• সর্বশেষঃ

    পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ২

    তারপর দেখুন -
    কৃষ্ণ বিক্ৰীড়িতং বীক্ষ্য মুমুর্হঃ খেচর স্ক্রিয়। 
    কামাদিতাঃ শশাংকশ্চ সগণাং বিস্মিতো অভবৎ।।১৯।। 
    কৃত্ব তাবস্তমাত্মানং য়ারতীর্গোপয়োষিতঃ। 
    রেমে স ভগবাংস্তাভিরাত্মারামো অপি লীলয়া।।২০।। 
    তাসাংমতি বিহারেণ শ্ৰৌতানাং বদনানিসঃ। 
    প্রামৃজত করুণঃ প্রেমণাশংতমেনাংগ্বপাণিনা।।২১।।
     (ভাগবত, স্কন্দ ১০, অধ্যায় ৩৩) 
    অর্থ- কৃষ্ণের রাসের কামক্রীড়া দেখে দেবতাদের পত্নীরাও কামার্তা হয়ে গেলেন। কামদেবের উগ্র ইচ্ছা সঞ্চারিত হলে তাদের শরীর কামরসে আর্দ্র অর্থাৎ সিক্ত হয়ে গেল। চন্দ্র, তারা ও গ্রহ সহ হতভম্ব হয়ে গেল। যতজন গোপী ছিল কৃষ্ণ তত রূপ ধারণ করে তাদের সঙ্গে রমণ করলেন। যখন রতি রমন করার ফলে তারা সকলে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে গেল (এবং তাদের ঘাম বেরিয়ে এল) তখন কৃষ্ণ তার কোমল হস্ত দ্বারা সেই সব প্রেমিকাদের (গোপীদের) মুখ মুছে দিলেন। 

    তারপর দেখুন -
    নদ্যাঃ পুলিনমাবিশ্য গোপী মির্হিম বালুকম্। 
    রেমে তত্তরালানন্দ কুমুদামোহা বায়ুনাঃ।।৪৫।। 
    বাহু প্ৰসার পরিরমম্ভ কলারকরু, নীবীস্তনালভননৰ্মনখাপাতৈঃ 
    ক্ষে্বল্যাবলোক হসিতৈব্রজ সুন্দরীণাং, সত্তযম্ভয়ন্ রতিপতি রময়াং শ্চকার।।৪৬।।
    (ভাগবত স্কন্দ ১০ অধ্যায় ২৯) 
    অর্থ- কৃষ্ণ যমুনার কর্পূরসমান উজ্জ্বল বালুতটে গোপীদের নিয়ে উপস্থিত হলেন। এই স্থান জলতরঙ্গে শীতল ও কুমুদিনীর সুগন্ধে সুবাসিত ছিল। সেখানে কৃষ্ণ গোপীদের সঙ্গে রমণ (ভোগ) করলেন। বাহু বিস্তার করে আলিঙ্গন করা, গোপীদের হাতে চাপ দেওয়া, তাদের শিখা ধরা, উরুতে হস্তাবলেপ, সায়ার দড়ি ধরে টান দেওয়া, স্তন (ধরা), রসিকতা করা, নখ দিয়ে অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করা, বিনোদপূর্ণ তির্যক দৃষ্টি দিয়ে দেখা, ত্বং মৃদু হাসি হাসা এবং এই সব ক্রিয়া দ্বারা নবযৌবনা গোপীদের মধ্যে কামদেবকে খুব জাগ্রত করে তাদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাতে রমণ (বিষয় ভোগ) করলেন।
    এর মধ্যে কামদেবকে জাগ্রত করে রমণ করা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রাসের অন্তরালে বিষয়ভোগ করা হতো।

    নৃত্যন্তী গায়তী কাচিৎ কুজন্নুপুর মেখলা। 
    পার্শ্বচ্যুত হস্তাজ্বং শ্রান্তাধাৎ স্তনয়ানো শিবম্।।
    (ভাগবত স্কন্দ ১০, অধ্যায় ৩৩, শ্লোক ১৪)
    অর্থ - কোন গোপী নুপূর ও মেখলার ঘুঙুরে ঝঙ্কার তুলে নৃত্য ও গায়ন করছিল। অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে গেলে, পাশ্ববর্তী দন্ডায়মান শ্যাম সুন্দর কৃষ্ণের শীতলকরকমল নিজের স্তনের উপর রাখল (অর্থাৎ বক্ষ মর্দন করিয়ে ক্লান্তি দূর করল)।
    এ সব কী করে সম্ভব হলো? কেননা ‘তমেব পরমাত্মানং জার বুদ্ধিয়াপি সংগতা’ (ভাগবত সকন্দ ১০, অ ২৯, শ্লোক১১)
    অর্থাৎ - শুধু এ কথা নয় যে, রতি যুদ্ধ বিশারদ কৃষ্ণের(তাদের কল্পীত কৃষ্ণ) গোপীদের প্রতি এমন ভাব ছিল বরং গোপীদেরও কৃষ্ণের প্রতি ব্যভিচার ভাব ছিল। তার জন্য একটু আরও স্পষ্ট প্রমাণ দেখুন। যা বর্তমান পৌরাণিক সনাতন ধর্মে রাম ও কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অবতার মানা হয়েছে। বিষ্ণুর অবতার এই পৃথিবীর উপরে ব্যভিচারের জন্য হয়ে থাকে। কৃষ্ণ রূপে বিষ্ণু কেবল তার ব্যভিচার লিপ্সা চরিতার্থ করার জন্য এসেছিলেন। নিম্ন প্রমাণ দ্বারা এটি স্পষ্ট। 
    দেখুন -

    বিষ্ণুর অবতারের রহস্যঃ 
    ভাতৃণাং দৈত্য মুখ্যানাং হতানাং দারুণ য়ুধি।
    স্ত্রিয়ো হৃত্বা তু পতালে চিক্ৰীড় চ মুমোদ চ।। 
    ত্রেতাযুগে রামরুপি বিষ্ণু সম্প্রোপ্য জানকী। 
    নো তৃপ্তঃ স্ত্রী বিলসানাং বিত্তস্য চ সুতস্য চ।। 
    রৈব সংপ্রেক্ষণাশ্চাপি প্রোষিতস্য স্ত্রিয়ামপি। 
    তস্মাৎ কলিযুগে ভূমৌ গ্রহীতা জন্ম কেশব।। 
    বাসুদেবস্য দেবক্যাঁ মথুরায়াং মহাবলঃ। 
    বালস্তু গোপ কন্যাভির্বনে ক্রীড়া চকার সঃ।। 
    দশ লক্ষাণি পুত্রানাং গোপালনং সসৰ্জ হ। 
    ততন্ত যোবনা ক্রোঁতো রুক্মিনী প্রদদর্শ হ।। 
    বিবাহয়িত্বা পুত্রাংশ চ প্রদ্যুম্না দদাশ্চ নির্য়মে। 
    তথাপি নরক দৈত্যং প্রাগ্জ্যোতিষমতিং বলাৎ।। 
    হৃত্বা স্ত্রীণাং সহস্রাণি ষোড়শৈব জহার সঃ। 
    তপ্সাং রতি ফলং ভুক্তা পুত্ৰাণাং নবতিং তথা।। 
    সহস্রাণি সসর্জাসু মৎস্যে চাদৈ মহাদ্ভুতম্। 
    স্ত্রীণাং তথাপি নো তৃপ্তো দিব্যানাং তুরে তের্য়দা।। 
    তথঃ রাখা স্ত্রিয়ং কাচিন্ন ধৈয়া দধর্ষয়ৎ। 
    তথাপি পরনারীণাং লম্পটো নিত্যমেবহি।।
     (শিবপুরাণ ধর্ম সংহিতা অধ্যায় ১০)  

    অর্থ- ভগবান বিষ্ণু রাক্ষসদেরকে বধ করে তাদের স্ত্রীদের পাতালে নিয়ে গেলেন তথা তাদের সঙ্গে ক্রীড়া করলেন এবং পরিহাস করলেন। ত্রেতা যুগে রাম জন্মগ্রহন করে জানকীকে বিয়ে করলেন কিন্তু স্ত্রী-বিলাসে তৃপ্ত হতেন না এবং বনেযাওয়ার কারনে গর্ভাধানও যথেষ্ট হতে পারেনি। এইজন্য কলিযুগের প্রারম্ভেই কৃষ্ণ আবতার রূপ ধারণ করে কিশোরাবস্থায় গোপীদের সঙ্গে ক্রীড়া (ভোগ) করে দশ লক্ষ পুত্র উৎপন্ন করলেন। তবুও স্ত্রী ভোগে তৃপ্তি না হয়ে যুবাবস্থায় রক্মিনী সহ বিবাহ কবে প্রাদুন্মাদি সন্তান উৎপন্ন করলেন। তবুও তৃপ্ত না হয়ে প্রাগ্জ্যোতিষের রাজা নরককে হত্যা করে নব্বই হাজার নারী এনে তাদের সঙ্গে ভোগ করে নব্বই হাজার পুত্র উৎপন্ন করলেন। তবুও তুপ্তি হলোনা তাই রাধা নামক মহিলাকে ধরে আনলেন। এত স্ত্রী ভোগ করা সত্তেও ভগবান নিত্যই নারী লম্পট।

    এই প্রমাণ দ্বারা স্পষ্ট যে, পুরাণানুযায়ী বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণ কেবল নারীদের সঙ্গে ব্যাভিচার করার জন্য হয়েই সঙ্গে রাত্রে ক্রীড়া করা, তাদের বক্ষ দলন করা, তাদের সায়ার দড়ি খোলা, তাদের মধ্যে কামভাব জাগ্রত করে তাদেরকে ভোগ করা এবং দশলক্ষ পুত্র সেই গোয়ালিনীদের দ্বারা বনে উৎপন্ন করা, ষোল হাজার নারী দুষ্কর্ম করার জন্য ধরে আনা এবং বিষয় ভোগ দ্বারা নব্বই হাজার পুত্র উৎপন্ন করার কী প্রয়োজন থাকতে পারে ? ক্রীড়া, বিহার, লাম্পট্য, রতিফল ইত্যাদি শব্দের অর্থ স্পষ্ট রূপে কেবল বিষয় ভোগ করাই বুঝায়। কৃষ্ণের বিশেষণ জার শিখামণি অর্থাৎ ব্যভিচারীদের শিরোমণি পুরাণে থাকায় শত প্রতিশত সত্য মাধবাচার্যের গণনাই বা কী, ভারতের সমস্ত পৌরাণিক পন্ডিত এক জোট হয়েও এর অন্যরকম অর্থ করতে পারেন না। এটা আমরা দাবির সঙ্গে বলতে পারি। ভাগবত গীতার অষ্টাদশ অধ্যায়ে কৃষ্ণকে যোগেশ্বর বলা হয়েছে অথচ সনাতনী ধর্মগ্রন্থ পুরাণে তাকে ভোগেশ্বর প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। হাজার বার ধিক্কার এমন নোংরা সনাতন ধর্মকে!

    পাঠকরা উপরে দেখেছেন যে, সনাতন ধর্মে অবতার বিষ্ণুর হয়ে থাকে এবং তাও ব্যভিচারের ভাবনা সহ। মানব কল্যাণের ভাবনা নিয়ে নয়। শিব পুরাণের প্রমাণ দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়েছি এই বিষ্ণু কোথায় থাকে আপনাদেরকে সেটা বলছি।



    পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ১

    পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ২

    পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ৩

    পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ৪

    পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ৫