• সর্বশেষঃ

    পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্বোধন "নমস্তে" (নমস্কার)।

    বর্তমানে নতুন নতুন সম্প্রদায় এবং তাদের গুরুরূপী কুলাঙ্গারের উদ্ভব হচ্ছে। তারা ইচ্ছেমতো শিষ্যদের যাচ্ছেতাই শিখিয়ে দিচ্ছে। আর শিষ্যরা তা ভক্তিভরে গুরুপ্রসাদ হিসেবে ভক্ষণ করছে। সমাজে তৈরী হচ্ছে বিভক্তি। এক এক গুরুর শিষ্য এক এক নিয়ম পালন করতে গিয়ে সমাজিক ঐক্য ছিন্নভিন্ন হচ্ছে। সবকিছুর পেছনে দায়ী এসব স্বার্থবাদী গুরু এবং তাদের মূর্খ ভক্তরা। বেদ থেকে দূরে সরার ও সরানোর যতরকম উপকরণ লাগে তার সবই আছে এই গুরুবাদী সমাজে।  

    সনাতন সমাজকে এক রাখতে হলে এসব গুরুদের ঝাঁটিয়ে বিদায় করা ভিন্ন আর কোনো রাস্তা নেই। সেই গুরুর নির্দেশই মানতে হবে যে শস্ত্র অনুযায়ী কথা বলে। সঠিক গুরু নির্বাচনও শিষ্যের কর্তব্য। 

    এবার মূল কথায় আসি — 

    বৈদিক রীতিতে কাউকে সম্বোধন করতে হয় "নমস্তে" (নমস্কার) বলে। বেদ বলুন, উপনিষদ বলুন, রামায়ণ - মহাভারত যেখানেই বলুন সবখানে এই নমস্তে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। রামও নমস্তে বলতেন কৃষ্ণও নমস্তে বলতেন। 

    কিন্তু আধুনিক গুরুরা কি করলেন? ভাবলেন —  শিষ্যদের দিয়ে বেদের নির্দেশের পরিবর্তে নিজে একটা বানিয়ে পালন করাতে পারলে কেমন হয়! ঈশ্বরের চেয়ে আমি হয়ে যাবো বেশি গুরুত্বপূর্ণ!  ঈশ্বরের নির্দেশ নমস্তে না বলে আমার শিষ্যরা আমার শেখানো বুলি বলবে! শুরু হলো নানা রকম বুলি তৈরী। কেউ শেখালো — হরে কৃষ্ণ, রাধে রাধে, কেউ শেখালো জয় গুরু, কেউ শেখালো হরি ওম্। এমন আরো যে কত রকম কত গুরু শিখিয়েছে তার শেষ নেই। 

    চলুন বেদ থেকে "নমস্তে" বলে সম্বোধনের কিছু উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেখে নেই। 

    নমস্কার প্রদানের উৎকৃষ্ট
    উদাহরন যজুর্বেদের নিম্নলিখিত মন্ত্রটি-

    নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায়
    চাপরজায চ নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ নমো
    জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।।
    (যজুর্বেদ ১৬/৩২)
    অনুবাদ-
    নমস্তে জ্যেষ্ঠদেরকে, নমস্তে কনিষ্ঠদেরকে, নমস্তে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনী-গরীব, জ্ঞানী, স্বল্পজ্ঞানী সকলকে!

    বেদমাতা বলেছেন যে,

    নম ইদুুগ্রং নম আ বিবাসে নমো দাধায় পৃথিবীমুত দ্যাম্।
    নমো  দেবেভ্যঃ নম ঈশ এষাং কৃতং চিদেনো নমস্য বিবাসে।।
    (ঋগ্বেদ ৬/৫১/৮)
    অনুবাদ-
    নমস্কারই অত্যন্ত তেজস্বী। আমি এই নমস্কারের পূজা করি, আমি এই নমস্কারকে অত্যন্ত মহত্বপূর্ণ মনে করি। নমস্কারই পৃথিবীকে এবং দ্যুলোককে ধারণ করে। দিব্য গুণ প্রাপ্তির জন্য আমি নমস্কার করি। নমস্কারই এই দেবতাদের তথা দিব্যগুণের প্রভু। নমস্কার দ্বারা  কৃত পাপকেও নিজের থেকে দূর করি, বিনষ্ট করি। 

    আরে দেখুন —

    যিনি ভূতকাল, ভবিষ্যৎকালের এবং নিখিল জগতের অধিষ্ঠাতা,সুখ যাঁহার সরুপ সেই সর্ব্বশ্রেষ্ট ব্রহ্মকে নমস্তে।
    (অথর্ব্ববেদ-১০।৮।১)

    ভূমি যাঁহার পদমূল সদৃশ ,অন্তরিক্ষ যাঁহার উদর সদৃশ এবং দ্যূলককে যিনি মস্তক সদৃশ সৃষ্টি করিয়াছেন সেই সর্ব্বশ্রেষ্ট ব্রহ্মকে নমস্তে।
    (অথর্ব্ববেদ-১০।৭।৩২)

    যিনি বার বার নব নব সূর্য ও চন্দ্রকে নেত্র সদৃশ এবং অগ্নিকে মুখ সদৃশ সূষ্টি করিয়াছেন সেই সর্ব্বশ্রেষ্ট ব্রহ্মকে নমস্তে।
    (অথর্ব্ববেদ-১০।৭।৩৩)

    বাযু যাঁহার প্রাণ-আপান সদৃশ, রশ্মিসমূহ যাঁহার দূষ্টিসরূপ এবং দিক সমূহ যাঁহার প্রজ্ঞা সদৃশ সেই সর্ব্বশ্রেষ্ট ব্রহ্মকে নমস্তে।
    (অথর্ব্ববেদ-১০।৭।৩৪)

    কল্যাণ ও সুখের কারণকে নমস্তে ! কল্যাণদাতা ও সুখদাতাকে নমস্তে ! কল্যাণময় ও সুখময়কে নমস্তে। 
    (যজুর্ব্বেদ-১৬।৪১)


    নমস্তে (সংস্কৃত: नमस्ते, উচ্চারিত [nəməst̪eː]) শব্দটি সংস্কৃত থেকে আগত। এর অর্থ "তোমাকে শ্রদ্ধা জানাই"। আর এই নমস্তে বলাই বৈদিক সিদ্ধান্ত। 

    কোন সে পাপিষ্ঠ, এইরূপ বৈদিক আচার বদলে নব নব সম্বোধন তৈরী করে সমাজকে বিভক্ত করছে? 


    ।। নমস্তে।। 
    @বৈদিক আর্য সমাজ