• সর্বশেষঃ

    বেদ নিয়ে অপপ্রচারের জবাব - পর্ব ১। বেদে আদিত্য,বরুণ, চন্দ্রের "অপ"/ "সমুদ্র" গমন এবং উদয় বিষয়ক ভ্রান্তি নিবারণ।

    বেদ বিষয়ে মিশনারী গং কিংবা মোল্লা গং কাহারো ই অভিযোগের কোনো অন্ত নেই। সেই সকল অভিযোগের অন্যতম হল এই, " বেদ আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় "। আমরা এই সিরিজে এটা প্রমাণ করে ছাড়ব যে, যাহারা বলে বেদ আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় ; হয় তাহারা বেদ বোঝে না, নাহয় বিজ্ঞান বিষয়ে অজ্ঞ।

    শঙ্কা 01:  Rig Veda 7.55.7, Atharva Veda 4.5.1 The Bull [Vushab/Sun] who hath a thousand horns, who rises up from out the sea…

    সমাধানঃ প্রকৃতপক্ষে দুটি এক ই মন্ত্র। আর মন্ত্রে আপত্তিকর শব্দটি হচ্ছে "সমুদ্র"। আর এসব পন্ডিতের আক্ষেপ হচ্ছে সূর্য সমুদ্রের মধ্য থেকে উদিত হয়। বৈদিক শব্দ কোষ নিঘন্টু নিরুক্ত জ্ঞানের অভাব হলে যা দশা হয় তাই হয়েছে এদের। নিঘন্টু ১।৩ অনুসারে অন্তরীক্ষের ১৬ নামের মধ্যে সমুদ্র একটি -
    নিরুক্ত ২।১০ অনুসারে -
    "সমুদ্রঃ কন্মাৎসমুদদ্রবন্ত্যস­্মাদাপঃ, সমভিদ্রবন্তেনমাপঃ, সম্মোদন্তেহস্মিন্ ভূতানি, সমুদকো ভবতি, সমুনত্তীতি বা"
    অর্থাৎ অন্তরীক্ষ এই নামের মধ্যে যে, সমুদ্র নাম এসেছে তা পৃথিবীর সমুদ্রের সাথে সংশয় যুক্ত। সমুদ্র কি? এই জন্য যে, জল এতে উড়ে চলে (বাষ্প হয়ে) অথবা নদীর জল এতে প্রবাহিত হয় অথবা ইহাতে জীব প্রসন্ন হয়।
    সুতরাং, সমুদ্র অর্থ স্পষ্টতই অন্তরীক্ষ যাহা বেদাঙ্গ ও সমর্থন করে।
     ঋগ্বেদ ৭।৫৫।৭ মন্ত্রের মূল অর্থ নিম্নরূপ-

    "হে মনুষ্য! যে সহস্র কিরণযুক্ত বৃষ্টির কারণ সূর্য অন্তরিক্ষে যেমন উদিত হয়, ওইরূপ তাহার সাথে বলবর্ধক গৃহে আমরা মনুষ্য কে নিরন্তর নিদ্রিত করি।"
    (ভাষ্যানুবাদঃ দয়ানন্দ সরস্বতী)


    শঙ্কা 02:  Kausitaki Brahmana 18.9 Him who yonder gives heat they seek by these pressings to obtain; the rising by the morning pressing, (the sun) in the middle (of his course) by the midday pressing, (the sun) as he sets by the third pressing. He, having entered the waters, becomes Varuna.

    সমাধানঃ এখানে মূল শব্দটি অপঃ যার অর্থ জল ভাবার কারণে এ ভ্রান্তির উদয় হয়েছে।
     অর্থাৎ মন্ত্রে বরুণ কে "অপঃ" হতে উদিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।  নিঘন্টু ১।৩ অনুসারে "আপঃ ইতি অন্তরিক্ষনামানি" অর্থাৎ অপ হচ্ছে অন্তরিক্ষের নাম -
    আর বরুণ শব্দটি বেদে অনেক ক্ষেত্রে ই সূর্যের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
    উদাহরণঃ ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের চব্বিশতম সূক্তের সপ্তম মন্ত্রে বরুণ বৃষ্টিদানকারী আদিত্য হিসেবে কল্পিত -
     অষ্টম মন্ত্রে বরুণ সূর্যের গতিপথ নির্মাণকারী ও সূর্যের অধিষ্ঠাতা-
    দশম মন্ত্রে বরুণ তারকারাজির শাসক হিসেবে কল্পিত। তার দ্বারা ই চন্দ্র নিজ গতিপথে গমন করে ও রাত্রে আলো প্রদান করে-
    একাদশ মন্ত্রে বরুণের কাছে জ্যোতি কামনা করা হচ্ছে-
    এছাড়া ও দেখুন,
    "বরুণ আদিতৈ"
    ( শতপথ ৩।৪।২।১)

    শঙ্কা 03: Aitareya Brahma Book 4, Chapter 20, verse 13 …This (Aditya, the sun) is ‘the swan sitting in light’…he is ‘born from the waters’ (abja), for in the morning he comes out of the waters, and in the evening he enters the waters.

    সমাধানঃ প্রদত্ত রেফারেন্সে ও মূল শব্দ টি অপ্।অপ্ শব্দের নিঘণ্টুকৃত অর্থ পূর্বে ই প্রদত্ত। নিঘণ্টুকৃত অর্থের সাপেক্ষে সঙ্গতিপূর্ণ।
    ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের একশত আটানব্বই নম্বর সূক্ত যেটি মূলত দেবপী শান্তনুর উপাখ্যান ( রূপক অর্থে বৃষ্টিপ্রদানের কামনা), সেখানকার ষষ্ঠ মন্ত্রে উর্ধ্বাকাশে বাষ্পের অবস্থান ও বৃষ্টি হিসেবে ভূপৃষ্ঠে পতন উল্লিখিত আছে।
    কিন্তু বাষ্পমণ্ডলেই সূর্য পতিত হয় না। এ প্রসঙ্গে আরো সুন্দর ব্যাখ্যা করা হয়েছে দ্বাদশ মন্ত্রে।
     এখানে অসীম সমুদ্র জীবন সমুদ্র এবং সেখান থেকে স্বর্গীয় কল্যাণরূপ অপ্ এই পৃথিবীতে মানবকল্যাণে আনয়ন করতে বলা হচ্ছে। প্রকৃত ই সূর্য স্বর্গীয় সত্তার আশীর্বাদ রূপ অপ্ দ্বারা ই গঠিত।
    এ ব্যাপারে তারকারাজির গঠন বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ব্যাপারে আলোকপাত করা যেতে পারে। 
    মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে যে মৌলসমূহ গঠিত হয়েছিল ( বেশিরভাগ হাইড্রোজেন ও সামান্য হিলিয়াম) কমবেশি সেই এক ই মৌলসমূহ নীহারিকা অঞ্চলে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ঘনীভূত হতে হতে প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে নক্ষত্রের সৃষ্টি করে।
    মহাবিশ্বের শুরু তে সৃষ্ট মৌল সম্পর্কে মনুস্মৃতি তে বলা আছেঃ
    সেই পরমাত্মা অপঃ তথা জল হোক বলিয়া আকাশমণ্ডল সৃষ্টি করিলেন ও তাহাতে আপন শক্তিরূপ বীজ অর্পণ করিলেন।
    (মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায় অষ্টম শ্লোক)
    পরমাত্মার তেজরূপ এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রথম উপাদান থেকে ই নক্ষত্রের উৎপত্তি হলে বৈজ্ঞানিক ভুলের কি আছে তাহা আমাদের বোধগম্য না।


    শঙ্কা 04:Atharva Veda 18.4.89 tells us that, "The moon sets in the ocean"

    সমাধানঃ মন্ত্রটিতে "অপ্সু অন্তঃ" শব্দটি এসেছে।এর অর্থ হলো জল ক্ষেত্রের অন্ত। অন্তরীক্ষকে জল ক্ষেত্রের অন্তঃ বলা হয়েছে। বর্তমান বিজ্ঞান অনুসারে পৃথিবীর বায়ু মন্ডলের সীমা পর্যন্ত জলবায়ু রয়েছে। সেই কারনে আকাশ নীল দেখায়। বায়ুমন্ডলের বাহিরে গেলে আকাশ নীল দেখা যায় না। পৃথিবীর প্রভাব তার বায়ু মন্ডল পর্যন্ত। তাহার পর অন্তরীক্ষ আরম্ভ হয়েছে। এই জন্য অন্তরীক্ষকে অপ্সু অন্তঃ অর্থাৎ পৃথিবীর জলময় বায়ুমণ্ডলের শেষ বলা হয়েছে। আর এই চন্দ্রমা অন্তরীক্ষের মধ্যে তথা সূর্য  তার উপর দ্যুলোকে-
    মন্ত্রটির সরলার্থ নিম্নরূপ -
    অন্তরীক্ষ মধ্যে চন্দ্রমা তথা দ্যুলোক মধ্যে সূর্য ধাবমান হয়।  (হে বিজ্ঞপুরুষ) তোমার তীক্ষ্ণ ধারাল  বিদ্যুৎ কে জানার যোগ্য নয়। হে দ্যুলোক এবং ভূলোক! আপনি আমার ভাব কে বুঝুন ( আমাকে সেই ভাবের সামর্থ্য প্রদান করুন)
      (অনুবাদঃ শ্রীরাম শর্মা)
    শঙ্কা 05: Atharva Veda 7.81.1 Forward and backward by their wondrous power move these two youths (Sun and Moon), disporting, round the ocean.

    সমাধানঃ মন্ত্রে "অর্ণব" শব্দটি এসেছে, যার অর্থ সমুদ্র করে এই পন্ডিত চন্দ্র সূর্য কে সমুদ্র বিচরণ করিয়েছেন। বৈদিক কোষে " অর্ণব" শব্দের আরেক অর্থ হচ্ছে অন্তরিক্ষ অর্থাৎ যেখানে জল থাকে।









    পন্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার অর্ণবের ব্যাখ্যা করে বলেছেন - অর্ণাসি উদকানি অস্মিন সন্তি ইতি অর্ণবঃ,অন্তরিক্ষম্।  মন্ত্রের  সরলার্থ নিম্নরূপ -
    "এই সূর্য এবং চন্দ্র পূর্বাপর প্রভূর মায়া (নির্মানশক্তি) দ্বারা প্রেরিত হয়ে দ্যুলোকে গতিবান হয়। তারা দুটি শিশুর ন্যায় বিচরণ করে অন্তরিক্ষে বিচরণ করে।  তাদের মধ্যে এক আদিত্য সমস্ত লোক কে প্রকাশময় করে এবং অন্য চন্দ্রমা বসন্তাদি ঋতু কে নব নব উৎপন্ন করে (চন্দ্রমার কলার হ্রাস ও বৃদ্ধির কারণে নব উৎপন্ন হয়) 
    (ভাষ্যার্থঃ হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার)