• সর্বশেষঃ

    মূর্তিপূজা সম্পর্কে মেরি হেলকে লেখা বিবেকানন্দের সেই গোপন চিঠি।


    ৯ জুলাই, ১৮৯৭।
    স্বামিজীর মৃত্যুর মাত্র ৫ বছর আগের কথা। 
    আলমোড়া নামক স্থান থেকে স্বামী বিবেকানন্দ মিস মেরী হেলকে একটি চিঠি লিখছেন। 

    সেই চিঠিতে তিনি বলছেন, 
    আমি বুঝতে পারছি — আমার কাজ শেষ হয়েছে। জোর তিন চার বছর জীবন অবশিষ্ট আছে।

    তিনি আবার বলছেন, 
    আমার সময় অল্প। এখন আমার যা কিছু বলবার আছে, কিছু না চেপে বলে যেতে হবে;ওতে কারও হৃদয়ে আঘাত লাগবে বা কেউ বিরক্ত হবে—এ বিষয়ে লক্ষ্য করলে চলবে না।
    কি সেই চেপে রাখা কথা? যা তিনি মৃত্যুর আগে বলে যেতে চেয়েছিলেন ? যা কারও হৃদয়ে আঘাত করতে পারে?

    চেপে রাখা সেই কথা গুলো জানানোর আগে পত্রের আরো কিছু কথা জানিয়ে রাখি । স্বামীজি মেরীকে আশ্বস্ত করছেন এই বলে — 
    অতএব প্রিয় মেরী, আমার মুখ থেকে যাই বের হোক না কেন, কিছুতেই ভয় পেও না। কারণ যে শক্তি আমার পশ্চাতে থেকে কাজ করছে, তা বিবেকানন্দ নয় — তা স্বয়ং প্রভু; কিসে ভাল হয়, তিনিই বেশী বোঝেন। যদি আমায়—জগৎকে সন্তুষ্ট করতে হয়, তাহলে তাতে জগতের অনিষ্টই হবে।
    অর্থাৎ, কথাগুলো শুনে সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্ট হবে, কিন্তু কথা গুলো না বলে চাপা রাখলেই বরং তাদের অনিষ্ট হবে।

    তিনি আরে বলছেন — 
    অধিকাংশ লোক যা বলে তা ভুল, কারণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে, জগৎ শাসন করছে তারাই, অথচ জগতের অবস্থা অতি শোচনীয়। যে-কোন নূতন ভাব প্রচারিত হবে, তারই বিরুদ্ধে লোকে লাগবে;
    এ কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে — তিনি সংখ্যাগুরু হিন্দুদের মতামতের বিরুদ্ধে কিছু বলেছিলেন। 

    এই বক্তব্যের ফলে তার বিরুদ্ধে যে নিন্দা রটনা করা হবে তাও তিনি জানতেন — 
    সভ্য যাঁরা, তাঁরা শিষ্টাচারের সীমা লঙ্ঘন না করে উপহাসের হাসি হাসবেন; আর যারা সভ্য নয়, তারা শিষ্টাচার-বিরুদ্ধ চীৎকার করবে ও কুৎসিত নিন্দা রটাবে।
    এতসব কিছু বলার পূর্বে স্বামীজী কি এমন কথা বলেছিলেন? 

    তাহলে দেখে নিন — স্বামীজি সেদিন লিখেছিলেনঃ

    ‘যিনি তোমার অন্তরে ও বাহিরে, যিনি সব হাত দিয়ে কাজ করেন ও সব পায়ে চলেন, তুমি যাঁর একাঙ্গ, তাঁরই উপাসনা কর এবং অন্য সব প্রতিমা ভেঙে ফেল।'
     ‘যিনি উচ্চ ও নীচ, সাধু ও পাপী, দেব ও কীট সর্বরূপী, সেই প্রত্যক্ষ জ্ঞেয় সত্য ও সর্বব্যাপীর উপাসনা কর এবং অন্য সব প্রতিমা ভেঙে ফেল।'
    ‘যাতে পূর্বজন্ম নাই, পরজন্ম নাই, বিনাশ নাই, গমনাগমন নাই, যাতে অবস্থিত থেকে আমরা সর্বদা অখণ্ডত্ব লাভ করছি এবং ভবিষ্যতেও করব, তাঁরই উপাসনা কর এবং অন্য সব প্রতিমা ভেঙে ফেল।'
     ‘হে মূর্খগণ, যে-সকল জীবন্ত নারায়ণে ও তাঁর অনন্ত প্রতিবিম্বে জগৎ পরিব্যাপ্ত, তাঁকে ছেড়ে তোমরা কাল্পনিক ছায়ার পেছনে ছুটেছ! তাঁর—সেই প্রত্যক্ষ-দেবতারই—উপাসনা কর এবং আর সব প্রতিমা ভেঙে ফেল।’

    হে প্রিয় সনাতনী ভাই-বোনেরা, আপনারা জানেন স্বামী বিবেকানন্দ একসময় মুসলিম রাজার সামনে মূর্তীপূজার পক্ষে নানান যুক্তি দিয়েছিলেন। যে যুক্তিগুলো মূর্তিপূজার পক্ষে খুব বেশি বেশি প্রচার করা হয়। কিন্তু হায়! বিবেকানন্দ শেষ জীবনে উপলব্ধি করেছিলেন মূর্তীপূজার অসরতা। কিন্তু মূর্তীপূজা সম্পর্কে তার সেই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কেনো প্রচারের আলো পায়না, জানতে পারি? 

    বিবেকানন্দের সেই গোপন চিঠি আজ প্রচার করে দিলাম ঈশ্বরের ভরসায়। 

    সূত্রঃ স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, সপ্তম খণ্ড,পত্র নং ৩৪১, মিস মেরী হেলকে লিখিত, আলমোড়া, ৯ জুলাই, ১৮৯৭।

    তথ্য প্রমাণঃ



    ।।নমস্তে।।
    @ বৈদিক অর্য সমাজ