• সর্বশেষঃ

    পূরাণের কৃষ্ণ পর্ব - ৫ (শেষ পর্ব)


    পুরাণে ইংরাজী :
    রবিবারে চ সন্ডে চ ফাল্গুনে চৈব ফরবরী।
    ষষ্টিশ্চসিক্সটী জ্ঞেয়া তদুদাহপণ মীদ্ৰশম্।।৩৭।।
    (ভবিষ্য পুরাণ প্রতিসর্গ খন্ড ১ অ0 ৫)
    অর্থাৎ -রবিবারকে সান্ডে, ফাল্পনকে ফেব্রুয়ারী এবং ষষ্ঠকে সিক্সটি ইংরাজীতে বলে - এর দ্বারা স্পষ্ট এই পুরাণ ইংরেজদের আসার পর হয়েছে।
    ভাগবতে স্কন্দ ১২, অধ্যায় ৩৩, শ্লোক ৯ লিখিত আছে-
    “অষ্টাদশ শ্রীভাগবত মিষ্যতে”
    অর্থাৎ - ভাগবতে মোট ১৮০০০ শ্লোক আছে। কিন্তু গণনা করলে ১৪১৮০ শ্লোক পাওয়া যায়। পরিষ্কার যে, ভাগবত থেকে প্রায় ৪০০০ শ্লোক বের করা হয়েছে। সুতরাং বর্তমান ভাগবত কাটছাঁট করা হওয়ায় অসম্পূর্ণ ও অপ্রামাণিক। পুরাণের সম্বন্ধে এটা বলা যে, ব্যাসদেব পুরাণগুলির রচয়িতা - পাগলামির কথা মাত্র। কেননা স্বয়ং পুরাণে লেখা আছে যে, পুরাণ ধূৰ্ত্তদের দ্বারা তৈরী হয়েছে। দেখুন -
    ধূর্তঃ পুরাণ চতুরৈঃ হরি শংকরাণাম্।
    সেবা পরাশ্চ বিহিতাস্তব নির্মিতানাম্‌।।১২।।
    (দেবী ভাগবত স্কন্দ ৫, অধ্যায় ১৯)
    অর্থাৎ - পুরাণ নির্মাতারা অত্যন্ত চতুর, ধূর্তরা শিব ও বিষ্ণু পূজার শ্রেষ্ঠতা নিজেদের উদরপূর্তি করার জন্য লিখেছেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, পুরাণ নির্মাতারা অনেক ধূর্ত। কোন এক ব্যক্তি এর রচয়িতা নয়।  

    পুরাণের গল্প - মহাভারতের পরে রামচন্দ্র
    ভাগবত পুরাণে অবতারদের দুটি তালিকা দেওয়া আছে যাতে বলা হয়েছে কোন অবতার কী কী ক্রমে হয়েছে। উভয় সুচীই একে অন্যের বিরুদ্ধে। প্রথম তালিকা ভাগবত স্কন্দ ১ অধ্যায়ত শ্লোক সংখ্যা ৬ থেকে ২৫ পর্যন্ত, যার মধ্যে এক কল্কি অবতার সহ ২২ অবতারমানা হয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ কথা এই যে, রামচন্দ্রকে ১৮তম অবতার মানা হয়েছে এবং ব্যাস ঋষিকে ১৭তম, অর্থাৎ রামচন্দ্ৰ জী মহাভারতের ব্যাসদেবের পরে হয়েছিলেন। ভাগবতকারের এটা গাঁজাখুরি গল্প। সনাতনীদের কল্পিত ২৪ অবতার ভাগবত মানে না।
    দ্বিতীয় সূচী ভাগবত স্কন্দ ২ অধ্যায় ৭ এ দেওয়া আছে। তার মধ্যে মোট ২১ অবতার মান্য করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন পশু অবতার হয়গ্রীব নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নারদও মোহনী নামক প্রথম তালিকার দুটি অবতারের নাম অযোগ্য ও ভুল মেনে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, আফিমের নেশা করে ভাগবতকার গ্রন্থ লিখতে বসেছিলেন। তার এটাও জানা নেই যে, পিছনে কী লেখা হয়েছে এবং আগে কী লিখতে হবে। সমস্ত পুরাণ একে অন্যের বিরুদ্ধে ও তথ্যগত ভাবে ভুল। বাস্তবে পুরাণ গ্রন্থ অত্যন্ত ভ্রষ্ট। এই সব বেদবিরুদ্ধ গ্রন্থ মানার কারণে হিন্দু জাতির অত্যন্ত পতন হয়েছে। অন্যদের কথা ছেড়ে দিন, কলিযুগী মাধবাচার্যাদি সনাতনী পন্ডিতদের কে সাক্ষাৎ রাক্ষসের অবতার বলা হয়েছে। প্রমাণ দেখুন - দেবী ভাগবত গ্রন্থ স্কন্দ ৬।
    লোকমান্য তিলক গীতা রহস্য পৃষ্ঠা ৫০১-এ প্রাচীন বিষ্ণু পুরাণের নিম্ন শ্লোক লিখেছেন যা এখন বের করে ফেলা হয়েছে-



    কৃষ্ণ-কৃষ্ণ বুলি আওড়ানো পাপ:

    অপহায়ং নিজ কর্ম কৃষ্ণেতি য়ো বাদিনঃ।
    তে হরের্দ্ধেষিনঃ পাপাঃ ধমার্থ জন্ময়দ্ ধরে।।
    অর্থঃ- যারা বেদোক্ত ধর্ম ত্যাগ করে কেবল হরে কৃষ্ণ জপ করে তারা কৃষ্ণের শত্রু, পাপী। কেননা কৃষ্ণর জন্মই বেদধর্ম প্রচার হেতু হয়েছিল।
    এই প্রমাণ দ্বারা বর্তমান কীর্তন প্রণালী অসত্য প্রতিপন্ন হয়। পুরাণ যার প্রচার করে হিন্দু জাতির মধ্যে ঘোর অনাচার সৃষ্টি করে রেখেছে। অনেক অজ্ঞানী কৃষ্ণকেও ছেড়ে রাধে-রাধে বুলি আওড়াতে থাকেন। মনে হয় রাধা সুন্দরীর সঙ্গে তার নিকট সম্পর্ক আছে। ধর্মের নামে এই জাতিকে এই সব পাপী কী রকম মূর্খ বানিয়ে রেখেছে বুদ্ধিমানেরা বুঝতে পারবেন। পুরাণে এক ঈশ্বরের স্থানে হাজার-হাজার দেব-দেবীর পূজা হিন্দু ধর্মে সমাবেশ করে দিল। পরমাত্মার স্থানে মহাদেবের লিঙ্গ (মূত্রেন্দ্রিয়) জনতা দ্বারা পূজন করা হলো। বিদেশী দেবতা বিষ্ণু, শিবও গণেশ (যা সম্পূর্ণ কল্পিত) হিন্দুদেরকে গোলাম করে দিল। পুরাণ মতে এই দেবতা পৃথিবীর উপর ব্যভিচার করতে বা ব্যভিচার হেতু শাপের দন্ড ভোগ করতেই আসে। পুরাণে এদের নংরা চরিত্র বর্ণন সবিস্তারে দেওয়া আছে। | সুতরাং আমরা এই বলতে চাই যে, ঈশ্বরের প্রার্থনা, উপাসনা ও স্তুতি ত্যাগ করে যারা হরে কৃষ্ণ বা রাধে কৃষ্ণ জপ করে বা কৃষ্ণের নামের সঙ্গে পুরাণ মান্যতানুযায়ী দুরাচারিণী রাধার নাম যোগ করে তারা পাপী, কৃষ্ণকে বদনাম করে। নাম জপতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে শুদ্ধ মনে ও৩ম্ বা গায়ত্রীর মানসিক জপ করা উচিৎ। সমস্ত বেদ ও  শাস্ত্রে কেবল ও৩ম্ জপ করারই বিধান দেওয়া আছে। প্রণবের সার্থক স্মরণ শান্তচিত্ত হয়ে করার আদেশ যোগদর্শন দিয়েছে। কল্পিত অবতার বা শিব তথা বিষ্ণু আদির মন্দিরে গিয়ে মাথা নোয়ালে ব্যক্তিরা মনুষ্য জন্ম বৃথা নষ্ট করে। মর্যাদা পুরুষোত্তম আদর্শ চরিত্র যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ আমাদের আর্যজাতির নিষ্কলঙ্ক ঈশ্বরভক্ত মহান পূর্বপুরুষ ছিলেন। তার নাম জপ করার বদলে তাঁর কার্য এবং তাঁর – জীবনাদর্শকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করা প্রত্যেক ব্যক্তি, সমাজ - ও দেশের জন্য উপযুক্ত হবে। সরকার-সরকার বুলি আওড়ালে লোকেরা পাগল মনে করবে-রাজভক্ত নয়। রাজভক্ত হওযার জন্য সরকার শব্দের আবৃত্তি না করে রাজ্যের নিয়ম ও আদেশকে মানা আবশ্যক। সেই সব যে পালন করে তাকে বাস্তবিক রাজভক্ত বলা হবে। এমন কথা মহাপুরুষদের সম্পর্কেও প্রযোজ্য। তাদের আদর্শ নিজের জীবনে প্রতিফলিত করাই তার ভক্ত হওয়া, না শুধু নাম জপ করা কিংবা রামায়ণের অখন্ড পাঠ করতে থাকা – সারাজীবনে একটা আদর্শের পালন না করা সত্ত্বেও।
    নারদ ভাগবতে পরিষ্কার ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, এই মাধবাচার্যের মতো কলিযুগী সনাতনী উপদেশক পন্ডিত ধর্ম-কর্মের সম্বন্ধে ছাইও জানেন না। সুতরাং তাদের ধর্ম বিষয়ে কথা একদম মানা উচিৎ নয়। এরা জনতার মধ্যে মিথ্যা পান্ডিত্যের মুখোশ পরে বসে আছেন।
    সীতা, রাম, কৃষ্ণ, রাবণ, কৌরব, পান্ডব, লংকা, অযোধ্যা ইত্যাদি ঐতিহাসিক নাম ও স্থান। যদি কেউ এসবকে (রামায়ণ ও মহাভারত কে) ঐতিহাসিক না মানে তার কথা মান্য হবে না। সেইরূপ রাধা-রাবণ ইত্যাদির জন্মও বিবাহের কথা পুরাণে লিখিত আছে। কোন মাধবাচার্যসম উন্মাদ আমাদের আক্রমণে অস্থিরচিত্ত হয়ে এ সবের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করতে শুরু করে দেয় তাহলে ঘোর পাগলামি হবে। এ কথা আলাদা যে, আমাদের দৃষ্টিকোণ হিসাবে সম্পূর্ণ পুরাণও তার কাহিনী মিথ্যা। মূঢ় লোকেরা রাধা নর্তকীর মিথ্যা কল্পনা করে তাকে কৃষ্ণের প্রেমিকা বানিয়েছে এবং পুরাণ রচয়িতারা কৃষ্ণর পরম পবিত্র নিষ্কলঙ্ক জীবনের উপর নোংরা কলঙ্ক আরোপ করেছে। এই প্রকার সমস্ত ঋষিমুনিদের আদর্শ চরিত্রকে পুরাণ কলঙ্কিত করেছে। এইজন্য জনৈক সংস্কৃত গ্রন্থকার কী লিখেছে দেখুন –
    পৌরাণিকা নাম ব্যভিচার দোয়োন শকনীয় কৃতিভিঃ কদাচিৎ।
    পুরাণকর্তা ব্যভিচার জাতঃ তস্যাপি পুত্রো ব্যভিচারঃ জাতঃ।।
    | (সুভাষিত রত্ন ভান্ডার) |
    অর্থাৎ - পৌরাণিকদের মধ্যে ব্যভিচারের দোষ অনেক। তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করা উচিৎ নয়। পুরাণ নির্মাতারা ব্যভিচার থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং তাদের সন্তানও ব্যভিচার থেকে হয়েছে। | সুতরাং সেই সব সনাতনী পন্ডিতরা দোষী যারা এই পুরাণের দুষিত সাহিত্য পাঠ করে জনতাকে শোনায়, গীতা প্রেসের মতো পুরাণ প্রকাশক ব্যাপার সংস্থাও ধর্মভীরু হিন্দু জাতির মধ্যে নিকৃষ্ট সাহিত্য ছেপে বিক্রী করায় জনতাকে পথভ্রষ্ট করার দোষ থেকে মুক্ত করা যায় না। পুরাণের নোংরা কাহিনীতে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যার অনুসন্ধান করা বিষ্ঠার উপর সোনার ঝালর দেওয়ার সমান যার দুর্গন্ধ চেপেও রাখা যায় না। যখন আর্যসমাজী খন্ডন মন্ডনের তর্কপূর্ণ খগড় রতে চলতে শুরু করল তখন হতভম্ব হয়ে পোপেরা পুরাণের ব্যভিচার কাহিনী লুকানোর জন্য উলটো-পাল্টা আধ্যাত্মিক অর্থ অনুসন্ধান করতে বসে গেছেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা অক্ষম হয়েছেন।

    বেদে কি রাধার বর্ণনা আছে ?
    বিড়াল স্বপ্নে দুধের সর দেখে। এই লোকোক্তি অনুযায়ী
    ১.পৌরাণিক পন্ডিতরা বেদে, রাধা, কৃষ্ণ, রাম, রাবণের বর্ণনা দেখতে পান।
    ২. মুসলমানরা বেদে ‘শতমদীনাঃ পদে মক্কামদিনা দেখেন।
    ৩. খৃষ্টানরা বেদে ‘ঈশা বাস্যমিদং'এঈশা মসীহ দেখতে পান।
    ৪. কবীর পন্থীদের বেদে ‘কবিৰ্মনীষী’ পদে কবীরদাস নজরে আসে।
    ৫. একজন মহাশয় বেদে শ্ৰীশ্চতে লক্ষীশ্চতে’ বাক্যে নিজের পত্নী ‘লক্ষীদেবী’-র বর্ণনা পান।
    ৬.পাদরী সাহেব রামায়ণে গিরজা পূজন দেখে সীতা গিরজায় মসীহ পূজন করেছেন - ধরে নিয়েছেন।
    ৭. একজন মোল্লা বেদে ‘ইমাম্ তমিদ্র’ পদে দিল্লীর মসজিদের ইমামের দর্শন পান।
    ৮.‘চেরি ছোড়ি হোয় কিরাণী’ রামায়ণের এই পদে কিরাণী খৃষ্ঠমতের প্রমাণ প্রত্যক্ষ দেখতে পান।
    ৯.মাংসাহারী বেদে ‘মুরগায়মদ্যয়ূয়ং’মুরগাও মদ্য দেখতে পায়।
    ১০.জৈনীরা বেদে ‘স্বস্তিনস্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ' পদে তীর্থঙ্কর নেমিনাথ দৃষ্টিগোচর হয়।
    ১১. রাবণবংশজ পন্ডিতকে ‘পাহিধূর্তেররাবণঃ’ পদে ধূর্ত রাবণ দৃষ্টিগোচর হয়।
    ১২. পাখন্ডী শিরোমণি মাধবাচার্যকে বেদে “ইন্দ্ৰবয়ুমনীরাধং। হবামহে” এই মন্ত্রভাগে কৃষ্ণ ঢুকিয়ে রাখার স্বপ্নে গায়িকা সুরৈয়া সুন্দরী দৃষ্টিগোচর হয়। | হিন্দুদের ঘরেই যখন বেদের শত্রু পৌরাণিক পন্ডিত বিদ্যমান। এবং তাঁরা জেনে শুনে ধূর্ততা করতে থাকেন তখন বেদের অপৌরুষেয়ত্বর রক্ষা কি মুসলমান করতে আসবে ? সনাতনী জনতার পক্ষে এটা অশোভনীয় যে, এমন নাস্তিক পন্ডিতদের তারা সম্মান করে। যাদের মুখ দেখাও পাপ গণ্য করা উচিৎ।
    বেদের হাজার-হাজার মন্ত্রে লক্ষ লক্ষ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে যার অর্থ ব্যাকরণের রীতি অনুসারে নিরুক্তাদি শৈলীসহ করা হয়। বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞানের ভান্ডার এবং আদি সৃষ্টিতে মনুষ্য এই জ্ঞান প্রাপ্ত হওয়ায় তারমধ্যে ব্যক্তি ইতিহাস বা কোন স্থানের বর্ণনা নেই। কিন্তু খেপাটে লোকদের যদি কোন নামের শব্দ বেদের কোন পদের সঙ্গেমিলে যায় তাহলে সে বকতে শুরু করে যে, বেদে অমুক ব্যক্তির বর্ণনা এসেছে। খৃষ্টান, ইমাম, কবীর, রাধা, লক্ষ্মী, রাবণ, রাম, মদিনা ইত্যাদি নাম বেদের মধ্যে অন্ধরা খুঁজতে থাকে।


    বেদে রাধা-কৃষ্ণের বিপক্ষে প্রমাণঃ
    “ইন্দ্ৰ বষ্ণুমনিরাধং হবামহে” (অথর্ববেদ ১৯-১৫-২) এরমধ্যে অনুরাধম্ পদে এই অন্ধকে রাধা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সত্যার্থ দেখুন-
    (বয়ম্) আমরা (আরাধম্) আরাধনা করার যোগ্য বা সিদ্ধ করিবার যোগ্য (ইন্দ্রম্) ঐশ্বর্যশালী পরমেশ্বরের (হবামহে) স্তুতি করি। বেদ মন্ত্রে রাধা বা কৃষ্ণের গন্ধ পর্যন্ত নেই তবুও এই সব সনাতনী পন্ডিতদের বেদে কৃষ্ণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এইভাবে আমরা দেখলাম যে, শ্রীকৃষ্ণকে পুরাণ-কাল্পিত কাহিনীর দ্বারা সব প্রকারে বদনাম করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। রাবার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক, কুজ্বার সঙ্গে ব্যভিচার, গোপীদের সঙ্গে বিষয় ভোগ এবং কাম-ক্রীড়া করা ইত্যাদি অসত্য লজ্জাজনক ব্যাপার। কীর্তন প্রণালী যা সনাতনীদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে, মহান কৃষ্ণকে বদনাম করার দৃষ্টিতে অত্যন্ত মুখতাপূর্ণ কাজ।
    আমাদের লেখা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, “রাধারমণ শ্রী গোবিন্দ জয় জয়’’-র অর্থব্যভিচারকারী কৃষ্ণের জয়। রাধাকৃষ্ণের অর্থ হবে রাধা কৃষ্ণের অবৈধ সম্পর্কের ঢোল পিটানো। মাধবাচার্য রামের অর্থ ‘বিষয়ানন্দ’ করেছেন। তাহলে হরে রাম হরে কৃষ্ণ-র অর্থ হবে হে বিষয়ানন্দী কৃষ্ণ। গোপীবল্লভ রাধেশ্যামের অর্থ হবে-হে গোপীদের সঙ্গে বিষয় ভোগ, ব্যভিচার কারীও রাধার অবৈধ প্রেমী কৃষ্ণ। এইভাবে সম্পূর্ণ কীর্তনের অর্থ হবে গোপীদের ও রাধার সঙ্গে ব্যভিচারকারী বিষয়ানন্দী কৃষ্ণের জয় হোক। এটা কীর্তন হলো না নিজের পূর্বপুরুষ শ্রীকৃষ্ণকে ঢোল-খোল-করতাল বাজিয়ে চিৎকার করে গালাগাল দেওয়া হলো ? এই সব সনাতনীদের বুদ্ধিরও বলিহারী যে, পুরাণের মদের নেশায় নিষ্কলঙ্ক পবিত্ৰাত্মা কৃষ্ণকে দিনরাত গলা ফাটিয়ে গালাগাল দিয়ে থাকে। ব্যভিচারকে এই সব অজ্ঞানী ব্রহ্মচর্য গণ্য করে। পুরাণের ব্যভিচারিণী রাধাকে, এরা আজন্ম ব্ৰহ্মচারিণী করে তোলে। কৃষ্ণকে এরা আজন্ম ব্রহ্মচারী বলে, কৃষ্ণের কুজ্বার সঙ্গে ব্যভিচারকে এরা তার ডাক্তারী করিয়ে কোমর সোজা করাবার চিকিৎসা বলে মানে, গোপীদের সঙ্গে দুষ্কর্ম (বিষয় ভোগ) করাকে পবিত্র প্রেমের প্রতীক গণ্য করে, যমুনায় স্মানরতা গোপীদের বস্ত্র হরণ ও তাদের গুপ্তাঙ্গের নগ্ন দর্শন করা, তাদের সঙ্গে ছলনা ও পরিহাস করাকে পবিত্র উপদেশ দেওয়া বলে। সংসারের সমস্ত দুরাচারের মূল, সনাতন ধর্মের এই কুপ্রথাকে কেরোসিন তেল লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া দরকার। ঘাস মার্কা পুরাণগুলি কোন নদী বা পুকুরের জলে ডুবিয়ে দেওয়া উচিৎ। রামকৃষ্ণর মতো আমাদের আর্য জাতির মহাপুরুষদেরকে কলঙ্কিত করে যারা, তাঁদের গালাগাল দিয়ে ধন্য করে যারা, সেই সব কীর্তন পন্থীদেরকে তর্কশাস্ত্রের সাহায্য নিয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিৎ এবং জোর দিয়ে তাদের বাধ্য করা উচিৎ তারা যেন কৃষ্ণকে বদনাম না করে। তাদের এই আচরণে হিন্দু জাতির ঘোর অপমান হয়েছে। এমন পাখন্ড সনাতনী পোপ পন্ডিতদের মুখ দেখাও পাপ গণ্য করা উচিৎ, যারা পুরাণ ও কীর্তনের প্রচার করে সহজ-সরল হিন্দু জাতির মধ্যে অধর্মের প্রচার করে। আমাদের সব বুদ্ধিমান পাঠকদের কাছে এই আমাদের নিবেদন। কেননা যতক্ষণ এই ধর্মের ঠিকাদার, উপদেশকদের মগজ ঠিক করা না হবে, জনতাকে তারা ভুলপথে নিয়ে যেতে ত্রুটি করবে না। এইজন্য আর্য সমাজ ও প্রত্যেক বুদ্ধিমান পৌরাণিক বন্ধুদেরকে জনতার মধ্যে থেকে এই ধার্মিক  ত্রুটি নিবারণ করতে সচেষ্ট হওয়া উচিৎ।
    ।। ওঁম্ শম্ ।।