• সর্বশেষঃ

    তথাকথিত শুদ্র ও সর্বস্তরের সনাতনীদের প্রতি বাংলাদেশ বৈদিক আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য সুভাষ শাস্ত্রীর আহ্বান।


    "শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ" হে শূদ্ররূপ মনঃ কল্পিত অখ্যায় অভিহিত অমৃতের পুত্রগণ, স্বর্গচ্যুত দেবনন্দনগণ, দিব্যধামবাসী জ্যোতির তনয়, কন্যাগণ, তেমরা শ্রবণ কর, ওঠ জাগ্রত হও। কুম্ভকর্ণের মত কতকাল আর তোমরা আপনার স্ব-রূপ ভুলিয়া মোহ নিদ্রায়, মূর্খতা ও অজ্ঞানতার ঘোর আলস্যে অচেতন থাকিবে? একবার চক্ষু মেলিয়া দেখো, জগতের কি মহাপরিবর্ত্তন, কি বিচিত্র জগতের সঞ্চার হইয়াছে। বিংশ শতাব্দীর সমুদয় আলস্য, জড়তা, নৈরাশ্য, মোহ অজ্ঞাতা, কুসংস্কার, ক্লীবতা, কাপুরুষতা, ভয়, ডর লইয়া কেনো বাঁচিয়া আছো? অমানিশার সুদীর্ঘ রজনীর অবসান হইয়াছে। নবযুগের বার্তা লইয়া, নবীন প্রাণস্পন্দন লইয়া, নতুন সঞ্জীবনী শক্তি লইয়া একাবিংশ শতাব্দীর সুপ্রভাত আগমন করিয়াছে। ইহাকে সাদরে হৃদয় মন্দিরে বরণ করিয়া লও। 

    অতীতে এক বর্ণ ছিলো, ব্রাহ্মণ। কিন্তু কালক্রমে ঈশ্বর চার বর্ণের বিকাশ ঘটাইলো গুণ ও কর্ম অনুসারে, যেন কর্ম বিভাজনের মাধ্যমে উন্নত সমাজ গঠন করা যায়। প্রতিটি মানুষের ভেতরই চার বর্ণের গুণ আছে। যে ব্রাহ্মণ ভালো রাজকার্য পরিচালনা করে সে শুধু ব্রাহ্মণ নন ক্ষত্রিয়ও বটে, কোনো ক্ষত্রিয় যদি ভালো ব্যাবসা করিতে পারে তবে সে বৈশ্য বটে। ব্রাহ্মণ,  ক্ষত্রিয়,  বৈশ্য এ তিন বর্ণের লোক যদি কায়িক পরিশ্রম করিতে পারে তবে তাহারা অবশ্যই শুদ্র। তবে যার ভেতর যে গুণ প্রবল তিনি সেই বর্ণের বলিয়া বিবেচিত হবেন। এসব জন্ম দ্বারা নির্ধারণ হয়না নির্ধারণ হয় কর্ম এবং গুণ দ্বারা।

    বর্ণের ভেতর ছোট বর্ণ, বড় বর্ণ বলিয়া কিছুই নাই। নিকৃষ্ট ব্রাহ্মণ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট শুদ্র হওয়া উত্তম। শুদ্ররাও সমাজে সমান মর্যাদার দাবিদার। 

    যে ব্যক্তি জ্ঞানে সঠিক ব্রাহ্মণ, শাসনে সঠিক ক্ষত্রিয়, ব্যবসায় সঠিক বৈশ্য এবং শ্রমে সঠিক শূদ্র সেই ব্যক্তিই তো শ্রেষ্ঠ মনুষ্য। 

    যোগ্যতা থাকিলে শুদ্রের ছেলে-মেয়ে ব্রাহ্মণ হবে। যোগ্যতা না থাকিলে ব্রাহ্মণের ছেলে-মেয়ে হবে শুদ্র। এটাই ঈশ্বরের বিধান। এই বিধান অমান্যকারীদের সজোরে চপেটাঘাত করো। 

    ঈশ্বরের বিধান যারা বিকৃত করিয়াছে তাদের পরাভূত করিয়া ধর্মকে রক্ষা করো। ধর্ম তেমাকে রক্ষা করিবে। তোমার মর্যাদা তোমাকে ফিরাইয়া দিবে। 

    তেমাদের অধিকার রক্ষার ১৯ শতকে এক প্রকৃত  ব্রাহ্মণের জন্ম হইয়াছিলো। দয়ানন্দ সরস্বতীর তাঁর নাম। তিনি ডাক দিয়েছিলেন সনাতন সমাজকে এসব কুপ্রথা থেকে মুক্ত করার। শুদ্রদের বেদমন্ত্র পাঠ করিয়ে ব্রাহ্মণ কিভাবে তৈরী কারা যায় তা তিনি হাতে কলমে দেখাইয়া দিলেন। তৈরী করলেন "আর্য সমাজ" (noble society)।

    ১৯৫৪ সালে আরেক সুপুরুষের জন্ম হইলো তৎকালীন পাকিস্তানে, বর্তমান বাংলাদেশে। তিনি বীর মুক্তিযুদ্ধা সুভাষ। আচার্য  সুভাষানন্দ জী মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই এই আন্দোলনে সামিল হলেন। প্রচার করলেন ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শুদ্র ভাই ভাই। সবাই এক ঈশ্বরের সৃষ্টি। ১৯৬৫ সাল থেকে জাগরণী সঙ্ঘের ব্যানারে আর্য সমাজের কর্যক্রম পরিচালনায় অংশ নিতে লাগলেন। ১৯৮৫ সালে গঠন করলেন "বৈদিক আর্য সমাজ"। এই সংগঠন পরিচালনা করিবার সময় এতোই বাধার সম্মুখীন হতে হইয়াছিলো যে প্রায় সময় " বৈদিক আর্য সমাজ" থেকে আর্য বাদ দিয়ে "বৈদিক সমাজ" লেখা হইতো। সেই ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু।তিলে তিলে পার হইয়া গেল অনেক বৎসর।মানুষে মানুষে ভেদাভেদ  দূর করা আর  ধর্ম  জ্ঞানহীন হিন্দুদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনিবার জন্য  বীর  মুক্তিযোদ্ধা , একাধারে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বক্তা, সমাজ সংস্কারক, পবিত্র বেদোপদেশক, প্রধান পরীক্ষক বাংলা  ১ম পত্র  যশোর বোর্ড, কবি, লেখক, এয়ার স্কাউট লিডার উডব্যাজ পার্টমেন্ট প্রাপ্ত , প্রশিক্ষক বাংলা মাধ্যমিক ( TOT), (CPD-1), (CPD-2), (TQI) "আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী" কাজ করিয়া যাইতেছেন। তিনি প্রায় ৩৮ বৎসর — বাংলাদেশ বিমান বাহিনী শাহীন কলেজ, যশোরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন। 

    সমাজকে জাগ্রত করিবার নিমিত্তে তিনি কলম ধরিয়াছেন। তাহার বইয়ের ভেতর তুলিয়া ধরিয়াছেন প্রকৃত ধর্মের স্বরূপ। জাত পাতের জাতাকলে সহজ সরল মানুষদের বিভক্ত করিয়া কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী কিভাবে ফায়দা লুটিয়াছে তা তার — বেদালোক, আনন্দলোক ইত্যাদি বই পাঠ করিলে জানিতে পারিবেন। তাহার সাফ কথা — এসব ভণ্ড বামুন, পুরোহীতদের পা ধরিয়া শত বৎসর বাঁচিয়া থাকার চেয়ে একদিন এদের দমন করিয়া মারা যাওয়াও শ্রেয়। 

    তিনি বারংবার বলিয়া থাকেন — রামমোহন, বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্রের বই মানুষ পড়েনা। জানিতে পারেনা যে তারা কুসংস্কার দূর করার জন্য কি কিরিয়া গিয়াছেন। উনাদের গ্রন্থ পাঠ করুন। হৃদয়ের অন্ধকার দূর করুন। 

    ভণ্ড গুরুকে মানার চেয়ে — এক ঈশ্বরকে মেনে মা বাবার সেবা করুন ।

    আচার্য সুভাষ শাস্ত্রীর বিনম্র নিবেদনঃ 
    "আমি দীর্ঘ ৪৮ বছর ব্যাপী পবিত্র বেদ,উপবেদ, উপনিষদ এবং গীতার অমৃত বাণী প্রচার করতে গিয়ে গবেষণা করে দেখেছি যে, হিন্দু জনসমাজে শতকরা ৯৮ভাগ মানুষ পবিত্র বেদ কখনো চোখেই দেখেন নি, শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ একটি বেদমন্ত্র বলতে পারেন না বা বেদমন্ত্রের অর্থ জানেন না, শতকরা ৯০ভাগ মানুষ পবিত্র গীতার শ্লোক জানেননা বা একটি শ্লোক পাঠ করতে বললে উচ্চারণ কিম্বা অর্থ কোনটিই সঠিক ভাবে পারেন না। কিছু লোক আছেন যাঁরা গীতাপড়েন ও মানেন বলেন এবং মাঝে মাঝে‘হরে কৃষ্ণ’ বা ‘রাধাকৃষ্ণ’ বুলি আওড়ান,কিন্তু তাঁরা কেউ গীতার একটি শ্লোকও হৃদয়ে ধারণ বা পালন করেন না। অথচ খুব জোরেসোরে ‘গীতা গীতা’ এবং ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ’করেন। মহাত্মা, ধর্মপ্রাণ, নীতিবাদী,শাস্ত্রজ্ঞানী, পণ্ডিত, পবিত্র সাধুব্যক্তি বর্তমানে নেই বললেই চলে।অনেক মূর্খ হিন্দুকে দেখেছি, গীতায় মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মূর্তির আসনে গীতা রেখে তৃপ্তি পান এবংমৃতব্যক্তির বুকের উপরও গীতা রাখেন।বেশিরভাগ তথাকথিত ধর্মপ্রচারক ধর্মের নামাবলী গায়ে জড়িয়ে ধর্মব্যবসায়ী হনএবং ঈশ্বরকে বেচাকেনা করেন। মালা,তিলক, গলায় পৈতা এবং ধর্মীয় লেবাস এমনভাবে শরীরে ধারণ করেন যে, দেখলে মনে হয় বড় সাধু। কিন্তু আসলে এরা প্রতারক ও দানব। মিথ্যাচার, পাপাচার এবং ধর্মের নামে ভণ্ডামি করা এদেরজাত স্বভাব। নিরাকার ব্রহ্মের স্বরূপকে বহু দূরে রেখে হরেক রকমের মূর্তির প্রচার এবং জন্ম নেওয়া মানব ভগবানের প্রচার করেন, ধর্মকে বিক্রয় করেন। শতকরা ৯৮ ভাগ হিন্দু উপাসনা, ধ্যান, প্রার্থনা,হোমযজ্ঞ, অষ্টাঙ্গ যোগসাধনা মোটেই করেন না। পবিত্র বেদে এবং গীতায় ধর্মের যে বিধান রয়েছে তা তাঁরা মানেন না। বর্তমানে ধর্মের নামে চলছে রাতের অন্ধকারে নাচানাচি, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কোলাহল, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা যেগুলো বহিরাচার ওতামসিক আচার। পবিত্র বেদ, উপনিষদ ও গীতার মর্মবাণী প্রচারের বিরুদ্ধে চলছে পৌরাণিক বহিরাচার ও কদর্য তামসিক ভণ্ডামি। হিন্দু সমাজ একেশ্বরের উপাসনা না করে শত শত মূর্তি ভগবানে, ৩৩ কোটিদেব-দেবী এবং নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া মানব ভগবানের পূজা করছে। এসব হিন্দুদের দেখলে খুব কষ্ট হয়। তাই আমার বিনম্র নিবেদন, আসুন, আমরা সকলে পবিত্র বেদ, উপনিষদ ও গীতার মর্মবাণী হৃদয়ে ধারণ করি এবং আলোকিত শুদ্ধাচারী মানুষ হই। যারা ধর্মের নামে ভণ্ডামি করেন, ঈশ্বরকে যারা বিক্রয় করেন,সেসকল পাষণ্ড ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের সমূলে বিনাশ করি। পবিত্র, শাস্ত্রজ্ঞানী ওপণ্ডিত ব্যক্তিকে গুরু করি, কিন্তু কখনোই ভেড়ার পালের মত মূর্খ গুরুর পিছনে দৌড়াদৌড়ি করা নয়। ধর্ম মাথা উঁচু করে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে শেখায়, কখনোই দাস হতে শেখায় না।"
    ..…......

    হাজার হাজার শুদ্র-ব্রাহ্মণ এক হইলো এই সংগঠনের ছোঁয়ায়। কিন্তু এখনো পথ অনেক বাকি। হাজার মানুষকে নয় — বাংলাদেশের সকল সনাতনীকে এক হইতে হইবে। 

    তাই, 

    সুভাষ শাস্ত্রী ডাক দিয়াছেন — আসুন এক হই। বৈদিক আর্য সমাজ আপনাদের দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আপনি প্রস্তুত তো?