• সর্বশেষঃ

    আল রাজি মুসলিম নাকি সনাতনী? - যে সত্য বলা হয়নি।

    আল রাজি একই সঙ্গে চিকিৎসক, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রসায়নবিদ হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন। তাঁর পুরাে নাম আবু বকর মােহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া ইবনে ইয়াহিয়া আল রাজি। জন্ম ৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে, ইরানের রে শহরে। নগরটি বর্তমানে তেহরানের অংশ। এই মনীষী ৯২৫ সালে জন্মস্থান রে শহরে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে। সেসময় জন্ম নেওয়া আরেক বিখ্যাত মনীষী আল বেরুনী প্রথম আল রাজির জীবনী রচনা করেন। আল রাজির নামে ইরানে রাজি ইনস্টিটিউট এবং রাজি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ইরানে প্রতি বছর ২৭ আগস্ট রাজি দিবস পালন করা হয়।

    শৈশবে আল রাজি ছিলেন একজন স্বর্ণকার ও বীণাবাদক। এরপর সংগীত ছেড়ে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন আলকেমির প্রতি। তারপর আকৃষ্ট হন চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতি। তৎকালীন চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্বাধিক খ্যাতিমান ও প্রামাণিক লেখক ছিলেন তিনি। তার জ্ঞানিক ও দার্শনিক রচনার সংখ্যা বিপুল। গণিত ছাড়া অন্যসব বিষয়ে প্রায় ২০০ গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর রচিত তাঁর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম আল কিতাব আল হাওয়ি। এটি আল জামি বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের সংক্ষিপ্তসার নামেও পরিচিত। ১২৯৭ সালে গ্রন্থটি কনটিনেন্স শিরােনামে লাতিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে তা ষোলো শতক পর্যন্ত চালু ছিল। 

    চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রায় সব বিষয়ের আলােচনা ছাড়াও রাজির রচনাবলিতে দর্শন, আলকেমি, জ্যোতির্বিদ্যা, ব্যাকরণ, ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা ও জ্ঞানের অন্যান্য শাখার আলােচনা রয়েছে। কেরােসিনসহ তিনি অনেক যৌগ ও রাসায়নিক পদার্থ আবিষ্কার করেন। নবম শতকে তিনি তাঁর বই কিতাব আল আসরার-এ কেরােসিন উৎপাদনের দুটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন। রসায়ন শাস্ত্রে অনেক নতুন বিষয় প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতীক চিহ্ন অন্যতম। একই সঙ্গে জৈব ও অজৈব রসায়ন নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। প্রথম সালফিউরিক এসিডও তিনিই তৈরি করেন। এছাড়া অসংখ্য লবণ, অ্যালাম প্রভৃতি তৈরি করেছেন তিনি। করেছেন নানারকম রাসায়নিক প্রক্রিয়া এবং যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন। কেরােসিন ল্যাম্প তার অন্যতম। ধাতুর রূপান্তরে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। মধ্যযুগের অন্যান্য রসায়নবিদের মতাে তিনিও বিশ্বাস করতেন পরশ পাথরের সাহায্যে সাধারণ ধাতুকে স্বর্ণে রূপান্তর করা সম্ভব। পরশ পাথর নিয়ে তিনি করেছেন বিস্তর গবেষণা। লিখেছেন দুটি বইও। বই দুটির নাম The Secrets Ges ও The secrets of Secrets. তাঁর সমসাময়িক পণ্ডিতদের ধারণা, তিনি নাকি কপারকে স্বর্ণে রূপান্তরিত করতে পেরেছিলেন। উল্লিখিত বই দুটি ছাড়াও আল রাজি রসায়নে আরও কিছু বই রচনা করেন। বল-বিজ্ঞানে ওজন সম্পর্কিত তাঁর একটি বইয়ের খোঁজ পাওয়া যায়, যার নাম মিজান তাবিই। পদার্থ ও আলােকবিজ্ঞান সম্পর্কেও তিনি বই রচনা করেন। 

    আল রাজি চিকিৎসাবিদ্যায় এতই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন যে, তাকে রাজা-বাদশাহদের চিকিৎসার জন্য নানা দেশে ঘুরে বেড়াতে হতাে। হাম ও গুটিবসন্তের পার্থক্য নির্ণয়ে তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি পেডিয়াট্রিকস, অপথ্যালমােলজি, নিউরােসার্জারি, সংক্রামক রােগসহ চিকিৎসাবিদ্যার অনেক শাখার গােড়াপত্তন করেন। রচনা করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর অনেকগুলাে ভলিউমের দশটিরও বেশি গ্রন্থ। অনুবাদে মধ্য দিয়ে তার চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ ও ধ্যানধারণাগুলাে মধ্যযুগের ইউরােপে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং পাশ্চাত্যের চিকিৎসাবিদ্যাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

    তাঁর রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে হচ্ছে, আল কিতাব আল হাওয়ি, দ্য ভার্চুয়াস লাইফ, আল জুদারি ওয়াল হাসবাহ, আল মানসুরি। ২৩টি ভলিউমে রচিত আল কিতাব আল হাওয়ি গাইনােকলজি, অবেস্ট্রিকস এবং অপথ্যালমিক সার্জারির ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে। নয়টি ভলিউমে রচিত দ্য ভার্চুয়াস লাইফ গ্রন্থটিতে গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল ও প্লেটোর কাজ সম্পর্কে আললাচনা-সমালােচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে সৃষ্টিশীল ধারণা দেন। বইটিতে তিনি বিভিন্ন বই পড়ে অর্জিত জ্ঞান, নানারকম রােগ এবং তার চিকিৎসা নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ ও সমস্ত নােটকে একত্রিত করেন। শুধু এ বইটির জন্য অনেক পণ্ডিত তাকে মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক বিবেচনা করেন। 

    ইসলামি শাস্ত্রমতে আত্মা হচ্ছে আল্লাহর এক আদেশ। কিছু কালের জন্য আত্মা পৃথিবীতে আসে এবং আবার সে ফিরে যায় ‘আলমে আরওয়াহ’ বা আত্মাদের জগতে। সুরা বনি ইসরাইলে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তােমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।' আত্মা যে পুনরায় পৃথিবীতে আসবে, এ কথার স্বীকৃতি নেই ইসলামি শাস্ত্রে। কিন্তু মুসলিম দার্শনিক আল রাজির মতে পুণ্যাত্মা একবারের জন্যই পৃথিবীতে আসেন আর পাপাত্মা আসে বারবার। 

    আল রাজির এই মতটি তার উপর পিথাগােরীয়-প্লেটোনিক ও সনাতন ধর্মীয়  প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে। ওই মতে, আদিতেই আত্মা ছিল প্রাণবান এবং তখন থেকেই তা ছিল নির্বোধ। জড়ের প্রতি আসক্ত হয়ে আত্ম প্রয়াসী হয় জড়ের সঙ্গে মিলিত হতে এবং দৈহিক সুখ-সম্ভোগের অভিলাসে তা রূপ প্রদান করে দেহে। জড়ের অবাধ্যতা এবং আত্মার অন্তর্মুখী ক্রিয়াপরতার প্রতি তার বিরােধিতা লক্ষ করে ঈশ্বর বাধ্য হন জগৎ সৃষ্টি করতে। আত্মা যেন ক্ষণিকের জন্য দৈহিক সুখ ভােগ করতে পারে সেজন্যই ঈশ্বর জগতে আরােপ করেছেন জড়ীয় আকার। একইভাবে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন মানুষকে এবং নিজের স্বর্গীয় সত্তা থেকে মানবদেহে প্রদান করেছেন বুদ্ধি। বুদ্ধি যেন শেষ পর্যন্ত আত্মাকে দৈহিক ভােগবিলাস থেকে নিরস্ত ও পার্থিব মােহ-নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে তার আদি নিবাস স্বর্গীয় জগতে প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করতে পারে, সে জন্য ঈশ্বর বুদ্ধিকে প্রতিস্থাপন করেছেন মানবদেহে। দর্শন পাঠে আত্মা যত বেশি নিবেদিত হয়, তত সহজেই সে লাভ করে চূড়ান্ত মুক্তি এবং তখনই সে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে বিকারহীন বুদ্ধির জগতে। এখানে আত্মা অব্যাহতি পাবে জন্ম-জন্মান্তরের চক্র থেকে। যেসব আত্মা দর্শন পাঠ দ্বারা এভাবে পরিশুদ্ধ হয়নি, তারা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তারা সচেতন হবে দর্শনের আরােগ্যমূলক গুণ সম্পর্কে। এই চূড়ান্ত লক্ষ্য যখন অর্জিত হবে এবং প্রজ্ঞা দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানবাত্মা যখন তার আদি নিবাসে ফিরে যাবে তখন ইতি ঘটবে এই অপার্থিব জীবনের এবং যে জড়কে জোরপূর্বক আবদ্ধ করা হয়েছিল আকারের শৃঙ্খলে, তখন তাও ফিরে যাবে তার আদি আকারবিহীন বিশুদ্ধ অবস্থায়।

    সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে। জন্মান্তর মানে হলো দেহ পরিত্যাগ করলে কর্মফল ভােগ করার জন্য অন্য দেহ ধারণ করে এ জগতেই আবার জন্মগ্রহণ করে। বেদ, উপনিষদ এবং ভগবদ গীতায় বলা হয়েছে জীবাত্মা স্বরূপতঃ ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তিবশতই আত্মাকে দেহ ধারণ করতে হয়। জীবাত্মার একাধিক জন্মগ্রহণের কারণ হলাে তার ভােগাকাক্ষা। আর এরূপ পুনঃপুনঃ জন্ম গ্রহণকেই বলা হয় জন্মান্তরবাদ। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় অর্জুনকে উদ্দেশ্য করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উক্তি : 

    বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মনি তব চার্জুন। 
    তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেথু পরন্তপ। (গীতা ৪/৫) 

    অর্থাৎ, হে অর্জুন! তােমার আমার বহুবার জন্ম হয়েছে। সেই কথা তােমার মনে নেই, কিন্তু সবই আমার মনে আছে।। 

    বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি ।
    তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ।। (গীতা ২/২২) 

    অর্থাৎ, মানুষ যেমন জীর্ণ-শীর্ণ পুরাতন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেইরূপ - আত্মা জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর গ্রহণ করে । 

    পশু হত্যা ও সেই হত্যার নৈতিক যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে আল রাজির মত হচ্ছে, মানুষের আত্মরক্ষার্থে বন্যজন্তু হত্যা করা যুক্তিযুক্ত হলেও গৃহপালিত পশুর বেলায় তা প্রযােজ্য হতে পারে না। বন্য ও গৃহপালিত পশু হত্যা চূড়ান্ত বিচারে যুক্তিযুক্ত হতে পারে কেবল তখনই, যখন প্রাণনাশের সময় সংশ্লিষ্ট পশুগুলাের আত্মাকে তাদের দেহের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে অন্য এমন এক উৎকৃষ্টতর দেহে (যেমন মানুষের দেহে) প্রবেশের সুযােগ করে দেওয়া হয়, যেখানে তারা তাদের পরম লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হবে।

    ইসলামের মতে নবিরা আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী। মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহ যেসব মানুষকে মনােনিত করেছেন তাদেরকেই নবি বলা হয়। নবিদের ওপর ঈমান আনা ফরজ। আল রাজি এই মত স্বীকার করেন না। তিনি তার যুক্তিবাদী হেতুবাক্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই ঐশীবাণী, আল্লাহ ও মানুষর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নবিদের ভূমিকাকে অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, নবুওয়তের ধারণা অনাবশ্যক ও বাহুল্য। কারণ শুভ-অশুভ, উপযােগী অনুপযােগী, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতির পার্থক্য নির্দেশের জন্য আল্লাহপ্রদত্ত যুক্তি বা প্রজ্ঞাই যথেষ্ট। প্রজ্ঞার আলােকেই আমরা অর্জন করতে পারি উচ্চতম ঐশীজ্ঞান এবং সঠিক ও সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে পারি আমাদের জীবনকে। সুতরাং এরপর আবার নবিদের প্রয়ােজন কী? সব মানুষকে পরিচালনার জন্য কতিপয় মানুষকে সৌভাগ্য প্রদানের কোনাে যুক্তি নেই।'

    এই মত পােষণের জন্যই তৎকালীন রক্ষণশীল গােষ্ঠী তাকে অধার্মিক, ও পৌত্তলিক আখ্যা দিয়েছিল। দার্শনিক হিসেবে আল রাজির চিন্তার সঙ্গতি ছিল না বলে অনেকে অভিযােগ তুলেছিল। দর্শনের নামে তিনি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযােগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।

    আল রাজির দৃষ্টিভঙ্গি ছিল পুরােমাত্রায় যুক্তিবাদী। যুক্তির ক্ষমতা ও ফলপ্রসূতায় ছিল তাঁর অগাধ আস্থা। তবে তিনি মানুষের অস্তিত্ব, অধিকার স্বাধীনতা ও প্রগতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। বিশ্বাসী ছিলেন এক পরম বিজ্ঞ অস্তিতে। গতানুগতিক ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কোনাে যুক্তি আছে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন না।

    আল রাজির জীবনের শেষ দিনগুলাে কেটেছে খুব দুর্দশায়। তাঁর চোখে প্রথমে ছানি পড়ে, তারপর তিনি গ্লুকোমায় আক্রান্ত হন। তাঁর চোখের অসুস্থতাজনিত বিপর্যয়ের শেষ হয় অন্ধত্বে। তাঁর অন্ধত্বের কারণটি ধোঁয়াশাতেই রয়ে গেছে।

    কোনাে কোনাে তথ্যমতে, সেই সময়ে গুটিবসন্ত মহামারি আকার ধারণ করেছিল। মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, গুটিবসন্ত আল্লাহর লানত বা অভিশাপ। আল রাজি ছিলেন গ্রীক দর্শনের অনুরাগী। তিনি বিভিন্ন গ্রীক বই অনুবাদ করে ও নিজের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রয়ােগ করে গুটিবসন্ত প্রতিরােধের কার্যকরী উপায় ব্যাখ্যা করেন। তিনিই প্রথম চিকিৎসক, যিনি হাম এবং গুটি বসন্তকে আলাদা রােগ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এর আগে দুটো রােগকে একই ভাবা হতাে। হাম এবং গুটিবসন্ত সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ স্থান পেয়েছে তার আল জদারী ওয়াল হাসবাহ গ্রন্থে। বইটিতে তিনি লেখেন, কিছুদিন আগেও বুখারার আনন হাজারে হাজারে মরেছে। সৃষ্টিকর্তা এগিয়ে আসেননি। কিন্তু আমি আল রাজি কথা দিলাম, এখন থেকে এই রােগ আর তােমাদের মারতে পারবে না। এই লেখার কারণে রক্ষণশীলরা বুখারার আমিরের কাছে রাজির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযােগ করে। রাজিকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করা হলাে অভিযােগ সত্য কিনা। রাজি বললেন, যা সত্য আমি তাই লিখেছি। আমির বললেন, আল রাজির মতাে মুরতাদকে (ধর্ম ত্যাগকারী) চরম শাস্তি দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হলাে আল রাজি যে বই রচনা করেছেন সে বই দিয়েই তার মাথায় আঘাত করা হবে, যতক্ষণ সেই বই কিংবা আল রাজির মাথা দুটি একটি ছিন্ন না হয়। আমিরের নির্দেশে রাজির মাথায় তার রচিত বই দিয়েই একনাগাড়ে প্রহার করা হচ্ছিল । বইয়ের শত মলাটের আঘাতে আঘাতে একসময় রাজির মাথা রক্তাক্ত হয়ে যায়। রক্তাক্ত রাজিকে অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। অসুস্থ ও মারাত্মকভাবে রক্তশূন্যতার কারণে পরবর্তীকালে নষ্ট হয়ে যায় তার দুই চোখ। 

    জন্মগতভাবে মুসলিম হলেও তিনি কিছুটা হলেও বৈদিক আধ্যাত্মিকতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাই আমরা তাকে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবেই গণ্য করবো। এই মহাত্মার জন্য বৈদিক আর্য সমাজের পক্ষ থেকে থাকলো শতকোটি প্রণাম।