পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ৪
কৃষ্ণের ত্রিশ কোটি স্ত্রী ছিল –
এটা “ত্রিংশৎকোটি চ গোপিনাং গৃহীত্বা ভর্তরাজ্ঞয়া’ ব্রহ্মবৈবর্ত
পুরাণ উত্তরার্ধ অধ্যায় ১১৫ শ্লোক ৮৭তে পরিষ্কার লেখা আছে। যদি পেঁচা দিনেও দেখতে
না পায়, তাহলে সূর্যের কী দোষ? মনে হচ্ছে মাধবাচার্য মহাশয় ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের
আকারও দেখেননি। যদি পাঠ করতেন তাহলে এই প্রমাণ তিনি প্রমাণস্বরূপ পেয়ে যেতেন। বেচারা
এমনিতে১১১ নং-র তিলক লাগিয়ে মেকি সেজে পাষন্ডাচার্য হয়ে বসে আছেন। কুত্তার কথা উল্লেখ
করে আমরা মাধবাচার্যের সেই মিথ্যা দাবির জবাব দিলাম যেখানে তিনি লিখেছিলেন কুজ্বার
সঙ্গে কোন দুরাচারের সম্পর্ক ছিল না। কৃষ্ণ ডাক্তারী করে চিবুক ধরে এক ঝটকায় কুক্তার
কুঁজ দূর করে দিয়েছিলেন। এখন রাধা কে ছিলেন ? এই প্রশ্ন সম্বন্ধে তাঁর পাষন্ডগিরির
নিরাকরণ করছি। আমাদের বিজ্ঞাপনে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ দিয়ে এই প্রতিপন্ন করেছিলাম যে,
রাধা কৃষ্ণের কন্যা ছিল, রায়ণের সঙ্গে বিবাহ হওয়ায় তিনি কৃষ্ণের পুত্রবধূ ছিলেন।
কেননা রায়ণ গোলোকে কৃষ্ণের অংশে উৎপন্ন হওয়ায় সেই দিক দিয়ে রায়ান কৃষ্ণের পুত্র
ছিল। রায়াণ কৃষ্ণের মাতা যশোদারভাই হওয়ায় কৃষ্ণের মামা হতো। সুতরাং এই সম্পর্কে
রাধাকৃষ্ণের মামি হলো। আমাদের এই লেখা পাঠ করে মাধবাচার্যের মাথা ঘুরতে থাকে। উন্মত্তের
মতো প্রলাপ বকে সাফাই দিতে বসলেন এবং নিজের পুস্তকের ১৯ নং পৃষ্ঠায় আমাদের প্রমাণগুলি
স্বীকার করে তিনি লিখলেন যে, আসল রাধা অন্তর্হিত হয়েছেন, শুধু ছায়ারূপ রাধা ছেড়ে
গেছেন। তাঁর রায়ণের সঙ্গে বিবাহ হয়। এই পাগলামিকে তাঁর মতো কেউ বুদ্ধিহীনই মানতে
পারেন যে, রাধা অন্তর্হিত হয়েছেন। রাধা যদি অন্তর্হিত হয় তবে তাঁর বা ছায়ারূপ রাধার
আত্মা একছিল অথবা ভিন্ন। যদি এক থাকে তাহলে আত্মার দুই টুকরা হওয়া গীতা বা কোন শাস্ত্র
মানে না। যদি ভিন্ন থেকে থাকে তাহলে এটা বলা মুর্খতা যে, নতুন রাধা পুরানো রাধার ছায়া
ছিল। কী জান সনাতনী পন্ডিতরা তাদের বুদ্ধি কোথাও বন্ধক দিয়েছে কিনা যে, এই সমস্ত গাঁজাখোরির
অসঙ্গত, অসম্ভব কথার উপর বিশ্বাস করেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, কলাবতী গৰ্ভাশয় থেকে
বায়ু বেরিয়ে গেল এবং পঞ্চতত্ত্ব ছাড়াই কেবল বায়ু থেকে রাধা নামের নারী সৃষ্ট হলো।
সেইজন্য আমরা বলে থাকি যে, পুরাণ রচনাকারী এবং তার উপর বিশ্বাস স্থাপনা কারী উভয়েই
অজ্ঞানী এবং ভাঙের নেশায় মগ্ন থাকে। মাধবাচার্য ১৮ পৃষ্ঠায় লিখছেন যে, রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের বিবাহ
হয়েছিল এবং ২২ পৃষ্ঠায় লিখছেন যে, রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের কখনও বিয়ে হয়নি। তিনি (রাধা)
আজন্ম ব্রহ্মচারিণী ছিলেন। উভয়ের মধ্যে কোনটা ঠিক-তিনিই জানেন। তারপর লিখছেন
যে, রাধা প্রকৃতিকে বলা হয়। পাঠক রাধার সঙ্গে কৃষ্ণর ব্যভিচারের কাহিনী নিম্নে পাঠ
করুন এবং বিচার করুন যে, রাধা প্রকৃতি না ব্যভিচারিণী স্ত্রী ?
রাধার সহিত কৃষ্ণের রমণঃ
একদা
কৃষ্ণ সহিতো নন্দৌ বৃন্দাবনং য়য়ৌ।
এতস্মিন্নংতরে
রাধাজগাম কৃষ্ণ সন্নিধিম্।।
তমুবাচ
হরিস্তত্র স্মেরণন সরোরুহাম্।
আগচ্ছশয়নে
সাধ্বি কুরুবক্ষঃ স্থলেহিমাম্।।
তিষ্ঠত্যহং
শয়ানস্ত্বং কথাভির্য়ৎক্ষণ গতম্।
বক্ষস্থলে
চ শিরে দেহিতে চরণাম্বুজম্।।
প্রণম্য
শ্রীহরিং ভক্তয়া জগাম শয়নং হরে।
কৃষ্ণ
চর্বিত তাম্বুলং রাধিকায়ৈ মুদাদদৌ।।
রাধা
চর্বিত তাম্বুলং য়য়াচে মধুসূদনঃ।
করেবৃত্ব
চ মাং কৃষ্ণস্থাপয়ামাস বক্ষসি।
চকার
সিথিল বস্ত্রং চুম্বনং চ চতুর্বিধম্।
বভূব
রতি যুদ্ধেন বিচ্ছন্ন ক্ষুদ্রঘটিকা।।
চুম্বনেনৌষ্ঠ
রাগশ্চং হ্যাশ্লেষণ চ পত্রকম্।
পুলকাংকিত
সর্বাঙ্গী বভূব নব সঙ্গমাৎ।।
মুছামবাপ
সারাবুবধে ন দিবানিশম্।
প্রত্যগেনেব
প্রত্যঙ্গমগেতাঙ্গ সমাশ্লিষৎ।।
শঙ্গারষ্টবিধং
কৃষ্ণশ্চকার কাম শাস্ত্রবিৎ।
পুনস্তাং
চ সমশ্লিষ্যসস্মিতাংবক্রলোচনাম্।।
ক্ষতিবিক্ষত
সর্বাংগী নখ দন্তৈশ্যকার হ।
বভূবশব্দস্তত্রৈব
শৃঙ্গার সমরোদবঃ ।।
নির্জনে
কৌতুকোৎ কৃষ্ণঃ কামশাস্ত্রবিশারদঃ।
নিবতে
কাম যুদ্ধে চ সস্মিতা বক্ৰলোচনা।
নিত্য
নক্তং রতি তত্র চকার হরিণা সহ।।
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ
কৃষ্ণ জন্ম খন্ড অ0 ১৫)।
অর্থঃ- একদিন
কৃষ্ণ নন্দ সহ বৃন্দাবন গেলেন। এর মধ্যে রাধা কৃষ্ণের কাছে এসে গেল। সেই কমলমুখীকে
কৃষ্ণ বললেনহে প্রিয়া। পালঙ্কের উপর বসো, আমাকে পার্শ্বে স্থান দাও। তিনি বললেন- আমি
বসে আছি কিন্তু আপনি শায়ান আছেন, ব্যর্থসময় নষ্ট হচ্ছে। আমার পার্শ্বদেশে এবং শিরে
চরণ অর্পণ কর। রাধা কৃষ্ণকে প্রণাম করে কৃষ্ণের পালঙ্কে শয়ন করল। কৃষ্ণ তাঁর চর্বিত
পান রাধাকে দিলেন এবং রাধার চর্বিত পান কৃষ্ণ যাঞ্চা করলেন। কৃষ্ণ রাধার হস্ত ধারণ
করে পার্শ্বদেশে বসালেন। তাঁর বস্ত্র শিথিল করে দিলেন এবং চার প্রকারে চুম্বন করলেন।
রতিযুদ্ধে এক ঘন্টা ব্যতীত হলো। চুম্বনের ফলে রাধার ওষ্ঠের রং এবং অলিঙ্গনের ফলে মেখলা
নষ্ট হয়ে গেল। নব সমাগমে রাধা রোমাঞ্চিত হয়ে পড়লো। তার ফলে রাধা মূর্ছিত হয়ে যায়
এবং দিন-রাত অজ্ঞান অবস্থায় থাকে। উভয়ের অঙ্গের সঙ্গে অঙ্গ এবং প্রত্যঙ্গের সঙ্গে
প্রত্যঙ্গ আবিষ্ট হলো। কামশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণ আট প্রকারে তাঁকে ভোগ করলেন। তারপর
আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে তির্যক দৃষ্টি যুক্ত মৃদু হাস্যরতা রাধাকে নখ ও দন্ত, দিয়ে ক্ষতবিক্ষত
করে দিলেন। কামভোগ সংঘর্ষে অত্যন্ত শব্দ হলো। কামযুদ্ধের সমাপ্তিতে তির্যক দৃষ্টিযুক্তা
রাধা মৃদুমন্দ হাস্য করতে থাকে। সেই রাধা রাত্রে সর্বদা কৃষ্ণের সঙ্গে ভোগ করতেন।
| এই হলো পুরাণের নোংরা কোক্শাস্ত্র। রাধা কৃষ্ণের বাম অঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়েছিল। রাধার
সঙ্গে কৃষ্ণের ব্যভিচারিক সম্পর্ক ছিল, ব্ৰহ্ম বৈবর্ত পুরাণ মান্যকারীকে একথা স্বীকার
করতেই হবে। রাধা একজন নারী ছিল, কৃষ্ণ তাঁকে ব্যভিচার হেতু ধরে আনেন। একথা শিবপুরাণে
উল্লেখিত প্রমাণ দ্বারা প্রতিপন্ন হয়। কৃষ্ণের সঙ্গে গোপীদের ব্যভিচারিক সম্পর্ক ছিল
একথা বিষ্ণুপুরাণ ভাগবত ও শিবপুরাণ দ্বারা স্পষ্ট হয়। পৌরাণিক পন্থাবলম্বী পন্ডিত
সমস্ত ভূমণ্ডলে এক জনও এমন নেই যিনি উপরের প্রমাণগুলি খন্ডন করতে পারেন। রমণ শব্দের
অর্থ আমরা ব্যভিচার প্রতিপন্ন করেছি তা অকাট্য। এখন আর একটা প্রমাণ দেওয়া হচ্ছে যার
ফলে গোপীদের সঙ্গে কৃষ্ণের ব্যভিচার-সম্পর্কের কারণ প্রকটিত হয়ে যাবে। পৌরাণিক পন্ডিতরা
তাঁদের পুরাণের নোংরা নমুনা দেখুন ও লজ্জিত হোন।
পৌরাণিক কৃষ্ণের প্রেমিকা
গোপীরা কারা ছিল ?
পুরা
মহর্ষয়ঃ সর্বে দন্ডকারিণ্য বাসিনঃ।
দুষ্ট্বা
রামং হরিং তত্র ভোক্তু মিচ্ছেৎসুবিগ্রহম্।।৬৪।।
তে
সর্বে স্ত্রীত্বমাপন্নাঃ সমুদ্ভূতাস্তু গোকুলে।
হরিং
সম্প্রাপ্য কামে ন ততো মুক্তা ভবার্ন বাত।।১৬৫।
(পদ্মপুরাণ উত্তর
খন্ড অধ্যায় ২৪৫, কোলকাতা)
অর্থঃ- রামচন্দ্র
দন্ডকারণ্য বনে উপস্থিত হলে তার ১ স্বরূপ দেখে , সেখানকার নিবাসী সমস্ত ঋষি-মুনি তাঁর
সঙ্গে ভোগ করার কামনা করতে থাকে। সেই সমস্ত ঋষিরা দ্বাপরের শেল গোকুলের গোপী হয়ে জন্মগ্রহণ
করে এবং রামচন্দ্র কৃষ্ণ হলেন। তখন সেই সব গোপীরা কৃষ্ণ সহ ভোগ করল। এর ফলে গোপীরা
মোক্ষপ্রাপ্ত হলো। নতুবা অন্যভাবে এই সংসার রূপী ভবসাগর থেকে তাদের মুক্তিও হত না।
সনাতনীরা এইজন্য কৃষ্ণকে গোপীবল্লভও বলেন। তিনি বিষয় ভোগ
করে গোপীদেরকে এই ভবসাগর উত্তীর্ণ করে দিলেন। এই হলো “গোপীবল্লভ রাধেশ্যাম” নামে কীর্তন
করার রহস্য। যদি আজকাল কোথাও এই পৌরাণিক কৃষ্ণ হাজির হয় তবে বেচারা এই কীর্তনপন্থীদেরও
এইধরণের টোটকায় উদ্ধার হয়ে যাবে। দিনরাত “রাধেকৃষ্ণ” বুলি আওড়ানো এই বেচারাদের মুক্তি
হতে পারবেনা। মুক্তির টোটকাও পুরাণে বড় অদ্ভুত এবং অবতারদের কাজ যে, সেই টোটকা প্রয়োগ
করে ভক্তদের কল্যাণ করবেন।
এইজন্য আমাদের এই লিখতে হচ্ছে যে, “রাধা রতি সুখো পেতো’,
‘রাধা কামফল প্রদঃ’ ও ‘রাধালিঙ্গন সংমোহে’ (গোপাল সহস্রনাম) যার আর্থ হলো যে, কৃষ্ণ
রাধাকে আলিঙ্গন করতেন, তাকে কামফল বিয়ানন্দ বা রতিসুখ প্রদান করতেন সর্বথা সত্য কথা।
রতি শব্দের অর্থ এই প্রসঙ্গে বিষয় ভোগ করাই - অন্য নয়। মিথ্যা অভদ্রভাষ্যর আশ্রয়
গ্রহণ করলেই সত্যকে অবদমিত করা যায় না। কেননা পুরাণমতে কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার অবৈধ সম্পর্কছিল,
পুরাণের কাহিনীকে যদি সত্য মানতে হয়। কৃষ্ণ সম্বন্ধে পুরাণের এই লেখাও সর্বথা সত্য
মানতে হবে যে -
সাক্ষাজ্জারশ্চ
গোপীনাং দুষ্ট পর লম্পটঃ।।৬১।।
আগত্য
মথুরা কুজ্বাং জঘান মৈথুনের চ।।৬২।। (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ কৃষ্ণ
জন্মখন্ড উত্তরার্ধ অধ্যায় ১১৫)
অর্থঃ- কৃষ্ণ
গোপীদের জার (ব্যভিচারী) দুষ্ট, অত্যন্ত লম্পট ছিলেন। মথুরায় এসে তিনি অতি মৈথুন করে
কুজ্বাকে মেরে ফেললেন। [ ক্রীড়া, রতি, রমণ, লম্পট ও জার শব্দের অর্থ“ব্যভিচার’- ই
এই স্থলে হবে, এটা আমাদের উপরের লেখা দেখে সত্য প্রতিপন্ন হয়। শূকর অবতারের এই শিষ্য
সনাতন পন্ডিতরা যতই জোর লাগাক না কেন, এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারেনা যে, পুরাণে কৃষ্ণকে
ধূর্ত ব্যভিচারী শিরোমণি মানা হয়েছে অথচ গীতার কৃষ্ণ মহাবিদ্বান, মহাত্মা ও আদর্শ
চরিত্র সম্পন্ন ছিলেন। পুরাণের রাধা, নোংরা অর্থে কৃষ্ণের প্রেমিকা ছিল। যদি কারও পিতা-পিতামহ
দুশ্চরিত্রও থাকে তার যোগ্য সন্তান তার চরিত্রের কলঙ্ক দিকটা লুকিয়ে রাখে। কিন্তু
পৌরাণিক সনাতন ধর্মে নিষ্কলঙ্ক কৃষ্ণ মহারাজের সঙ্গে কলঙ্কিত রাধার নাম যোগ করে এই
সংকীর্তনী কুপুত্র ঢোল-খোল করতাল পিটিয়ে চিৎকার করে বলে যে, আমাদের পূর্বপুরুষ(অবতার)
দুরাচারী ছিল এবং তার এক রক্ষিতা রাখা ছিল, সে গোপীদের (গরু চরাতে যেত কিশোরীরা) সঙ্গে
ব্যভিচার করত। যখন ঘরের লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষকে বদনাম করে তাহলে বিধর্মী খৃষ্টান-মুসলমানাদি
তাদের বদনাম কেন করবে না ? পুরাণে সমস্ত অসঙ্গত কথার প্রাচুর্য। রাধা কৃষ্ণের কন্যা,
পুত্রবধুও মামী এবং সেই রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের ব্যভিচার চলে। ভগবান রামের সঙ্গে ঋষিরা
। ভোগ করার কামনা করে। গোকুলে ঋষিরা গোপী বনে যায়, রামচন্দ্র কৃষ্ণ হয়ে তাদের সঙ্গে
ভোগ করেন এবং এই ভোগ করার ফলে গোপীরা মুক্ত হয়ে যায়। এইজন্য কৃষ্ণকে গোপীবল্লভ বলা
হয়েছে। কেমন ধূর্ততাপূর্ণ কথা বদমাশরা কল্পনা করে লিখেছে, যা পাঠ করে লজ্জা হয়। পৌরাণিক
পন্ডিত মণ্ডল তথা তাদের গুরু পাখন্ড শিরোমণি মাধবাচার্য এই সব কথাকে ঠিক মনে করেন,
আমাদের অভিযোগ শব্দাড়ম্বর দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই সব পুরাণগুলি প্রায়
দুই হাজার বছরের মধ্যে ইংরেজদের আসা পর্যন্ত তৈরী হয়েছে। এটা পুরাণে বর্ণিত ইতিহাস
এবং তার ভাষা শৈলী থেকে সুস্পষ্ট। এর মধ্যে সংযোজন অর্থাৎ প্রক্ষিপ্তের অংশ কম নয়।
ভাগবত মাহাত্ম প্রকরণে অধ্যায় ১ শ্লোক ৩৬-এ লিখিত আছে-
‘আশ্ৰমাঃ ঘরনৈরুদ্বন্তীৰ্থানি সরিস্তথা। দেবতা যতনান্যত্র
দুষ্টর্নষ্টানি ভূরিশঃ”
অর্থাৎ - নারদ বলছেন যে কলিযুগে যবনরা ভারতের নদী, তীর্থও
আশ্রমের উপর অধিকার করে নিয়েছে এবং দেবমন্দিরকে নষ্ট করে দিয়েছে। এই শ্লোক যবন' শব্দ
এসেছে যা নিশ্চিতভাবে মুসলমান রাজ্যকালের পরিচায়ক। কেননা মহাভারতের পরে এমন কোন যবন
জাতি মুসলমান ভিন্ন হয়নি যারা সমস্ত ভারতের মন্দির, তীর্থও আশ্রমের উপর অধিকার করে
তাকে নষ্ট করে দিয়েছে। সুতরাং এই শ্লোক দ্বারা স্পষ্ট যে, এই পুরাণগুলি ভারতে মুসলমান
রাজ্য কায়েম হওয়ার পর তৈরী হয়েছে। এইরকম পুরাণে তামাক পান করার নিষেধ আছে -
ধূম্রপানরত
বিপ্র দান দদাতি য়ো নরঃ।
দাতারী
নরক য়াঁতি ব্ৰহ্মণো গ্রাম শূকরঃ।।
অর্থাৎ - তামাক পানকারী ব্রাহ্মণকে দান দিলে ব্যক্তি নরকে
যায় এবং সেই ব্রাহ্মণ মরে গ্রামের শূয়ার হয়ে যায়। জাহাঙ্গীর বাদশাহ ‘তজোক’ গ্রন্থে লিখছেন যে, ভারতে তামাক, আলুও
কপি জনৈক আমেরিকান পাদরী আকবরের শাসন কালে এনেছিলেন। তখন থেকে এখানেও এর প্রচার ও ফসল
উৎপন্ন হয়। এর আগে এই সব জিনিসগুলি ভারতে হতোনা। সুতরাং তামাকের নিষেধ হওয়ায় স্পষ্ট
যে এই পুরাণ আকবরের পরে তৈরী হয়েছে। এগুলি ঐতিহাসিক তথ্য, কেউ এগুলি অস্বীকার করতে
পারেনা। জল্পন কল্পনা যতই করুক না কেন ?
পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ১
পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ২
পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ৩
পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ৪
পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ৫