।
    • সুন্দর ও পবিত্র কর্মপ্রবাহের মাঝে রত থেকে জীবনকে আলোকিত করুন ও ঈশ্বরে আত্মসমর্পণ করুন।মানব জীবন নষ্ট হওয়ার কারণ-
    • অর্থের কুপ্রভাব মানবজীবনকে কলুষিত ও দূষিত করে।
    • ক্ষমতার লোভ ও অপব্যবহার মানুষকে অমানুষ এবং জানোয়ারে পরিণত করে।
    • অসংযমী জীবন ও জ্ঞানলাভে অনীহা মানুষকে মহামূর্খ করে।
    • সীমাহীন লোভ ও পরশ্রীকাতরতা মানুষের দেহ ও আত্মাকে নষ্ট করে।
    • মানুষ নিজেই তার পাপাচারপূর্ণ কর্ম দ্বারা তার মানবীয় গুণাবলী নষ্ট করে।
    • দয়া, মায়া, জীবে প্রেম, মানবতা ও মনুষ্যত্বহীন মানুষকে পশুর দলে ফেলা যায়।

    ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে সাতটি দোষ- 
    • অলসতা
    • শিক্ষালাভে শ্রদ্ধা-ভক্তিবোধ না থাকা
    • কামকথা (যৌন আচরণ)
    • মাদক গ্রহণ
    • জ্ঞানলাভে অনীহা
    • সৎ ও সুন্দর পথে পরিশ্রমী না হওয়া
    • অসংযমী জীবন।

     মাতৃজাতির প্রতি অনুরোধ-
    • মিথ্যা কথা মনেপ্রাণে ত্যাগ করুন এবং শুদ্ধাচারী জীবনের পথে আসুন।
    • ছলনাময়ী অবস্থা আপনার জীবনকে কলুষিত ও দূষিত করে।
    • কুটনীপনা মনপ্রাণ হতে ধুয়ে ফেলুন এবং সহজ-সরল জীবনযাপন করুন।
    • স্বার্থপরতা ও পরশ্রীকাতরতা হৃদয় হতে ঝেড়ে ফেলুন।• অসংযমী জীবন এবং ভোগ-বিলাসিতা হতে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসুন।
    • আদর্শ মাতৃত্বের জীবন গ্রহণ করুন, নোংরা মায়ের আচরণ মন হতে ধুয়ে-মুছে ফেলুন।
    • সুবিধাবাদী জীবন ঘৃণা করুন ও হিংসুটে মনোভাব ত্যাগ করুন।
    • মানবসমাজকে শুদ্ধাচারী ও আলোকময় করতে আপনারাই প্রথম শিক্ষক।
    • ধর্ম ও ঈশ্বরীয় জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে আপনারাই প্রধান পুরোহিত।

    নারী চরিত্র দূষণের কারণ-
    • মাদক গ্রহণ
    • চরিত্রহীন কোন মানুষের কাছ থেকে ঋণ বা সাহায্য গ্রহণ
    • ভণ্ড গুরু, সাধু, গোঁসাই, পুরোহিত ও ধর্মযাজকের নিকট ধর্মকথা শুনতে যাওয়া
    • অপরের বাড়িতে রাত্রিযাপন করা
    • অশালীন বস্ত্রাদি পরে বিচরণ করা
    • ধর্মানুষ্ঠানের নামে রাত্রে বিভিন্ন স্থানে গমন করা।

    বিনম্র নিবেদনে-
    আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী,
    সভাপতি, বাংলাদেশ  বৈদিক  আর্য সমাজ।
    যোগাযোগ করুনঃ ০১৭১৬৮৮৭৫৫৭


    আর্য সমাজ  & বাংলাদেশ  বৈদিক  আর্য সমাজ:

    বাংলাদেশ বৈদিক  আর্য সমাজ মূলত  দয়ানন্দ সরস্বতী  প্রতিষ্ঠত আর্য সমাজের  আদর্শ নিয়ে গঠিত।


    আর্য সমাজ (Sanskrit ārya samāja आर्य समाज "Noble Society"): হিন্দু সংস্কার আন্দোলনের জন্য স্বামী দয়ানন্দ কর্তৃক ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সনাতন ধর্মীয় সংগঠন। তিনি একজন বেদ প্রচারক সন্ন্যাসী ছিলেন। তিনি ব্রহ্মচর্যের আদর্শের উপর জোর দিয়েছিলেন।
                                             The Official Flag & Symbol of Arya Samaj

    বৈদিক বিদ্যালয়:১৮৬৯ থেকে ১৮৭৩ এর মধ্যে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ভারতে তাঁর প্রথম সংস্কার প্রচেষ্টা চালান। এই প্রচেষ্টা ছিল মূলত “বৈদিক বিদ্যালয়” বা “গুরুকূল” স্থাপনের লক্ষ্যে যা শিক্ষার্থীদের বৈদিক জ্ঞান, সংস্কৃতি ও ধর্ম সম্পর্কে গুরুত্ব প্রদান করে। প্রথম বিদ্যালয়টি ১৮৬৯ সালে ফররুখাবাদে প্রতিষ্ঠিত হয় মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে। প্রারম্ভিক সাফল্যের দরুন মির্জাপুর(১৮৭০), কাসগঞ্জ (১৮৭০), চালিসার (আলীগড়) (১৮৭০) এবং বারাণসী (১৮৭৩)-তে দ্রুত বেশ কিছু বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বৈদিক বিদ্যালয় সমূহ মূলত স্বামী দয়ানন্দের সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারের প্রায়োগিক প্রয়াসকেই তুলে ধরে। সেগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল। একদিকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ঐতিহ্যগত মূর্তিপূজা করতে পারত না, বরং তাদের প্রতিদিন দুবার সন্ধ্যা বন্দনা ও অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করতে হত। তারা ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ। অন্যদিকে তাদের সমস্ত খাবার, বাসা, পোশাক এবং বই বিনামূল্যে দেয়া হত এবং অ-ব্রাহ্মণরাও সংস্কৃত পাঠ করতে পারত। তাদেরকে প্রধানত বেদ শিক্ষা দেয়া হত। বৈদিক বিদ্যালয়সমূহ দ্রুতই বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়।



    দয়ানন্দ সরস্বতী (গুজরাটি દયાનંદ સરસ્વતી): (১২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৪, টঙ্কর -৩০ অক্টোবর ১৮৮৩, আজমির) একজন গুরুত্বপূর্ণ সনাতন ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক এবং আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন । পশ্চিম ভারতের কাথিয়াওয়াড়ের মোরভি শহরে এক ধনাঢ্য নিষ্ঠাবান সামবেদী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর গার্হস্থ্যাশ্রমের নাম মূলশংকর । বাল্যশিক্ষা পিতার কাছেই লাভ করেন । ইংরাজি শিক্ষার সুযোগ না হওয়ায় প্রথম থেকেই তিনি সংস্কৃতশাস্ত্র উত্তমরূপে আয়ত্ত্ব করেন এবং ধীরে ধীরে সমগ্র যজুবেদ ও আংশিকভাবে অপর তিন বেদ, ব্যাকরণ, তর্ক ও দর্শনশাস্ত্র, কাব্য, অলংকার, স্মৃতি প্রভৃতিতে যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেন ।



    আর্যসমাজের তথা বাংলাদেশ বৈদিক  আর্য সমাজ-এর মূলনীতি:

    • সব সত্যবিদ্যা এবং যা পদার্থবিদ্যা দ্বারা জানা যায় সেসবের আদিমূল পরমেশ্বর।
    • ঈশ্বর সচ্চিদানন্দস্বরূপ, নিরাকার, সর্বশক্তিমান, ন্যায়কারী, দয়ালু, অজন্মা, অনন্ত, নির্বিকার, অনাদি, অণুপম, সর্বাধার, সর্বেশ্বর সর্বব্যাপক, সর্বান্তর্যামী, অজর, অমর, অভয়, নিত্য, পবিত্র ও সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র তাঁরই উপসনা করা উচিত।
    • বেদ সব সত্যবিদ্যার পুস্তক, বেদের পঠন-পাঠন, শ্রবণ ও শ্রাবণ সবল আর্যের পরম ধর্ম।
    • সত্য গ্রহণে ও অসত্য পরিত্যাগে সদা উদ্যত থাকবে।
    • সব কাজ ধর্মানুসারে অর্থাৎ সত্য ও অসত্য বিচারপূর্বক করা ।
    • সংসারের উপকার করা এই সমাজের মুখ্য উদ্দেশ্য অর্থাৎ শারীরিক, আত্মিক ও সামাজিক উন্নতি করা।
    • সকলের সঙ্গে প্রীতিপূর্বক ধর্মানুসারে যথাযোগ্য ব্যবহার করা ।
    • অবিদ্যার নাশ ও বিদ্যার বৃদ্ধি করা ।
    • প্রত্যেককে নিজের উন্নতিতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়, কিন্তু সবার উন্নতিতে নিজের উন্নতি ভাবা ।
    • সব মানুষকে সামাজিক সর্বহিতকারী নিয়ম পালনে পরতন্ত্র এবং প্রত্যেক হিতকারী নিয়মে সবাইকে স্বতন্ত্র থাকা ।


    বিনম্র নিবেদনে-
    আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী,
    সভাপতি,বাংলাদেশ  বৈদিক  আর্য সমাজ।
    যোগাযোগ করুনঃ ০১৭১৬৮৮৭৫৫৭