• সর্বশেষঃ

    শুদ্ধি কি শাস্ত্র সম্মত?


    ভিন্নধর্মে চলে যাওয়া হিন্দুদের নিজধর্মে ফিরিয়ে আনতে এবং ভিন্নধর্মের মানুষকে হিন্দুধর্ম গ্রহণের পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করেন এই মহান ঋষি দেবল। তাঁর রচিত ‘দেবলস্মৃতি’তে হিন্দুধর্ম গ্রহণের পূর্ণাঙ্গবিধান দেয়া আছে।ভারতীয় আর্য সমাজ, ভারত সেবাশ্রমসঙ্ঘ, স্বামী নারায়ণ সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্নসময়ে কনভার্ট হওয়া হিন্দুদের নিজধর্মে ফিরিয়ে আনা ও ভিন্নধর্মাবলম্বীর হিন্দুধর্ম গ্রহণের‘শুদ্ধি যজ্ঞ’ নামক আনুষ্ঠানিকতাটি মূলতএই দেবল স্মৃতির অনুসরণ।চতুর্থ/পঞ্চম শতাব্দীরদিকে ঋষি দেবলের ডাকে সমসাময়িক ভারতে ঋষিদের নিয়ে সিন্ধু তীরবর্তী (বর্তমান পাকিস্তান অংশে)এক সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে ঋষি দেবল ও অন্যান্য ঋষিগণ হিন্দুদের রক্ষা ও হিন্দুধর্ম প্রসারের লক্ষ্যে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এই সিদ্ধান্তের ফলাফল হচ্ছে ‘দেবল স্মৃতি’নামক গ্রন্থ।ভারতের দেরাদুন আর্য সমাজেরগ্রন্থাগারে আজও ‘দেবল স্মৃতি’সংরক্ষিত আছে।

    এছাড়াও বেদের সেই বিখ্যাত মন্ত্রও আমাদের নির্দেশ করে যে হিন্দুধর্মগ্রহণ করা যায়-‘হে মনুষ্যগণ তোমরা ঈশ্বরের মহিমাকে বৃদ্ধি কর, সমগ্র বিশ্বকে আর্যধর্মে দীক্ষিত কর’।(ঋগ্বেদ, ৯/৬৩/৫)

    বৈদিক ধর্মে ধর্মান্তরের প্রক্রিয়াটিকে 'শুদ্ধি' বলা হয়।
    “শুদ্ধি” বিধান কেবল প্রাচীনই নয় শাস্ত্রে অনেক বর্ণনাও প্রমাণ করে সনাতন ধর্মে প্রত্যাবর্তন বৈধ।

    পবিত্র বেদ এ শুদ্ধির বার্তাঃ
    ১। হে বিদ্বানগণ! যারা অন্ধকারে পতিত হয়েছে তাদেরকে পুনরায় জাগ্রত করো। যে পাপ করছে অথবা যার জীবন কর্দমাক্ত হয়েছে তাকে নতুন জীবনদান করো অথবা “শুদ্ধ” করো।
    (ঋগ্বেদ ১০।১৩৭।১)


    ২। হে ইন্দ্রিয়গণের শাসনকর্তা পরমাত্মা! শত্রু নিবারনের জন্য আমাদের শক্তি প্রদান কর যা হিংসাবিহীন এবং কল্যানকর। যার দ্বারা তুমি দুষ্টদের শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত কর। যা মনুষত্ব বৃদ্ধির সহায়ক। (ঋগ্বেদ ৬।২২।১০)

    ৩।পরমেশ্বরের নাম নিয়ে এগিয়ে চলো, সমস্ত বিশ্বকে আর্যত্বে(শ্রেষ্ঠত্বে) দীক্ষীত কর।
    (ঋগ্বেদ ৯।৬৩।৫)


    স্মৃতি-সূত্র গ্রন্থে শুদ্ধির বিধানঃ
    ১।দুর্নীতিগ্রস্ত জ্ঞানীর সন্তানদের শুদ্ধ করে যজ্ঞপবীত
    [যজ্ঞের পবিত্রতা, পৈতা ] দেওয়া উচিত।
    -আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র ১।১।১

    ২।প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়ে প্রায়শ্চিত্তকারী নিজের আসল বর্ণ লাভ করতে পারে।
    -আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র ১।১।২

    ৩। উপদ্রব, ব্যাধী, বিপদ ইত্যাদির জন্য যারা বিধর্মী হয়, শান্তির স্থিতি তৈরি হলে প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে তারা পুনরায় শুদ্ধ হতে পারে।
    -পরাশর সংহিতা ৭।৪১

    ৪।ম্লেচ্ছরা বলপূর্বক যাদেরকে দিয়ে গোহত্যা, মাংসভক্ষন ইত্যাদি নীচ কাজ করিয়েছে তারা বর্ণানুসারে কৃত্য ব্রতযজ্ঞের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়ে যাক।
    দেবল স্মৃতি ৯।১১

    ৫। গোহত্যা বা তার সমতূল্য পাপের শুদ্ধি চন্দ্রায়ণ, গোপাল ইত্যাদি ব্রত দ্বারা হয়। -যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি, প্রচ্ছদ ৫

    ইতিহাসে শুদ্ধির বর্ণনাঃ
    ১। শঙ্করাচার্য এবং কুমারিলভট দ্বারা বৌদ্ধদের শুদ্ধি।

    ২।শিবাজীর দ্বারা নেতাজী পালকরের ইসলাম থেকে শুদ্ধির মাধ্যমে আর্য হওয়া।

    ৩। হুণ, কম্ভোজ, শক ইত্যাদি জাতির আর্য হওয়া।

    এছাড়া আরও অনেক উদাহরণ, শাস্ত্রের বর্ণনা পাওয়া যায় যার দ্বারা প্রমাণিত হয় শুদ্ধি একটি শাস্ত্রানুমোদিত প্রক্রিয়া।

    দেবল স্মৃতিতে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসারেই আর্যসমাজ, স্বামীনারায়ণ সংস্থা,ভারতীয় সেবাশ্রম সংঘসহ বিভিন্ন হিন্দুধর্মীয় সংগঠনসমূহ প্রতিবছর হাজার হাজার অহিন্দুকে শুদ্ধিযজ্ঞের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করে।বিশেষত প্রতিবছর আর্যসমাজের শুদ্ধিযজ্ঞে আবেদনপত্রের মাধ্যমে অংশগ্রহনকারী প্রায় ছয় থেকে দশহাজার বিধর্মীগণ বৈদিক ধর্মে প্রত্যাবর্তন করেন।

    সূত্র: Hindu-Muslim Relations in British India: A Study of Controversy, Conflict ... LeidenNetherlands; BY: Gene R. Thursby

    SEE ALSO:

    http://www.aryasamaj.com/enews/2012/jan/4.htm

    http://aryasamajthane.com/conversion.html?fref=gc&dti=216694788431234


    সত্যের জয় হোক।

    ।।নমস্তে।।
    কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্
    @বৈদিক আর্য সমাজ