বিধবা বিবাহঃ সনাতন ধর্মে নাকি বিধবা বিবাহ নেই এই অপপ্রচারের জবাব।
অহং কেতুরহং মুর্ধাহমুগ্রা বিবাচনী।
মমেনু ক্রতুং পতিঃ সেহানায়া উপাচরেৎ ॥
পদার্থঃ (অহং কেতুঃ) আমি জ্ঞানবতী (অহং মূর্ধা) আমি শ্রেষ্ঠ (অহং! উগ্রা বিবাচনী) আমি ধৈর্য শালিনী বক্তৃতা কারিণী (সেহানায়াঃ) শত্রু নাশিনী (পতিঃ) স্বামী (মম) আমার (অনু) অনুকূল থাকিয়া (ক্রতুং উপাচরেৎ) গৃহ কৰ্ম্ম সম্পাদন করুন। (ঋগ্বেদ ১০/১৫৯/২)
বঙ্গানুবাদঃ আমি জ্ঞানবতী, গৃহে মুখ্য স্থানীয়া ধৈর্য শালিনী, বক্তৃতাকারিণী ও শত্রুনাশিনী। আমার পতি আমার অনুকুলে থাকিয়া গৃহকর্ম সম্পাদন করুন।
হ্যা ঠিকই পড়েছেন! এটাই বেদমন্ত্র। আর এই বেদই পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যার দ্রষ্টা শুধু পুরুষ নয়। নারীরাও। নারী-পুরুষের এমন সমঅধিকার মানবসৃষ্ট কোনো ধর্মে খুজে পাওয়া সম্ভব নয়। বেদ সরাসরি যেমন নারী ঋষিদের মাধ্যমেও এসেছে তেমনি অধিকারের ক্ষেত্রেও নারীরা পুরুষের সমান।
বেদে নারীকে যেমন পুরুষের অনুকূল আচরণ করতে বলা হয়েছে পুরুষকেও তেমন নারীদের অনুকূল আচরণ করতে বলা হয়েছ।
আর এই বেদে কিনা বিধবাদের বিবাহের অনুমতি থাকবে না????
কিছু লোক আছেন যারা বলে থাকেন সনাতন ধর্মে মেয়েদের বিয়ে হয় এক বারই। কোনো মেয়ে বিধবা হলে তাদের আর বিয়ে দেওয়া নাকি শাস্ত্রে নেই! ইনারা শাস্ত্র কোনোদিন ছুয়ে দেখেন নি, শুধু ঠাকুরদার কাছে এসবের গল্প শুনেছেন। বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হলো। আশা করি বিধবা বিবাহ নিয়ে আর কারো কোনো অপত্তির অবকাশ থাকবে না।
বেদ থেকে প্রমাণ দেখে নিন।
মমেনু ক্রতুং পতিঃ সেহানায়া উপাচরেৎ ॥
পদার্থঃ (অহং কেতুঃ) আমি জ্ঞানবতী (অহং মূর্ধা) আমি শ্রেষ্ঠ (অহং! উগ্রা বিবাচনী) আমি ধৈর্য শালিনী বক্তৃতা কারিণী (সেহানায়াঃ) শত্রু নাশিনী (পতিঃ) স্বামী (মম) আমার (অনু) অনুকূল থাকিয়া (ক্রতুং উপাচরেৎ) গৃহ কৰ্ম্ম সম্পাদন করুন। (ঋগ্বেদ ১০/১৫৯/২)
বঙ্গানুবাদঃ আমি জ্ঞানবতী, গৃহে মুখ্য স্থানীয়া ধৈর্য শালিনী, বক্তৃতাকারিণী ও শত্রুনাশিনী। আমার পতি আমার অনুকুলে থাকিয়া গৃহকর্ম সম্পাদন করুন।
বেদে নারীকে যেমন পুরুষের অনুকূল আচরণ করতে বলা হয়েছে পুরুষকেও তেমন নারীদের অনুকূল আচরণ করতে বলা হয়েছ।
আর এই বেদে কিনা বিধবাদের বিবাহের অনুমতি থাকবে না????
কিছু লোক আছেন যারা বলে থাকেন সনাতন ধর্মে মেয়েদের বিয়ে হয় এক বারই। কোনো মেয়ে বিধবা হলে তাদের আর বিয়ে দেওয়া নাকি শাস্ত্রে নেই! ইনারা শাস্ত্র কোনোদিন ছুয়ে দেখেন নি, শুধু ঠাকুরদার কাছে এসবের গল্প শুনেছেন। বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হলো। আশা করি বিধবা বিবাহ নিয়ে আর কারো কোনো অপত্তির অবকাশ থাকবে না।
বেদ থেকে প্রমাণ দেখে নিন।
ইয়ং নারী পতি লােকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্যু মন্ত প্রেতম।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্মৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি ॥
পদার্থঃ (মর্ত্য) হে মনুষ্য! (ইয়ং নারী) এই স্ত্রী (পতিলােকম্) পতি লােককে অর্থাৎ বৈবাহিক অবস্থাকে (বৃণানা) কামনা করিয়া (প্রেতম্) মৃত পতির (অনু) পরে (উপ, ত্বা) তােমার নিকট (নিপদ্যতে) আসিতেছে (পুরাণম্) সনাতন (ধৰ্ম্মম্) ধর্মকে (পালয়ন্তী) পালন করিয়া (তস্য) তাহার জন্য (ইহ) এই লােকে (প্রজাম্) সন্তানকে (দ্রবিণং চ) এবং ধনকে (ধেহি) ধারণ করাও। (অথৰ্ব্ববেদ ১৮/৩/১)
বঙ্গানুবাদঃ হে মনুষ্য! এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তােমার নিকট আসিয়াছে। সে সনাতন ধর্মের পালয়িত্রী। তাহার জন্য ইহলােকে সন্তান ও ধন দান কর।
####################################
ইয়ং নারী পতিলােকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্বা মর্ত্য প্রেতম্।
বিশ্বং পুরাণ মনু পালয়ন্তী তস্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি ॥ (তৈঃ আঃ ৬/১/১৩)
সায়ণ ভাষ্যঃ হে (মর্ত্য) মনুষ্য! যা (নারী) মৃতস্য তব ভার্যা, সা (পতি লােকম্) (বৃণানা) কামায়মানা (প্রেতং, মৃতং, ত্বাৎ, উপনিপদ্যতে) সমীপে নিতরাং প্রাপ্নোতি। কীদৃশী (পুরাণং,বিশ্বম্) অনাদি কাল প্রবৃত্তং কৃৎস্নং স্ত্রী ধৰ্ম্মং (অনুপালয়ন্তী) অনুক্রমেণ পালয়ন্তী (তস্যৈ) ধৰ্ম্ম পত্নৈ ত্বং ইহলােকে নিবাসার্থং অনুজ্ঞাং দত্ত্বা (প্রজা) পুত্ৰাদিকং (দ্রবিণ) ধনঞ্চ (ধেহি) সম্পাদয়।
বঙ্গানুবাদঃ হে মনুষ্য! মৃত পতির এই স্ত্রী তােমার ভার্যা। সে পতি-গৃহের কামনা করিয়া মৃত পতির পরে তােমাকে প্রাপ্ত হইতেছে। কিরূপ ভাবে? অনাদি কাল হইতে সম্পূর্ণ স্ত্রী ধৰ্ম্মকে ক্রমানুসারে পালন করিয়া! সেই ধৰ্ম্ম-পত্নীকে তুমি ইহলােকে নিবাসের আজ্ঞা দিয়া পুত্রাদি সন্তান ও ধনের প্রাপ্তি করাও।
####################################
উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলােকং গতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য দিধষোস্তবেদং পত্যুৰ্জনিমভি সংবভূব ।
পদার্থঃ (নারী) হে স্ত্রী! তুমি (এতৎ গতাসুম্) এই গত প্রাণ পতির নিকট (উপশেষে) শয়ন করিয়া আছে (জীবলােকং অভি উদীর্থ) জীবিত মনুষ্যদের স্থানে উঠিয়া এস (এহি) এখানে এস (তব) তােমার (হস্তগ্রাভস্য দিধিযােঃ) পাণি গ্রহণকারী (পত্যুঃ) পতির সঙ্গে (ইদং জনিত্বম্) এই পরিমাণে পত্নীত্ব (অভি সংবভুব) উৎপন্ন হইল। (ঋগ্বেদ ১০/১৮/৮); (অথৰ্ব্ববেদ ১৮/৩/২)
বঙ্গানুবাদঃ হে স্ত্রী! তুমি এই মৃত পতির পার্শ্বে কেন শয়ন করিয়া আছ। ওখান হইতে উঠিয়া জীবিত মনুষ্যদের নিকটে এখানে এস। তােমার পাণি গ্রহণকারী পতির সঙ্গে সেই পত্নীত্ব টুকুই জন্মিল।
সায়ণ ভাষ্যঃ হে (নারি) মৃতস্য পত্নী (জীবলােকম্) জীবানাং পুত্র পৌত্রাণাং স্থানং লােকং গৃহমভি লক্ষ্য (উদীৰ্ষব) অস্মাৎ স্থানাৎ উত্তিষ্ঠ (গতাসুম্) অপক্রান্ত প্রাণং (এতম্) পতিং (উপশেষে) তস্য সমীপে স্বপিষি তস্মাৎ ত্বং (এহি) আগচ্ছ। যস্মাৎ ত্বং (হস্ত গ্রাভস্য) পাণিগ্রাহং কুর্ব্বতঃ (দিধিযােঃ) গর্ভস্য নিধাতুঃ (তব) অস্য (পতৃঃ) সম্বন্ধাদাগতং (ইদম্ জনিতৃম) জায়াদ্বং অভিলক্ষ্যে (সম্বভুব) সম্ভূতাসি অনুসরণং নিশ্চয়ং অকার্ষীঃ অম্মাদাগচ্ছ।
বঙ্গানুবাদঃ হে মৃতপতির পত্নী! জীবিত পুত্রপৌত্রের লােক অর্থাৎ গৃহের কামনা করিয়া এস্থান হইতে উঠ। মৃত পতির পার্শ্বে তুমি শয়ন করিয়াছ, ওখান হইতে এখানে এস। এ তােমার পাণিগ্রহণকারী ও গর্ভধারণকারী পতির সম্বন্ধ হেতু আগত। ইহার স্ত্রী হইবার ইচ্ছা করিয়া তুমি নিশ্চিতরূপে অনুসরণ কর- এজন্য এস।
####################################
তৈত্তিরীয় অরণ্যকে (অ ৬/১/১৪): এই মন্ত্রটি ঠিক এইভাবেই আছে। তাহার ভাষ্য সায়ণাচার্যঃ এইরূপ করিতেছেন- হে (নারি) ত্বং (ইতাসুম) গত প্রাণং (এতম্) পতিং (উপশেষে) উপেত্য শয়নং করােষি (উদীৰ্ষব) অস্মাৎ পতি সমীপাদৃত্তিষ্ঠ (জীবলােকমভি) জীবন্তং প্রাণসমূহভি লক্ষ্য (এহি) আগচ্ছ। (ত্বম) (হস্তগ্রাভস্য) পাণিগ্রাহবতঃ (দিধিষোঃ) পুনৰ্বিাহচ্ছেঃ (পত্যুঃ) এতৎ (জানিত্বম্) জায়াং (অভিসম্বভুব) আভিমুখ্যেন সম্যক্ প্রাপ্নুহি।”
ভাষ্যঃ অর্থাৎ হে নারী! তুমি এই মৃতপতির পার্শ্বে শয়ন করিয়া আছ। এই পতির নিকট হইতে উঠ। জীবিত পুরুষের কামনা করিয়া এস এবং প্রাণিগ্রহণকারী পুনর্বিবাহের অভিলাষী এই পতিকে জায়াত্বের সহিত ভালভাবে প্রাপ্ত হও।
ইতি, বিধবা বিবাহ শাস্ত্রসম্মত প্রমানিত হলো।
আশা করি বিধবাবিবাহ নিয়ে সকলের ভ্রান্তি দূর হয়েছে।