• সর্বশেষঃ

    অন্ধের হাতি দর্শনঃ সনাতন ধর্মে কেনো এত মতভেদ?


    আর্য সমাজ থেকে উপনয়ন নিয়েছি কয়েকমাস হলো। পড়ালেখার দরুন শহরে থাকি। কয়েক মাস পর পর কোনো ছুটি মিললে বাড়িতে আসা হয়। আমাদের এলাকায় একটা বড় সান-বাধানো পুকুর আছে। ওখানে গ্রামের সবাই স্নান করে। যথারীতি আমিও পুকুরে স্নান করতে গেলাম। আমার পৈতা ধারণ দেখে সবাই অবাক — ঘটনা কি! ধর্ম বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেলো। আর্য সমাজ থেকে উপনয়ন নিলে কি কি পালান করতে হয়, কিভাবে করতে হয় এসবের উত্তর দিতে লাগলাম। আমার কথা শুনতে শুনতে একজন বললেন — গীতার দিকেনা, বেদের দিকে! আমি মনে মনে বলতে লাগলাম গীতার দিক আর বেদের দিক বুঝি আলাদা! যা হোক, অনেক অলোচনার পর আমার এক জ্যাঠা হতাশা ব্যাক্ত করলেন এই বলে — "আমরা যে সনাতন ধর্মের লোক, আমাদের কি নির্দিষ্ট কোনো পন্থা নেই? এক এক ব্যক্তি এক এক পন্থা অবলম্বন করে সমাজটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো। এতো রকম মতবাদ তৈরী হওয়ার কারণ কি?" 

    সবাইকে থামিয়ে এবার আমি "অন্ধের হাতি দেখা" গল্পটি বলতে শুরু করলামঃ 

    এক গ্রামে ৬ জন অন্ধ লোক বাস করতো। একদিন তাদের সখ হলো হাতি নামক প্রাণীটা কেমন তা তারা জানতে চায়। তাদের অনুরোধে একটা হাতি আনা হলো তাদের সামনে। তার পর ৬ জন এগিয়ে গেলেন হাতি কেমন তা স্পর্শ করে দেখতে। একজন ধরলেন লেজ, একজন ধরলেন পা, একজন ধরলেন পেট, একজন ধরলেন কান, একজন ধরলেন দাঁত আর একজন ধরলেন শুঁড়। 

    যিনি লেজ ধরলেন তিনি দাবি করলেন হাতি চাবুকের মতো।

    যিনি পা ধরলেন তিনি দাবি করলেন হাতি খুঁটির মতো।

    যিনি পেট ধরলেন তিনি দাবি করলেন হাতি দেয়ালের মতো।

    যিনি কান ধরলেন তিনি দাবি করলেন হাতি কুলার মতো।

    যিনি দাঁত ধরলেন তিনি দাবি করলেন হাতি মস্ত বড় পেরেকের মতো।

    আর যিনি শুঁড় ধরলেন তিনি দাবি করলেন হাতি মোটা সাপের মতো। 

    যদি এ সকল ব্যক্তি আস্তে আস্তে হাতির সারা শরীর স্পর্শ করতো তবে বুঝতে পারতো হাতি আসলে কেমন প্রাণী। কিন্তু তারা তা না করে – যে যেই অংশ স্পর্শ করেছে সে হাতিকে সেই অংশের মতো দাবি করতে থাকলো। এতে করে হাতি আসলে কেমন তা তাদের কেউই জানতেই পারলো না। 


    আমাদের অধিকাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বীর ধর্ম দর্শন ঐ হাতি দর্শনের মতো। আমরা বেদ উপনিষদ গীতা এগুলো পড়ে না দেখেই বাপ-ঠাকুরদার মুখে আর গুরু-গোসাইয়ের  মুখে দু চার কথা শুনেই ধর্মের একটা কল্পিত রূপ মনের ভেতর এঁকে নেই।  তাই আমাদের একজনের মতের সাথে আরেকজনের মতের এতো অমিল। 

    তাই আসুন, প্রকৃত সত্য জানতে ধর্মপুস্তক গুলো একটু পড়ে দেখি। পড়লেই জানতে পারবেন — বেদ উপনিষদ গীতার নির্দেশিত পথে কোনো ভিন্নতা নেই।

    ।।নমস্তে।।
    @বৈদিক অর্য সমাজ