• সর্বশেষঃ

    মহাবীর হনুমান লেজ বিশিষ্ঠ কোন মর্কট প্রাণী ছিলেন না। (চর্তুথ পর্ব)


    সুগ্রীব, বালী প্রভৃতি মনুষ্য গোত্রীয় বানরজাতির কেমন সমৃদ্ধি, ঐশ্বর্য্য, বিলাসব্যসন এবং অভিজাত রুচির পরিচয় পাওয়া যায়, দেখ-

    বানরেন্দ্র গৃহং রম্যং মহেন্দ্রসদনোপমম্,
    স সপ্তকক্ষ্যা ধর্ম্মাত্মা যানাসনসমাবৃতাঃ।
    দদর্শ সুমহং গুপ্তং দদর্শান্তঃপুরং মহৎ। [কিস্কিন্ধ্যাকাণ্ড, ৩৩, ১৯]

    ধর্ম্মাত্মা লক্ষ্ণণ বানররাজ সুগ্রীবের ইন্দ্র ভবন সদৃশ যান আসন সমাবৃত সপ্ত কক্ষ বিশিষ্ট মনোহর গৃহ এবং সুরক্ষিত অন্তঃপুর দর্শন করেছিলেন। যেখানে ভাল মান লয় ও পদ সংযুক্ত সুমধুর সঙ্গীতও যে হচ্ছিল, লক্ষণ তাও শুনেছিলেন-

    “তন্ত্রীগীত সমাকীণং সমতাল পদাক্ষরম্।”

    অন্তঃপুরের মধ্যে গিয়ে সুগ্রীবকে দেখলেন, স্বর্ণ সিংহাসনে, সুদৃশ্য বহুমূল আন্তরণোপরি সমাসীন-
    শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে শবদাহ, অগ্নিহোত্রানুযায়ী প্রেতকার্য্যের যে বিবরণ পাই, তাতে বেশ বোঝা যায়, তারা মানুষই ছিলেন।

    বালীরাজার মৃতদেহ সৎকারের বর্ণনাটা দেখ-

    বালীর অগ্নিহোত্রানুযায়ী প্রেতকার্য্য
    দিব্যাং ভদ্রাসনযুক্তাং শিবিকাং স্যন্দনোপমম্,
    পক্ষিকর্ম্মভিরাচিত্রাং দ্রুম কর্ম্ম বিভূষিতাম্।। ২১
    আচিতাং চিত্রপত্তীভিঃ সুনিবিষ্টাং সমন্ততঃ।
    বিমানামিব সিদ্ধানাং জাল বাতায়নাযুতাম্। ২৩
    ঈদৃশীং শিবিকাং দৃষ্ট্বা রামোলক্ষ্নণমব্রবীৎ।
    ক্ষিপ্রং বিনীয়তাং বালী প্রেতকার্য্যং বিধীয়তাম্‌।। ২৪ [বাল্মীকি রামায়ন কিস্কিন্ধ্যাকাণ্ড]

    বালীর প্রেতকার্য্যের জন্য যে শিবিকাটি(কাঠের তৈরি যান বা পালকি) আনা হল তার চারিদিকের কাঠে নানাবিধ কারুকার্য্য, পক্ষীচিত্র, জাল, বাতায়ন ও পতাকাশোভিত ছিল, সেটি সিদ্ধদের বিমানের মত সুদৃশ্য ছিল।

    আমরা যেমন শবযাত্রার সময় সাধ্যমত পয়সা ছড়াই বালীরাজার শববাহী শিবিকার আগে আগে তেমনি বানরগণ বহু ধনরত্ন ছড়াতে ছড়াতে যাচ্ছিল-

    বিশ্রানয়ন্তো রত্নানি বিধিধানি বহুান চ
    অগ্রতঃ প্লবগা যাস্তু শিবিকা তদন্তরম্।। 
    [কিস্কিন্ধ্যাকাণ্ড, ২৫, ৩১]

    হিন্দুগণ যেমন মৃতদেহ কোন নদী তীরে নির্জ্জনস্থানে নিয়ে গিয়ে, চিতা প্রস্তুত করে শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী শবদাহ করেন, পরে, দাহ শেষে নদীজলে উদকক্রিয়া বা প্রেতোদ্দেশ্যে তর্পণাদি কার্য্য করেন, বানরগণও তেমনি নির্জ্জন গিরি- নদীতটে চিতা প্রস্তুত করে, মৃতদেহ তাতে স্থাপন করে, অগ্নিসংস্কার করলেন।

    পরে দাহ শেষে নদীতে গিয়ে প্রেতাদ্দেশ্যে তর্পণাদি করলেন- 

    পুলিনে গিরি নদ্যাস্ত বিবিক্তে জল সংবৃতে
    চিতা চক্রুঃ সুবহবো বানরাঃ বনচারিণঃ।
    অপরোপ্য ততঃ স্কন্ধ্যাচ্ছিবিকাং বানরোত্তমাঃ। ৩৮
    ততোহগ্নিং বিবিবৎ দত্ত্বা সোপসব্যং চকার হ। ৫০
    আজগ্মরুদকং কর্ত্তুং নদীং শুভজলাং শিবাম্। ৫১
    [কিস্কিন্ধ্যাকাণ্ড, ২৫ সর্গ]

    এইভাবে, মূল রামায়ণে বর্ণিত, বানর জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, ভাস্কর্য্য সঙ্গীত শিল্পকলা, ঐশ্বর্য্য, আভিজাত্য, পরাক্রম, ধর্ম্মসংস্কার এবং শাস্ত্রাচারের কথা বিচার করে, তাদেরকে লেজ বন্যবানর জন্তু শ্রেণীর, জানোয়ার না ভেবে মানুষ ভাবলে কি দোষ হবে? অবশ্য তাতে তোমাদের “যুগাবতার রামকৃষ্ণের” লেজ বৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা support করা যাবে না, এই যা!!!

    বিচার করে বোঝ, ওরা যদি মানুষ না হয়ে, বন্য বানর শ্রেণীরই হতেন, তাহলে ক্রম বিবর্ত্তনের ধারানুযায়ী (Theory of Evolution), বর্ত্তমানের বানর শ্রেণীর মধ্যেও ঐ সব বলবিক্রম শিক্ষা সংস্কৃতির, বরং আরও উন্নততর পরিচয় পাওয়া যেত, তা পাওয়া যায় কি?
    মহাভারতের আদিপর্বের সপ্তম অধ্যায়ে ৬৬ নং শ্লোকটি লক্ষ্য করুন- 

    রাক্ষসাশ্চ পুলস্তস্য বানরাঃ কিন্নরাস্তথা।
    যক্ষাশ্চ মনুজ ব্যাঘ্র! পুত্রাস্তস্য চ ধীমতঃ।।

    “হে মনুজ ব্যাঘ্র, মহারাজ জন্মেঞ্জয়! রাক্ষস্ বানর, কিন্নর ও যক্ষসকল মহাজ্ঞানী পুলস্ত্য ঋষির পুত্র। পুলস্ত্য ঋষির পুত্র বানর নিশ্চয়ই মনুষ্যাকৃতি; পশ্বাকৃতি মর্কটমুখ বন্য জন্তু নয়, আশা করি, অতি নির্বোধের মাথাতেও এ কথাটা ঢুকবে।