গীতা সমীক্ষাঃ পর্ব৬ঃ গীতা অনুযায়ী ঈশ্বরের মূল নাম কোনটি?
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বারবার বলছেন, আমাকে ভজনা করো, আমার স্মরণ লও ইত্যাদি, ইত্যাদি। গীতায় দুক্ষেত্রে "আমি/আমার" শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমত কৃষ্ণের জীবাত্মা হিসেবে। দ্বিতীয়ত পরম ব্রহ্ম পরমাত্মা হিসেবে। এবিষয়ে পরবর্তী পর্বে স্পষ্ট আলোচনা করা হবে।
এই পর্বে আমরা কথা বলবো পরমাত্মা "আমি'কে" নিয়ে।
ঈশ্বরকে বা পরমাত্মা বা ব্রহ্মকে বহু নামে ডাকা যায়, ঠিক মানুষের নামের মতো। একজন ব্যক্তিকেই – কেউ বলে বাবা, কেউ বলে ভাই, কেউ বলে কাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ঐ ব্যক্তির একটা নির্দিষ্ট নাম থাকে। যেমনঃ রাম, শ্যাম ইত্যাদি। ঈশ্বরকেও তেমন ক্ষেত্র বিশেষ বিভিন্ন নামে ডাকা হলেও তার একটা নির্দিষ্ট নাম আছে। কি সেই নামটি? ঈশ্বরের মূল বা মূখ্য নাম যে "ওম্" তা বেদাদি শাস্ত্র হতে পূর্বেই দেখিয়েছি। (এখানে দেখুন)
বেদাদি শাস্ত্রের মতো গীতার শ্লোকগুলো একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবেন গীতায়ও ঈশ্বরের নাম "ওম্" বলে নির্দেশ করা হচ্ছে।
এখন গীতা কি বলে দেখুনঃ
১। গীতা ৮/১৩
ওমিত্যেকাক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্ মামনুস্মরন্।
যঃ প্রযাতি ত্যাজন্ দেহং স যাতি পরমাং গতিম্।।
অর্থঃ সমস্ত ইন্দ্রিয়দ্বার সংযত করিয়া, মনকে হৃদয়ে নিরুদ্ধ করিয়া, প্রাণকে ভ্রুযুগলের মধ্যে ধারণ করিয়া, আত্মসমাধিরূপ যোগে অবস্থিত হইয়া, ওঁ — এই ব্রহ্মাত্মক একাক্ষর উচ্চারণ পূর্বক আমাকে স্মরণ করিতে করিতে যিনি দেহত্যাগ করিয়া প্রস্থান করেন, তিনি পরমগতি প্রাপ্ত হন।
ওম্ উচ্চারণ পূর্বক আমাকে স্মরণ কর – এর অর্থ অমার মুখ্য নাম "ওম্"।
২। গীতা ৯/১৭
পিতাহমস্য জগতো মাতা ধাতা পিতামহঃ।
বেদ্যং পবিত্রমোঙ্কার ঋক্ সাম যর্জুরেব চ।।
অর্থঃ আমিই এই জগতের পিতা, মাতা, বিধাতা, পিতামহ; যাহা কিছু জ্ঞেয় এবং পবিত্র বস্তু তাহা আমি। আমি ব্রহ্মবাচক ওঙ্কার, আমিই ঋক্, সাম ও যজুর্বেদ স্বরূপ।
আমি ব্রহ্মবাচক ওঙ্কার এর অর্থ – ব্রহ্মের বা ঈশ্বরের মুখ্য নাম "ওম্"।
৩। গীতা ১৭/২৪
তস্মাদোমিত্যুদাহৃত্য যজ্ঞদানতপঃক্রিয়াঃ।
প্রবর্তন্তে বিধানোক্তোঃ সততং ব্রহ্মবাদিনাম্।।
অর্থঃ এই হেতু ব্রহ্মবাদিগণের যজ্ঞ, দান ও তপস্যাদি শাস্ত্রোক্ত কর্ম সর্বদা "ওঁ" উচ্চারণ করিয়া অনুষ্ঠিত হয়।
কারণ, "ওম্" ঈশ্বরের মুখ্য নাম।
৪। গীতা ৭/৮
প্রণবঃ সর্ববেদেষু
অর্থঃ সর্ববেদে আমি ওঙ্কার
আমি কে? আমি ওঙ্কার।এখানে খুব স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে ঈশ্বরের মুখ্য নাম "ওম্"
৫। গীতা ৮/১১
যদক্ষরং বেদবিদো বদন্তি ..... তৎ... পদং
অর্থঃ বেদবিদগণ যাহাকে অক্ষর(ওঁ) বলেন... তিনিই পরম পদ।
অর্থাৎ, পরমপদ ঈশ্বরের মুখ্য নাম "ওম্"।
যোগদর্শনের শ্রেষ্ঠ আচার্য পতঞ্জলি যোগসূত্রে সমাধিপাদে(১ম, ২৭-২৮) বলেছেন,
“তস্য বাচকঃ প্রণবঃ। তজ্জপস্তুদর্থভাবনম্।”
অর্থাৎ, ঈশ্বর বাচক নাম হচ্ছে প্রণব (ওম্)। তাঁর জপ ও চিন্তা করনীয়।
আশাকরি সকলকে ঈশ্বরের মূল নাম কি তা গীতা থেকে বোঝাতে পেরেছি। আসুন সকলে গীতা (৮/১৩) – এর কথা মতো ঈশ্বরের নাম "ওম্" নিয়মিত জপ করি।
।।নমস্তে।।
@বৈদিক আর্য সমাজ।