• সর্বশেষঃ

    কমিউনিস্ট রাজনীতি হচ্ছে মার্কসবাদের আড়ালে ইসলামী এজেন্ডা পূরণের রাজনীতি?


    ভারতীয় উপমহাদেশের  কমিউনিস্ট রাজনীতি হচ্ছে মার্কসবাদের আড়ালে ইসলামী এজেন্ডা পূরণের রাজনীতি?

    ফেইসবুকে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পাৰ্টিকে আমি 'বাংলাদেশ মুসলিম কমিউনিষ্ট পার্টি' নাম দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। ঢাকার মির্টফোর্ট থেকে পাশ করা ডাক্তার প্রলয় ভট্টাচার্য্য যিনি এখন কোলকাতায় প্র্যাকটিস করেন, এর উত্তরে লিখেছেন, পূর্ব বাংলার হিন্দুদের উদ্বাস্তু হবার যন্ত্রনায় কমিউনিষ্টদের অবদান অনেক। প্রলয় ভট্টাচার্য্য একদা সিপিবি করতেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান আন্দোলনে তিন রকম গোষ্ঠীর সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল। এরা হলো, মুসলিম লীগ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি। কমিউনিষ্ট ও মুসলমানরা আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকারের নামে পাকিস্তান সৃষ্টিকে সমর্থন করেছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির পর দীর্ঘ দিন ভারত ও পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টি পৃথক হয়নি। বরং এক পার্টি হিসেবে কাজ করেছিল। এই সময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ছিলেন বি.টি.রণদিভে‌। কমিউনিস্ট পার্টি তখন ডাক দেয়: "ইয়ে আজাদি ঝুঠা হ্যায়, লাখো ইনসান ভূখা হ্যায়"। এই স্লোগান দিয়ে তারা কৃষকদের নিয়ে তেভাগা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই স্লোগান ও আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সরকার পুরোপুরি কাজে লাগায়। সাঁধের পাকিস্তানের আজাদী ঝুটা হ্যায় সরকার তা মানতে পারেনা, তারা কমিউনিষ্টদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

    ঐসময়, দু'একজন বাদ দিলে কমিউনিষ্ট মানেই হিন্দু, সুতরাং সরকারের রোষ পড়ে হিন্দুর ওপর, একে হিন্দু, তায় কমিউনিষ্ট, দুই অপরাধ? তেভাগা আন্দোলনে কমিউনিষ্টদের প্রভাবটাও ছিল মূলত: হিন্দু কৃষকদের ওপর। ফলে সরকারের এই আক্রমণ খুব সহজেই নতুন পাকিস্তানের সাধারণ মুসলমানদের সমর্থন লাভ করে। হিন্দু কমরেডরা অনেকেই তখন রাতের অন্ধকারে ভারতে পালিয়ে যান। হিন্দু কৃষকরা যারা এইসব নেতাদের পেছনে আন্দোলন করতেন, নেতা পালিয়ে যাওয়ায় তারাও পালিয়ে যান? তাই বলা যায়, পূর্ব-পাকিস্তান থেকে হিন্দু বিতরণে কমিউনিষ্টদের অপরিণামদর্শী রাজনীতিও কিছু কম দায়ী নয়। এ কথা ভুললে চলবে না যে শত দমন পীড়ন সহ্য করেও কিউবা, ভিয়েতনাম, চীনের কমিউনিষ্টরা কিন্তু মাটি কামড়ে লড়াই করেছেন, দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাননি। 

    পরবর্তীতে পার্টির সিদ্ধান্ত হলো কলকাতা থেকে কিছু মুসলমান কমরেড পাকিস্তান যাবেন এবং সেখানে পার্টি গড়ে তুলবে। এদের মধ্যে ছিলেন মনসুর হাবিবুল্লাহ, আবদুল হালিম-এর মত পোড় খাওয়া কমিউনিষ্টরা। রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চলার পর হাবিব সাহেব পাকিস্তান সরকারকে বন্ড সই করে দেন যে তিনি আর কখনো সেখানে আসবেন না এবং জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ভারতে চলে যান। বাকিদেরও প্রায় একই পরিণতি হয়েছিল। বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির এক সময়ের সভাপতি আহসানউল্লাহ হটাৎ করে একদিন হজ্ব করে এলেন। বস্তুবাদী দর্শন শিকেয় তুলে অনেক বাম নেতা তখন হজ্ব করেন। কমিউনিষ্টরা ভাববাদী দর্শনের বিরোধিতা করে ধর্মকে আফিম বলে অভিহিত করে থাকেন, কিন্তু নেতারা যখন হজ্ব করেন এবং ধর্মকে নিজের জীবনে প্রয়োগ করেন, তখন কমিউনিষ্ট পার্টির অবস্থা বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়? 

    পলাশ ভট্টাচার্য্য নামে অন্য একজন লিখেন, 'আমি মনে করি ভারতীয় উপমহাদেশের কমিউনিস্ট রাজনীতি হচ্ছে মার্কসবাদের আড়ালে ইসলামী এজেন্ডা পূরণের রাজনীতি। অলোক ভট্টাচার্য্য লিখেছেন: শ্যামেন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য আমার বাবা। প্রলয় আমার ছোট ভাই। দু'জনেই কলকাতাবাসী। তিনি বলেন, "স্বাধীনতা সংগ্রামী চরিতাভিধান" বইটিতে শ্যামেন্দ্র বাবু'র কারাজীবন চব্বিশ বছর বলে উল্লেখিত আছে"। অলোক ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘উনসত্তরে আমি ভারতে চলে যাই’। তিনি আরো জানান, তার বাবা শ্যামেন্দ্রবাবু ছিলেন বোয়ালমারি জর্জ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক, আইয়ুব খান তাঁকে বরখাস্ত করেন। অলোক ভট্টাচার্য্য জানান,  শ্যামেন্দ্র ভট্টাচার্য্য তেভাগা আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন, যদিও পার্টির সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেন। তার বক্তব্য ছিলো তেভাগা আন্দোলন হলে প্রচন্ড সরকারী রোষ নেমে আসবে, যা সামাল দেয়া কঠিন হবে; কমিউনিষ্টদের ভারতের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হবে এবং মানুষ আর বাম-আন্দোলন করতে চাইবেনা। তার কথা ঠিক হয়েছিলো। তেভাগা আন্দোলন ব্যর্থ হয়, নেতারা ভারতে পাড়ি জমান। যদিও, অমূল্য লাহিড়ি , শান্তি সেন, সমর সেন, আশু ভরদ্বাজ, বরোদা চক্রবর্তী এবং আরও দু'একজন নেতা মাটি কামড়ে দেশেই থেকেছেন । তাদেরই একজন সত্য মৈত্র এখনও জীবিত (২০১৮) এবং সাতানব্বই বছর বয়সে ঢাকাতে অসুস্থ । তিনি জানান, সত্য মৈত্র সম্পর্কে ২০১১ সালে ঢাকার একটি সংবাদপত্রে আমার একটি লেখা বেরিয়েছিল। 

    তাঁর জীবন নিয়ে একটি সম্পূর্ণ বই লেখা যায়। শুনেছি, রাজবাড়ির বাবু মল্লিক ও শীবেন কুণ্ড সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। অলোক ভট্টাচার্য্য আরো লিখেছেন, ভারতে এসে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তার কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দেয়ার কথাটি সঠিক নহে।  শ্যামেন্দ্রবাবু'র পুত্রদের আমি বলেছি, আপনাদের কথার বাইরে আমি যেটুকু তথ্য দিয়েছি, তা ওয়েব থেকে নেয়া, সেখানে লেখা আছে তিনি ভারতে গিয়ে কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দেন? গুগুলে আপনার বাবা নাম টাইপ করলে আরো কিছু জানতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে নারায়ণ দেবনাথ জানান যে, দৈনিক সংবাদের সম্পাদক প্রয়াত আহমুদুল কবির কমিউনিষ্ট পার্টির রাজনীতি করতেন, তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার আসামী হেলাল রাজাকার-কে নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। এটা হচ্ছে কমিউনিষ্ট পার্টির রাজনীতি? নারায়ণবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলি, আমি আহমদুল কবিরকে চিনতাম, কারণ ১৯৭৯-৮১, প্রায় তিন বছর আমি দৈনিক সংবাদে সাংবাদিক ছিলাম। আপনার বর্ণিত ঘটনা অনেকে জানেন, আমার ভুল না হলে, কার্তিক চ্যাটার্জী তার এলাকার লোক, তিনিও সংবাদে চাকুরী করতেন। আহমদুল কবিরকে আপনি ‘ভদ্রলোক কমুনিস্ট’ বলতে পারেন। সর্বশেষ বলতে চাই, বাংলাদেশের বাম-রা বিভ্রান্ত। মনি সিং-ফরহাদ’র পর বিভ্রান্ত বেড়েছে বহুগুন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সত্তর বছরের কমিউনিষ্ট শাসনে মুসলমানরা কমিউনিষ্ট হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম শাসনেও নয়? মুসলমান কমিউনিষ্ট হয়না (সামান্য ব্যতিক্রম আছে), বাংলাদেশেও তাই; ইসলাম সামনে এসে দাঁড়ালে বাংলাদেশী কমিউনিষ্টও ‘মুসলমান’ হয়ে যায়? 

    লেখাঃ Sitangshu Guha
    guhasb@gmail.com;
    Weekly Porichoy, 04 Jan 2020.