• সর্বশেষঃ

    আমাদের ধর্মের নাম কি?

    উঃ ধর্মের নাম "ধর্ম"ই। এখানে আমাদের বা তোমাদের এমন প্রশ্ন নিরর্থক। কারণ ধর্ম একটিই। 

    সূর্য একটিই। তাই, সূর্যের নাম কি? - এমন প্রশ্ন নিরর্থক। ঠিক তেমনি আমাদের ধর্ম কি?- এমন প্রশ্নও নিরর্থক।

    বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় উপগ্রহের নাম কি? - এমন প্রশ্ন সঠিক। কারণ বৃহস্পতির একাধিক উপগ্রহ আছে। কিন্তু, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপগ্রহ কোনটি এমন প্রশ্ন নিরর্থক। কারণ পৃথিবীর উপগ্রহ একটিই। তাই ছোট বা বড়র প্রশ্ন আসেনা।


    সম্পূরক প্রশ্ন ১ঃ তাহলে আমাদের ধর্মকে বিভিন্ন শাস্ত্রে যে "সনাতন ধর্ম" বলা হয়েছে এটা কি ভূল?

    উঃ সনাতন শব্দটি একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য বাচক শব্দ। অর্থাৎ, বিশেষণ (Adjective)।  এটা কোনো নাম বাচক শব্দ নয়। অর্থৎ, বিশেষ্য (Noun) নয়। তাই "ধর্ম" শব্দটির পূর্বে "সনাতন" শব্দটি নাম হিসেবে ব্যবহার হয়নি। বৈশিষ্ট্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
    সনাতন অর্থ - যা আগে ছিলো, এখন আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই "সনাতন ধর্ম" বলতে বোঝায় "ধর্ম" অনাদি কালে উৎপন্ন হয়েছে, বর্তমানে বিদ্যমান আছে এবং অনন্তকাল ধরে বিদ্যমান থাকবে। কোনো ক্রমেই "সনাতন" শব্দ দ্বারা ধর্মের নাম বোঝায় না।


    সম্পূরক প্রশ্ন ২ঃ সনাতন যদি ধর্মের নাম না হতে পারে - ইহুদী, ইসলাম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এসব কিভাবে ধর্মের নাম হয়?

    উঃ ইহুদি কোনো ধর্মের নাম নয়, জাতির নাম। খ্রিস্টানও কোনো ধর্মের নাম নয়। যিশু এমন কোনো নাম দিয়ে যায়নি। খ্রিস্টান অর্থ "খ্রিস্ট" তথা ঈশ্বরের অনুসারী। বৌদ্ধ ধর্মের নাম নয়, একজন ধর্ম প্রচারকের পদবী। এগুলো সব এক একটি সম্প্রদায়। এগুলো কিছু মানুষের ভেতর সীমাবদ্ধ। তাই এগুলো কোনো ক্রমেই ধর্ম নয়। ধর্ম সকল কালের সকল বস্তুর জন্য প্রযোজ্য এমনকি জড় বস্তুর ক্ষেত্রেও। ধর্মের কোনো লিমিট দেওয়া সম্ভব নয়। ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত গ্রন্থগুলোর ভেতর একমাত্র কোরাণে ধর্মের নাম ইিসেবে "ইসলাম"- এর নাম উল্লেখ আছে। " আল্লার একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম" "আমার ধর্ম আমার, তেমার ধর্ম তোমার" - এমন উক্তি কোরাণের। যা সংকীর্ণ ধর্মবোধের উদাহরণ। এই উক্তি মাধ্যমে - "মানুষ যে সম্প্রদায়েরই হোক না কেনো সকলে এক ধর্মেরই অনুসারী" এই বোধকে পিষে মারা হয়েছে। যা হানাহানি ও পরষ্পর হিংসা সৃষ্টির মস্ত উপকরণ।


    সম্পূরক প্রশ্ন ৩ঃ জড় বস্তুর আবার ধর্ম কি? যার প্রাণ নেই সে কিভাবে ধর্ম পালন করবে?

    উঃ ধর্ম পালনের বিষয় নয়। পালনের বিষয় হলো - আচার আচরণ। ধর্ম অনুসরণ করে এই আচার আচরণ পালনীয়। স্বর্ণের বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বলতা, এবং রং সোনালী, নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক আছে।  এগুলোর কোনো একটি ধর্ম পাল্টে গেলে সোনা আর প্রকৃত সোনা  থাকেনা, নিশ্চই সোনায় খাদ মেশানো হয়েছে এরূপ সিদ্ধান্ত করা যায়। মানুষও তেমনি- যথাযথ আচার আচরণের দ্বারা প্রমাণ হয় মনুষ মনুষই আছে।  অর্থাৎ, তার ধর্ম ঠিক আছে।


    সম্পুরক প্রশ্ন ৪ঃ জড় বস্তুর এসব বৈশিষ্ট্যকে কি ধর্ম বলে সম্বোধন করা সঠিক?

    উঃ শাস্ত্র বলছে ধর্ম অনাদি।  তাই জীব উৎপত্তির আগেও ধর্ম ছিলো। ধর্ম তাই জীব বা জড়ের জন্য সীমাবদ্ধ নয়।


    সম্পূরক প্রশ্ন ৫ঃ "হিন্দু" শব্দটি কি "ইহুদি" শব্দটির মতো কোনো জাতিকে বোঝায়?

    উঃ সংস্কৃত সিন্ধু শব্দ বিকৃত হয়ে পার্সিতে হিন্দু শব্দটি গঠন হয়েছে। পার্সীরা হিন্দু বলতে সিন্ধু নদীর তীরবর্তী সভ্যতার লোকদের বুঝতো। পার্সী সমাজের একটি অত্যন্ত প্রাচীন গ্রন্থে( ২৪০০ বছরের পুরানো) পার্সিতে লেখাঃ
    " অক্নুম বিরহমনে ব্যাস নাম আজ হিন্দ আমদ বস দানা কি কাল চুনা নস্ত । "
    অর্থাৎ, হিন্দ থেকে আসা ব্যাস নামক এক ব্রাহ্মনের সমকক্ষ বুদ্ধিমান কেউ ছিল না।
    এ থেকে প্রমাণ হয় পার্সি ভাষায় "হিন্দ" ছিলো দেশের নাম আর সেখানে বসবাসরত সবাইকে বলা হতো "হিন্দু"। কোনো নির্দিষ্ট জাতিকে হিন্দু বলা হতো না, হিন্দে বসবাসরত সবাইকে হিন্দু বলা হতো।

    আশা করি ধর্ম কাকে বলে, মতবাদ কাকে বলে এবং ধর্ম এবং মতবাদের পার্থক্য আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।
    ।।নমস্তে।।