• সর্বশেষঃ

    বর্ণ জন্মে অথবা কর্মে ?


    জন্মকাল হতে মৃত্যুকাল পর্যন্ত যা স্থির থাকে তাকে জাতি বলে। জাতির কোন পরিবর্তন হয় না, যথা মানুষ্যজাতি, পশুজাতি। মানুষ, পশু হতে পারে না, আর পশু? সেও মানুষ হতে পারে না। যার যা জাতি সে সেই জাতিই থাকবে । বর্ণ শব্দের অর্থ হলাে স্বীকৃত, যা স্বীকার করা হয়েছে। বর্ণ যখন গুণ কর্মানুসারে স্বীকৃত, সে কারণে যার যেমন গুণ কর্ম হবে সে সেই বর্ণের হবে। ঈশ্বর জাতি সৃষ্টি করেছেন। তবে একথা সত্য যে ভগবান মানব সমাজকে গুণকর্মানুসারে বর্ণের বিভাগ করার উপদেশ বেদজ্ঞান দানের মধ্য দিয়ে দিয়েছেন।

    বেদ শরীরের দৃষ্টান্ত দিয়ে উপদেশ দিয়েছেন- ব্রাহ্মণােস্য মুখমাসীৎ বাহু রাজন্যঃ কৃতঃ। উরূ তদস্য যদ বৈশ্যঃ পদভ্যাং শূদ্রো অজাযতা।। (যজু ৩১ অঃ ১১ মঃ) অর্থাৎ, সমাজরূপী দেহের মুখ ব্রাহ্মণ স্বরূপ, বাহু ক্ষত্রিয়, উদর বৈশ্য এবং পা ‘শূদ্র' তুল্য।

    এই দৃষ্টান্ত দ্বারা আমরা জানতে পারি যে, শরীরের অঙ্গের মধ্যে 'মুখ’- জ্ঞান প্রধান অঙ্গ, কেননা- মুখে কান, নাক, চোখ, জিভ প্রভৃতি সমস্ত জ্ঞানেন্দ্রিয় বিদ্যমান। আর এক কথা শীত ও বর্ষা ঋতুতে সমস্ত শরীর। কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়, কিন্তু মুখ সকল সময় অনাবৃত থাকে। মুখ শীত, গ্রাম, বর্ষা, আদি সকল ঋতুতেই নিজেকে অনাবৃত রাখে এবং শীত, গ্রীষ্ম সহ্য করে। শুধু তাই নয়, মুখ যা কিছু গ্রহণ করে সে কোন কালেও নিজের কাছে সঞ্চয় রাখে না। বরং সে অন্যকে দান করে। ইহা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যার "যার কাছে জ্ঞান , তপস্যা ও ত্যাগ আছে- সেই ব্রাহ্মণ।" 

    বাহুকে ক্ষত্রিয় সংজ্ঞা দেওয়ার অর্থ এই যে, বাহু অর্থাৎ হাত 'বল’ প্রধান। শরীরে যখনই কোনও আক্রমণ হয়, তখনই প্রথমে হাত আক্রান্ত স্থানকে রক্ষার্থে উপস্থিত হয়। অতএব যে ন্যায়ানুসারে স্বীয় বল বা পরাক্রম দ্বারা প্রজার রক্ষা করে সেই 'ক্ষত্রিয়'।

    পেটকে বলা হয়েছে ‘বৈশ্য'। কেননা পেট সমস্ত ভােজ্য নিজের মধ্যে সঞ্চয় করে। তারপর তাকে যথাযথভাবে সঞ্চিত ধনকে বিতরণ করে থাকে, সেই বৈশ্য পদবাচ্য।

    'পা' কে শূদ্র নামে অভিহিত হয়েছে। কেননা, প্রথমত- পা সমস্ত শরীরের বােঝা নিয়ে বেড়ায়, দ্বিতীয়ত - পরিশ্রম করে, মাথা, পেট, হাত প্রভৃতি অঙ্গ যেখানে তারা যেতে চায় সেখানে তাদের পৌছে দেয়। শূদ্রের কাছে না আছে ‘জ্ঞান আর না আছে ‘ধন’ যে, তা দিযে সে কাজ করবে। তার কাছে পরিশ্রম করার শক্তি আছে মাত্র। মােট কথা, যে সেবক সে শূদ্র।

    ব্রাহ্মণ জ্ঞান দ্বারা, ক্ষত্রিয় বল দ্বারা, বৈশ্য ধন দ্বারা আর শূদ্র পরিশ্রম দ্বারা মানব সমাজের সেবা করে এখানেই বর্ণের বর্ণত্ব। একথা সত্য যে, মানুষের মধ্যে চতুবর্ণের যােগ্যতা আছে, কিন্তু যে ব্যক্তির মধ্যে যে গুণের প্রাধান্য দেখা যায়, তারই ভিত্তিতে বর্ণকে স্বীকার করা হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে কোনও না। কোনও একটা প্রধান গুণ অবশ্যই থাকে। কেহ ধনবান, আবার কেহ গুণবান, কেহ বলবান আবার কেহ সেবা পরায়ণ সেবক। তারই ভিত্তিতে বর্ণকে স্বীকার করা হয়। বেদ বীজাকারে বর্ণের এক অলংকারিক রূপদান করেছেন মাত্র। বুদ্ধিমান সেই অলংকারের রহস্যোদঘাটন করবে।

    যার মধ্যে শম, দম, তপ, পবিত্রতা, শান্তি, কোমলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং আস্তিক্য পাওয়া যাবে সে ব্যক্তি ব্রাহ্মণ। যার মধ্যে বীরতা, তেজস্বিতা, ধীরতা, দক্ষতা, যুদ্ধক্ষেত্রে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করা তথা দানশীলতা এবং ন্যায়কারিতা, ঈশ্বরের ন্যায় পরায়ণতার ভাব পাওয়া যাবে সে ব্যক্তি ক্ষত্রিয়। যার মধ্যে কৃষি, গােরক্ষা, দান এবং ব্যবসা বাণিজ্যে নিপুণতা পাওয়া যাবে সে বৈশ্য। আর যে নিজ শরীর দ্বারা সেবায় পটু সে ব্যক্তি শূদ্র।

    যারা জন্মগত ভাবে বর্ণ স্বীকার করে তাদের মতেও ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই তিন বর্ণকে দ্বিজ বলা হয়। শূদ্রকে কর্মবীর স্বীকার করা হয়ে থাকে। দ্বিজ শব্দের অর্থ যার দুবার জন্ম হয়। 'দ্বাভ্যাং জাযতে ইতি দ্বিজঃ'। জগতে যাদের দুবার জন্ম হয়েছে তারাই দ্বিজ পদবাচ্য। যথা দাত এবং পাখি দ্বিজ। ছােট ছেলের দুধের দাত পড়ে যায়, দ্বিতীয় বার আবার দাত জন্মায়। পাখী দ্বিজ কেননা তাদের দুবার জন্ম হয়। পাখির প্রথম ডিমের মধ্যে জন্ম হয়, তারপর ডিম ভেঙ্গে দ্বিতীয় বার জন্ম হয়। মানুষের দুবার জন্ম হয় কেমন করে? মাতা পিতার ঔরসে তাে সকলেরই জন্ম হয়ে থাকে। মানুষ প্রথমে সকলেই শুদ্র অর্থাৎ প্রথম জন্ম, আর দ্বিজ অথাৎ দ্বিতীয় বার জন্ম হয়। প্রথমে মাতা-পিতার দ্বারা ভৌতিক জন্ম এবং দ্বিতীয়বার আচার্য দ্বারা জন্ম লাভ হয়, তাই তাকে বলা হয় দ্বিজ। আচার্য তার যােগ্যতা অনুুুুযায়ী বর্ণ দান করেন। প্রকৃত পক্ষে প্রাচীন কালে বর্ণ নিরূপণের এরূপ ব্যবস্থা ছিলো । সকলেই আপন আপন পুত্রদের গুরুকুলে পাঠাতাে। পরে লেখাপড়া শিক্ষা করে যার যেমন যােগ্যতা হতাে তদনুসারে আচার্য তাদের বর্ণের উপাধী দিতেন। এর কোন মানে নেই যে, ব্রাহ্মণের সন্তান ব্রাহ্মণ এবং শূদ্রের সন্তান শূদ্রই হবে? ডাক্তারের সন্তান ডাক্তার এবং শিক্ষকের সন্তান শিক্ষক এবং উকিলের সন্তান উকিল হয় কি? কিন্তু তা তাে হয় না, কেননা পিতার ন্যায় যােগ্যতা যদি তার সন্তানের মধ্যে না থাকে তাহলে সে কি করে তার পিতার আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে?

    গাধা এবং ঘােড়া এগুলি জাতি। জাতি হতে জাতির সৃষ্টি হয়ে থাকে কিন্তু বাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এগুলাে বর্ণ তাই কর্মানুসারে এদের পরিবর্তন ঘটে। জাতির কোনও কালেও পরিবর্তন ঘটে না। যথা- ঘােড়া কোন কালেও গাধা হবে না। গাধা কোন কালেও ঘােড়া হবে না। এরা যেমনটি তেমনই থাকবে । যদি বর্ণের পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় কেমন করে মুসলমান বা খ্রিষ্টান হয়ে যায়? এই ভারতবর্ষের মুসলমানদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ আছেন যারা হিন্দু হতে মুসলমান হয়েছে। অথচ এদের মধ্যে চার বর্ণের অস্তিত্ব ঠিকই আছে। যদি বলি এদের পরিবর্তন ঘটল কেমন করে? বর্ণ যদি ভগাবনের তৈরীই হয়ে থাকে, তাহলে তাতে পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়। ভগবানের তৈরী আম কোনও দিন কোথাও কোনও দিন হাতি হয়েছে কি? জগতের যে কোনও বস্তুকে আমরা দেখি না কেন, সবাই পরিবর্তনীয়। ব্রাহ্মণ যদি ভগবানের তৈরী হতাে তাহলে সে ব্রাহ্মণই থাকতাে এবং মুসলমান মুসলমানই থাকতাে। গুণ ও কর্ম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণ থাকে না এবং মুসলমানও ইসলাম ধর্ম পালন না করলে মুসলমান থাকে না। নর্দমায় পড়ে গেলে সন্দেশ আর সন্দেশই থাকে না। নর্দমায় যাই পড়ুক না কেন, সে কি আর কোন কাজে লাগবে না? সন্দেশ নর্দমায় পড়ে গেলে খাদ্যের অযােগ্য হতে পারে, কিন্তু টাকা পয়সা নর্দমায় পড়লে নিশ্চয়ই আর অব্যবহার্য থাকে না। সন্দেশের উদাহরণ বর্ণ সম্বন্ধে প্রযােজ্য। যথা নর্দমায় সন্দেশ পড়ে গেলে যেমন সন্দেশ নষ্ট হয় কিন্তু সে জিলাপী হয়ে যায় না, তেমনি নর্দমায় মানুষ পড়লে সে মানুষ থাকে সে গাধা বা ঘােড়া হয়ে যায় না। যার যা সৃষ্ট আকৃতি তার পরিবর্তন হবে কেমন করে? জাতি এবং বর্ণের এই পার্থক্য যে, জাতি আকৃতি দ্বারা প্রমাণিত এবং বর্ণ গুণ ও কর্মদ্বারা প্রমাণিত। বর্ণ গুণ ও কর্মদ্বারা জানা যায়। যদি বর্ণ আকৃতি দ্বারা তা জানা যেতাে তাহলে জিজ্ঞাসা করে জানবার কি প্রয়ােজন ছিল যে, আপনি কোন বর্ণের? আপনি ব্রাহ্মণ না ক্ষত্রিয়? আসল কথা তাে এখানেই। এই কথা দ্বারাই তাে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বর্ণ, জন্ম দ্বারা নির্মিত নয়, কর্ম দ্বারা নির্মিত। ঈশ্বর যদি জন্ম দ্বারা বর্ণ তৈরী করতেন তাহলে পরিচয়ের জন্য তাতে কোনও কোনও পার্থক্য অবশ্যই রেখে দিতেন। ঈশ্বরকৃত যত পদার্থ ইহজগতে দেখা যায়, তাদের প্রত্যেকটির মধ্যে তাদের আপন আপন পরিচয়ের জন্য সেই সমস্ত পদার্থে আকৃতিগত ভেদ রেখেছেন। শ্রেণীবদ্ধ ভাবে হাতি, ঘােড়া, উট, মেষ, হরিণ, শূকর, টিয়া, পায়রা প্রভৃতি পশু পাখীদের দাঁড় করিয়ে দিলেও দেখা যাবে একটা ছােট ছেলে সেও তাদের আকৃতিগত ভেদ দেখে বলে দেবে- এটা গরু, এটা ঘােড়া, এটা হাতি। এই স্থানে আপেল, কমলা লেবু, আম, পেয়ারা, ডালিম প্রভৃতি ফল রেখে দিলে প্রত্যেক মানুষ তাদের আকৃতি দেখে বলে দেবে কোনটা আম, কোনটা ডালিম, কোনটা পেয়ারা আর কোনটা কমলালেবু। কিন্তু যদি চার বর্ণের দুইশত মানুষকে শ্রেণীবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় তাহলে অপারিচিত মানুষ তাদের দেখে কখনাে বলতে পারবে না যে, তারা সব কে কোন বর্ণের। বর্ণ কর্মাশ্রিত, জন্ম বা রূপ, রঙের আশ্রিত নয়। যদি রূপ রং দেখেে বর্ণের পরিচয় পাওয়া যতো তাহলে ব্রাহ্মণের রং ফর্স হতো, বা রূপ, রঙের আশ্রিত নয়। যদি রূপ ও রঙ দেখে বর্ণের। ওয়া যেতাে তাহলে ব্রাহ্মণের রং ফর্সা হতাে, ক্ষত্রিয়ের রং লাল হতাে, বৈশ্য কালাে রং এর হতাে। কিন্তু তাতাে হয় না ।

    কাশ্মীরের মেথর এবং মাদ্রাজের ব্রাহ্মণকে পাশাপাশি রেখে দেখলে দেখা যাবে মেথর ফর্সা এবং সুন্দর, আর ব্রাহ্মণ লােহার মতােই কালাে। ব্যঙ্গ করে বলতে শােনা যায় - একেবারে কালাে চাটু। কোয়েটা এবং বিহারের ভূমিকম্পে শত শত কচি ছেলে বাড়ীর নীচে চাপাপড়ায় তাদের মাটির নীচে হতে বের করা হল । সেই সব কটি সন্তানদের মধ্যে নানা বর্ণের সন্তান ছিল। তাদের মা-বাপ আত্মীয় স্বজন কারও কোন খোজ ছিল না। এই সকল সন্তানেরা কোন বর্ণের ছিল তা চিনবার উপায় ছিল কি? যদি রূপ, রং এবং আকৃতি ও সৌন্দর্যের আধারে বর্ণ প্রমাণিত হতাে। তাহলে গরু ও ঘােড়ার বাচ্চার মত মানুষদেরও চিনে ফেলা যেতাে। তারা কে কোন বর্ণের? 

    দুই আর দুই এ চার হয় এই যােগ ফল চিরসত্য। ঈশ্বর যদি জন্মের আধারে বর্ণ ব্যবস্থা করতেন, এবং কারও মধ্যে কোনও পার্থক্য না রাখতেন, আর শুধু এইটুকু করতেন ব্রাহ্মণের শরীর লম্বায় আট ফুট হবে, ক্ষত্রিয়ের ছয় ফুট, বৈশ্যের হবে চার ফুট করে, তাহলে সঠিক পরিচয় পাওয়া যেতাে। অথবা যদি তিনি শারীরিক তারতম্য করে দিতেন তাহলেও বুঝতে পারা যেতাে সঠিক পরিচয় পেতে কোনও অসুবিধা হত না। ব্রাহ্মণের শরীরকে করতেন চার মন ওজনের, ক্ষত্রিয়ের তিন মন, বৈশ্যের ছয় মন আর শূদ্রের একমন করতেন, যাতে নাকি মানুষের বর্ণের পার্থক্য জানা যেতাে। কিন্তু তিনি যে মানব জাতির উন্নতি কল্পে গুণ ও কর্মানুসারে বর্ণ ব্যবস্থা করার উপদেশ দিয়েছেন, তিনি ঐ বিষয়ে পার্থক্য রাখবেনই বা কেন? বর্ণে কেহই ছােট বড় নয়। আপন আপন কর্তব্য কর্মে সকলেই বড়। যথা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ। বিচার বিবেকের সময় মস্তক বড়, যখন রক্ষার সময় আসে তখন হাত বড়, যখন খাদ্যকে গ্রহন এবং শরীরের অঙ্গে যথাযােগ্য খাদ্যসার পাঠাবার সময় আসে তখন পেট বড় এবং যখন পরিশ্রম দ্বারা শরীরের ভার বহনের বা গমনাগমনের সময় আসে তখন পা বড় হয়। এইভাবে মানুষ যখন সমাজকে জ্ঞানের দ্বারা সেবা করতে চায় তখন ব্রাহ্মণ বড়। যখন বলের দ্বারা সেবা করার সময় আসে তখন ক্ষত্রিয় বড়। যখন ধন দ্বারা সেবা করার সময় আসে তখন বৈশ্য বড় এবং যখন শরীরিক পরিশ্রম দ্বারা সেবা করার সময় আসে তখন শুদ্র বড়। বাস্তবিক পক্ষে স্বতন্ত্র রূপে বর্ণের মধ্যে পরস্পর কেহ কাহারও অপেক্ষা বড়ও নয়, ছােটও নয়। স্বতন্ত্ররূপে ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণদের মধ্যে, ক্ষত্রিয় ক্ষত্রিয়দের মধ্যে, বৈশ্য বৈশ্যদের মধ্যে এবং শূদ্র শূদ্রদের মধ্যে যােগ্যতা অনুসারে ছােট বড় থাকতে পারে। কিন্তু স্বতন্ত্র রূপে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য প্রভৃতি বর্ণের মধ্যে ছােট বড় সম্বন্ধ কি করে থাকতে পারে? যেমন নাকি দু’জন ময়রা। একজন পরিশ্রমিক নেয় প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা আর একজন নেয় মাসে এক হাজার টাকা। এদের মধ্যে কাকে বড় মানা যেতে পারে এবং কি হিসাবে - কাজ হিসাবে। একজন ভাল কারীগর হিসাবে বড়, আর একজন মন্দ কারীগর হিসাবে ছােট। কিন্তু যদি কেহ বলে ময়রা বড় না দর্জি বড়? দর্জি একশত ঢাকা রােজ নেয় অতএব দর্জি বড়। এদের মধ্যে কোথায় ময়রা আর কোথায় দর্জি? ময়রা আপন ক্ষেত্রে বড়। আপন আপন কর্তব্য কর্মে উভয়েই বড়। তবে দর্জিদের মধ্যে তাদের যােগ্যতা অনুযায়ী অবশ্যই বড় ছােট স্বীকার্য। ঠিক তেমনি যােগ্যতা অনুসারে একই বর্ণের দুই ব্যক্তির মধ্যে ছােট বড় থাকা সম্ভব। কিন্তু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রের মধ্যে ছােট বড়র কোনও সম্বন্ধ থাকতে পারে না। কেননা তাদের গুণ, কর্ম ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের। সে ক্ষেত্রে সকলেই আপন আপন কর্তব্য পালনে বড়, ছােট কেহই নয়। জগতের সর্বত্র গুণ কর্মানুসারে বর্ণ ব্যবস্থা আছে। একথা অবশ্যই পৃথক যে, তাদের নাম ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র না হয়ে মিশনারী (Misionary), মিলিটারী (Military), মার্চেন্ট (Marchant) এবং মিনিয়ল (Menial) রাখা হয়েছে। এই শ্রম বিভাগ বা কর্ম বিভাগের সিদ্ধান্ত, সমস্ত বিশ্বে পরিব্যাপ্ত। আর এই বিভাজনের নাম বর্ণ ব্যবস্থা।

    লেখাঃ আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী
    পুস্তকঃ বেদালোক